রাজনীতি এখন রাজনীতিবিদদের হাতে নেই: তোফায়েল

প্রকাশিত: ৯:৪৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯

শ্যামলী নিউজ ডেস্ক : আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, কিংবদন্তিতুল্য রাজনীতিবিদ ছিলেন অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ। তিনি বঙ্গবন্ধুর বন্ধু ছিলেন। বঙ্গবন্ধু যেমন সততার সাথে কোন আপোস করেননি, তেমনিভাবে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদও আপোস করেননি। তাঁর মতো সৎ রাজনীতিবিদ পাওয়া খুব কঠিন। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতি এখন রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। সত্যিকারের রাজনীতিবিদ এখন কমই পাওয়া যায়। জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, রাজনীতিকে রাজনীতিবিদদের জন্য কঠিন করে দেব। যুগে যুগে এভাবেই স্বৈরশাসকেরা রাজনীতিকে কুলষিত করেছে।

শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের শোক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্টির কার্যকরী সভাপতি আমিনা আহমদ। বক্তব্য রাখেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের নেতা আবদুল মতিন খসরু, জাতীয় পার্টি জেপি সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, শরীফ নূরুল আম্বিয়া, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সাম্যবাদী দলেরর সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. সাহাদাত হোসেন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের কন্যা আইভি আহমদ প্রমুখ।

বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমদ আরো বলেন, কিংবদন্তিতুল্য এই রাজনীতিবিদের স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ। তিনি রাজনীতি করেছেন আদর্শের জন্য। ২০১৫ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেছিলেন কোন কিছু পাওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। এখন ছাত্রদের নামেও টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির কথা শোনা যায়। আমরা যখন ছাত্র রাজনীতি করেছি এসব ভাবতেও পারিনি। আমরা একটি আদর্শের জন্য রাজনীতি করেছি। তিনি আরো বলেন, এখানে অনেকে জাতীয়ভাবে তার প্রতি সম্মান জানানোর বিষয়ে কথা বলেছেন, বিষয়টি আমরা সংসদে তুলতে পারি। অধ্যাপক মুজাফ্ফর আহমদ জাতীয়ভাবে সমাহিত না হলেও তিনি জাতীয় নেতা। এ জাতির মহান নেতা। এছাড়া যিনি সম্মানিত লোক তিনি সব সময়ই সম্মানিত। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। 

জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, এমন দুর্নীতিগ্রস্ত গণতন্ত্রের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ এমন দুর্নীতিগ্রস্ত গণতন্ত্র চাননি। তিনি চেয়েছেন ধর্ম-কর্ম সাম্যের রাজনীতি।

রাশেদ খান মেনন বলেন, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ বলেছিলেন, রাজনীতি পেট নীতি নয়। রাজনীতিকে টাউট-বাটপারদের হাত থেকে রক্ষা করতে না পারলে রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতে থাকবে না। আজ আমরা কী দেখছি? রাজনীতি এখন লুটতরাজদের দখলে। অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ ধন বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাজনীতি করেছেন। কিন্তু ধন বৈষম্য এখন যে পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে তার ফলাফল কী হবে জানি না। উন্নয়ন কখন মুখ থুবড়ে পড়বে তা-ও জানি না।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ইতিহাসের নেতা সবাই হতে পারে না। অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ শুধু জাতীয় নেতা নয়, তিনি ইতিহাসের নেতা। তাদের আমলে রাজনীতিবিদরা রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতো। এখন রাষ্ট্রযন্ত্র রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এটা ফ্যাসিবাদী রাজনীতির লক্ষণ।

হাসানুল হক ইনু বলেন, ইতিহাসের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁকগুলোতে তিনি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করতেন না। অন্য কেউ সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে তাঁর প্রতিও সমর্থন দিতেন। পচাত্তরের পরও প্রতিবাদ করতে দ্বিাধা করেননি। তিনি ক্ষণে ক্ষণে মত বদলাতেন না। আজ রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ইঁদুরেরা মানচিত্রটাকে পোকায় কাটা মানচিত্রে পরিণত করার চক্রান্ত করছেন।

আবদুল মতিন খসরু বলেন, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ গড্ডালিকা প্রবাহের রাজনীতিবিদ ছিলেন না। ইতিহাসের প্রতিটি ক্রান্তিকালে তিনি সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে পেরেছিলেন।

হাসান শাহরিয়ার বলেন, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের মুত্যুতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়নি। তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়নি। এরচেয়ে লজ্জার আর কী থাকতে পারে। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের উপদেষ্টা।