ধন্যবাদ অধিনায়ক!

প্রকাশিত: ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৭, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : ম্যাচ শেষে মাঠে যেন আবেগের নহর বয়ে গেল! সিলেট আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত সব কর্নার যেন শুধুই মাশরাফিময় হয়ে রইল।

ম্যাচ জিতে মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় মাশরাফিকে কাঁধে তুলে নেন তামিম ইকবাল। বাকি দল তার সঙ্গে মিছিলের ভঙ্গিতে ছুটে। সেই ভঙ্গিতেই পুরো দল ড্রেসিংরুমে ফিরে গেল। সেখান থেকে বের হল নতুন বেশে। দলের সবাই তখন মাশরাফি! সবার গায়ের জার্সি নাম্বার ২!  পেছনে নাম লেখা মাশরাফি! আর বুকের সামনে সাদা কালিতে লেখা-ধন্যবাদ অধিনায়ক!

পুরো দল একজোট হয়ে মাঝে মাশরাফিকে রেখে বৃত্ত তৈরি করল। দলের সবাই মিলে জাতীয় দলের একটি জার্সি উপহার হিসেবে মাশরাফির কাছে হস্তান্তর করে। যে জার্সিতে দলের সব খেলোয়াড়দের অটোগ্রাফ শোভা পাচ্ছে।

মাশরাফির হাতে একটি স্মারক তুলে দেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন


বিসিবির পক্ষ থেকে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন মাঠে এসে মাশরাফির হাতে একটি স্মারক তুলে দেন। এই সময় সারিবদ্ধভাবে পুরো দল দাড়িয়ে হাততালি দিয়ে মাশরাফির অধিনায়কত্বের শেষ ম্যাচকে স্মরণীয় করে রাখল।

মাঠের পারফরমেন্সেও এই ম্যাচকে স্মরণীয় করল বাংলাদেশ। তামিম-লিটন সেঞ্চুরি হাঁকালেন। ওপেনিং জুটিতে নতুন রানের রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ। ৩-০’র পরিস্কার ব্যবধানে বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশড করল।

তিন ম্যাচের সিরিজে চারটি সেঞ্চুরি হলো। সেই চার সেঞ্চুরির দুটি করে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিলেন লিটন দাস ও তামিম ইকবাল। মাশরাফির অধিনায়কত্বের শেষ সিরিজকে সত্যিকার অর্থে রেকর্ডে  রেকর্ডে ভাস্মর করে রাখল তার দল।

অধিনায়কত্বের শেষের দিনের এই সুখস্মৃতি প্রসঙ্গে মাশরাফি বলছিলেন-‘এটা সত্যিই অনেক সন্মানের। দলের ছেলেরা সত্যিকার অর্থেই দুর্দান্ত খেলেছে। দলের জন্য নিজেদের সবকিছু তারা উজাড় করে দিয়েছে। দলের সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। সাকিব যদি আজ এখানে থাকতো তাহলে আরো ভিন্ন কিছু হতো। আরেকবার আমি আমার পুরো দলকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’

অধিনায়কের বিদায়ী এই ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ জানান-‘ সে (মাশরাফি) আমার ভাই ও বন্ধু। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সে অনেককিছু দিয়েছে। সুন্দরভাবে আমাদের পরিচালিত করেছে।’

মাঠ থেকে কাঁধে মাশরাফিকে বহন করে নিয়ে আসা তামিম ইকবাল বলছিলেন-‘ সে (মাশরাফি) আসলে অবিশ্বাস্য একজন ক্রিকেটার। যখন তিনি ২০১৪ সালে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব নিলেন তখন আমরা আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে বলতে গেলে কোথাও তেমন ছিলাম না। ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালে সেই তিনিই আমাদের বিশ্বমঞ্চের সর্বত্র পৌছে দিলেন। এমনও সময় এসেছিল যখন লোকে আমাকে দল থেকে বাদ দিতে বলতো, আর ঠিক তখনই তিনি আমাকে সবসময় সমর্থন দিয়ে গেছেন।’

মাশরাফির ছোঁয়ায় আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠা লিটন দাস নিজেকে ক্রিকেট বিশ্বে নতুন করে চিনিয়েছেন। ওয়ানডেতে তিন সেঞ্চুরির সবগুলোই তার মাশরাফির অধিনায়কত্বে। তার প্রিয় অধিনায়ক প্রসঙ্গে লিটন বলছিলেন-‘আমার হৃদয়ে তার জন্য বিশেষ একটা জায়গা থাকবে। তার নেতৃত্বেই আমার অভিষেক হয়েছিল। সবসময় আমাকে তিনি সমর্থন দিয়ে গেছেন। তার মতো অধিনায়ক খুঁজে পাওয়া দুস্কর। আমরা তাকে মিস করবো। তার নেতৃত্বে আমরা দলের মধ্যে সিনিয়র এবং জুনিয়রদের কোন পার্থক্য খুঁজে পেতাম না। দারুণ এক মজার মানুষ আমাদের অধিনায়ক।’

লম্বা সময় ধরে মাশরাফির সঙ্গে একসঙ্গে খেলা মুশফিক রহিম বলেন-‘ সে ফ্যানটাসটিক অধিনায়ক। শুধু ক্রিকেটার হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবেও দারুণ। আমি চাই তিনি খেলোয়াড় হিসেবে আরো যেন খেলে যান। যেভাবে তাকে বোলিং করতে দেখলাম তাতে মনে হলো এখনো সামনের দু’বছর ক্রিকেট খেলে যেতে পারবেন তিনি। তার জন্য শুভ কামনা রইল।’