বুধবার শুরু হচ্ছে বঙ্গবন্ধু বিপিএলের ময়দানি লড়াই

প্রকাশিত: ১২:১৯ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১১, ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক : কি আশ্চর্য্য! এই মাঠেই ঠিক ৪৮ ঘন্টা আগে হয়ে গেল আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। তা নিয়ে রাজ্যের উৎসাহ, উদ্দীপনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করলেন। একদম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শেষ পর্যন্ত মাঠে থেকে উপভোগও করলেন।

বলিউড সুপার স্টার সালমান খান আর ক্যাটরিনা কাইফের জমকালো ও আকর্ষণীয় পারফরমেন্সে উৎসবের ফলগুধারা বয়ে গেছে। সব মিলে একটা অন্যরকম উৎসবে মেতেছিল শেরেবাংলা।

সাথে বাংলাদেশের রকস্টার জেমস, ভারতের কৈলাশ খের, সনু নিগমও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে করেছেন সমৃদ্ধ। শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের পূর্ব দিকের বিশাল মঞ্চ থেকে গোটা স্টেডিয়াম ও তার আশপাশ ছিল উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত। আতশবাজির প্রচন্ড শব্দ আর রঙ-বেরঙের আলোকচ্ছটা ওই উৎসবকে করেছে আরও বর্ণিল।

কিন্তু অবাক করা সত্য হলো, যে আসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে ছিল রাজ্যের উৎসাহ, উদ্দীপনা আর প্রাণ চাঞ্চল্য- সেই বিপিএলের এবারের আসর মাঠে গড়ানোর আগে সেই উৎসাহ-উদ্দীপনার লেশমাত্র নেই। আলো ঝলমলে অবস্থা আর উৎসব মুখর পরিবেশ দুরের কথা, রীতিমত ম্যাড়মেড়ে অবস্থা শেরে বাংলা স্টেডিয়াম ও তার আশপাশে।

মোটকথা, অন্যবার ঘটা করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কম হলেও (মাঝে ২০১৫ সালের পর আর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানই হয়নি) বিপিএলের মাঠের লড়াই শুরুর আগে একটা অন্যরকম আকর্ষণ, প্রাণচাঞ্চল্য, উৎসাহ-উদ্দীপনা চোখে পড়তো। এবার তার অনেকটাই নেই।

ভাবার কারণ নেই এটা যে শুধু বিসিবি, বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের তৎপরতা কম বলে। আসলে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরী হয় সাধারণ দর্শক, ভক্ত ও সমর্থকদের মাঝে। এবারতো সেই ভক্ত ও সমর্থকই নেই।

কি করে থাকবে? আগের মত এবার তো আর সব পুরনো নয়। দল, দলের নাম, পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় সবই নতুন। আগের ৬ আসরে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর বাড়তি উৎসাহ এবং নিজেদের মেলে ধরার বাড়তি তাগিদ কাজ করতো। তাদের ভক্ত ও সমর্থকরা নিজ নিজ দলকে নিয়ে মেতে উঠতেন। তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনায় উদ্দীপ্ত হতো চারিদিক।

এবার তার কিছুই নেই। নতুন স্পন্সর পার্টনারদের অধীনে তার কিছুই হয়নি। তারা সবাই নতুন। দলের নাম নতুন। ব্যবস্থাপকরাও নতুন। যে কারণে ভক্ত ও সমর্থকও তৈরি হয়নি। শুধু ৭ দলের নামের একাংশ ঠিক আগের মতই আছে। তাই দর্শক, ভক্ত ও সমর্থকদের উৎসাহ-আগ্রহও বেশ কম। এ কারণেই শুরুর আগে অন্য বারের সেই ‘সাড়া’ আর পড়ছে না।

তারপরও খেলাটা টি-টোয়েন্টি। যার পরতে পরতে আকর্ষণ। দর্শক বিনোদন। বিপণন ও বাণিজ্য এবং সর্বোপরি মাঠের ক্রিকেট জমলে ব্যাট ও বলের জমজমাট লড়াই হলে হয়ত এমন নিষ্প্রভ অবস্থা কেটে যাবে। তখন ঠিক সাড়া পড়বে। দর্শক, উৎসাহ, উদ্দীপনাও বাড়বে।

এমন প্রত্যাশায়ই আসলে শুরু হচ্ছে এবারের বিপিএল। ১১ ডিসেম্বর, বুধবার শেরে বাংলায় শুরু হবে মাঠের লড়াই। দুপুর দেড়টায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স আর সিলেট থান্ডার্সের ম্যাচ দিয়ে সূচিত হবে এবারের আসরের আসল লড়াই। আর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় হবে কুমিল্লা আর রংপুরের ম্যাচ।

পূর্বের নিয়মেই প্রতিদিন দুটি করে খেলা। ১১ থেকে ১৪ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকার শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে। তারপর ১৭ ডিসেম্বর দ্বিতীয় পর্ব চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। সেখান থেকে তৃতীয় পর্ব আবার ঢাকায়। ঢাকার পর্ব শেষে বিপিএল চলে যাবে সিলেটে। আর তারপর অবার ফিরবে শেরে বাংলায়। সেখানেই ১৭ জানুয়ারি ফাইনাল।

যেহেতু আগের ছয়বার একই ফ্র্যাঞ্চাইজির অধীনে দল পরিচালিত হয়েছে, তাই প্রতিটি দলের একটি নির্দিষ্ট সমর্থকগোষ্ঠি তৈরি হয়েছে। সমর্থকদের তৎপরতাও ছিল চোখে পড়ার মত। এবার যেহেতু তা নেই। তাই বিপিএলের বল উইকেটে গড়ানোর আগে হৈ চৈ কম।

শুরুতে মনে হচ্ছিল বড় তারকাদের দেখা মিলবে না; কিন্তু শেষ পর্যন্ত ততটা তারকাশূন্য থাকছে না এবারের বিপিএল। যিনি একাই এ আসরকে বরাবর আকর্ষণীয় করে রেখেছেন, সেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বিশ্বসেরা ও সফলতম ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইলও আসবেন।

অবশ্য একদম শেষ ভাগে। তার স্বদেশি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের আরেক সফল ও কার্যকর পারফরমার আন্দ্রে রাসেলও এসেছেন। আগের দুইবার ঢাকার হয়ে খেলা এ ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অলরাউন্ডার এবার রাজশাহীর হয়ে খেলবেন। এর সাথে আগেরবারের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান এবং টপ স্কোরার রাইলি রুশোও আছেন শুরু থেকে। খুলনার হয়ে খেলবেন এবার রুশো।

এর বাইরে মাঠের ক্রিকেট জমতে আরও একটি সহায়ক উপাদান অতি জরুরি। তাহলো উইকেট। অনেকেরই মত, আগের বারের মত স্টিভেন স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার, এবি ডি ভিলিয়ার্সের মত বিশ্ব মানের তারকারা না থাকলেও যদি উইকেট ভাল হয়, রান ওঠে, হাই স্কোরিং গেম হয়, ব্যাটসম্যানরা স্বচ্ছন্দে-সাবলীল ব্যাটিং করতে পারেন, চার-ছক্কার ফুলঝুঢ়ি ছুটে, রানের নহর বয়ে যায়, তাহলে জমে উঠবে বিপিএল।

আসলে তারকা বেশি হলেই যে আসর জমে, তা নয়। আসর জমাতে সবার আগে দরকার মাঠের ক্রিকেটটা আকর্ষণীয় হওয়া। সেটা হবার পূর্ব শর্ত হলো আদর্শ উইকেট। এখন শেরে বাংলার পিচ কেমন হবে? কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট উপযোগি স্পোর্টিং পিচ তৈরি করতে পারবেন কি না? সেটাই দেখার।