করোনায় ঝিনাইগাতীর মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো রয়েছে নিরব কষ্টে

প্রকাশিত: ৩:২০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৬, ২০২০

হারুন অর রশিদ দুদু ॥ কষ্টগুলো প্রকাশ করতেও পারছেনা, সইতেও পারছেনা, এমন নিরব কষ্টে রয়েছে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে শ্রমজীবি মানুষেরা নিয়মিত শ্রমের কাজ করে উপার্জন করছে। ভ্যানগাড়ী চালকরা ভ্যান চালাচ্ছে। রাজ মিস্ত্রিরা রাজের কাজ করছে। কৃষকরা কৃষি কাজে ব্যস্ত রয়েছে। কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ীরা দেদার্ছে ব্যবসা করছে। ঔষধ ব্যবসায়ীরা চড়া দামে ঔষধ বিক্রি করছে, কারণ হাসপাতালে কেউ যাচ্ছে না। সিএনজি ও অটো রিক্সা চালকরা প্রতিদিন অটোরিক্সা চালাচ্ছে। সরকারী-বেসরকারী চাকুরীজীবি, শিক্ষকগণ ছুটিতে বাড়ী থাকলেও তাদের বেতন ভাতা পাচ্ছে নিয়মিত। আসলে মূলত দেখা যায় নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রমজীবি মানুষের মধ্যে কোন অভাব নেই। কিন্তু সরকারের দেওয়া ত্রাণ ও বিভিন্ন ব্যক্তিদের দেওয়া ত্রাণ যাচ্ছে শুধু অসহায় দরিদ্রদের হাতে। অসহায় দরিদ্ররা সারাজীবনই অসহায় থাকে। জীবন ভর দিলেও এদের চাহিদা মেটানো যাবেনা। এমন অবস্থা বাস্তব দৃষ্টের। বিত্তবানদেরত রয়েছে পর্যাপ্ত টাকা, ঘরে চাল, ডাল, ক্ষমতা, তাদের ২/৪ বছর বসে খেলেও ওই লোকদের সমস্যা নেই, বরং আরাম, কারণ সারাজীবন কষ্ট করেছে, এখন একটু ঘরে বসে বসে খাবে। এখন মূলত কষ্টে রয়েছে এককথায় মধ্যবিত্ত পরিরারগুলোতে জন্মগ্রহন করা মানুষের জীবনের গল্প ঠিক এমনই। বর্তমানে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পরা করোনা ভাইরাস সংক্রমন রোধে গত এক মাস ধরে ঝিনাইগাতীতে ঔষধ ও নিত্যপন্যের দোকান ছাড়া সবধরনের দোকানপাট অনিদির্ষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। সেই সাথে বন্ধ হয়ে গেছে মধ্যবিত্ত পরিবারের আয় রোজগার। প্রশাসনের নির্দেশ মেনে বাজারে ভাড়া নেওয়া দোকান গুলিও বন্ধ রয়েছে। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে মানা। তারপরও পরিবারের খাবার সংগ্রহের জন্য বাজারে আসতে বাধ্য হন অনেকেই। এদিকে, উপজেলার অনেক ছোট-বড় ব্যবসায়ীই পরিবার নিয়ে বেচেঁ থাকার জন্য নিজের কাছে জমানো সামান্যে পুজিঁ ও লোন করে ঘর মালিককে অগ্রিম টাকা দিয়ে দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করে আসছিলেন। এতে তাদের মাথার উপর প্রতিদিন ভর করছে বাড়তি ঋনের বোঝার চাপ। আর সেই সাথে পরিবারে রোজগারের চিন্তা, বোবা কান্না ছাড়া কোন উপায় থাকে না মধ্যবিত্তদের। এমতাবস্থায় কোনমতে চালাতে হচ্ছে তাদের সংসার। তারপর রয়েছে সন্তানদের বিভিন্ন ধরনের বায়না। প্রতিদিনই কোনমতে এগুলো ম্যানেজ করতে হয়। কিন্ত এভাবে চলতে থাকলে সামনে চলে আসে মধ্যবিত্তদের বিপদের আশংঙ্খা। দুর্বিসহ হয়ে ওঠে জীবন-যাপন। অনেকে হয়তো কারো কারো বন্ধু-আত্মীয় ও পরিচিতদের কাছ থেকে ধার করে পরিবারের জন্য খাবার জোগার করে চলেছেন। আবার কেও কেও হয়তো পরিবার নিয়ে না খেয়েই লোকলজ্জার ভয়ে ভালো থাকার অভিনয় করে দিনপার করে চলছে। এসময় খুব বেশি কাছের ও পরিচিত না হলে টাকাও ধার দিতে চায়না অনেকেই। ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর বাজারের নাম প্রকাশে শর্তে বেশ কিছু ছোট খাটো ব্যবসায়ী যেমন, গার্মেন্টস, কাপড়, তোলা ব্যবসায়ীরা জানান, গত এক মাস ধরে আমাদের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রয়ছে। ছোট হলেও দোকানের আয়ের টাকা দিয়েই ঘর ভাড়া, কিস্তির টাকাসহ সংসার চলতো আমাদের। ভাই-বোন, স্ত্রী, সন্তানকে নিয়ে পরিবার তাদের। ব্যাংকে কোনো জমানো টাকা নেই তাদের। তারা জানান, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সংসার চালানোটাই খুব কষ্ট হয়ে পড়েছে। হাতে যা কিছু টাকা ছিলো তা দিয়েই বর্তমানে চলছি। দেশের অবস্থা এমন চলতে থাকলে আগামী দিনগুলো যে পরিবার পরিজন নিয়ে কিভাবে চলবো ভেবে পারছিনা। করোনা পরিস্থিতির কারণে কিভাবে দোকান ঘর ভাড়া দেবেন, কীভাবে সংসার চালাবেন ভাবতেই সে হিমসিম খাচ্ছেন ছোট খাটো একেবারেই বন্ধ দোকানের ব্যবসায়ীরা। কিন্ত কাউকে এমন কষ্টের কথা বলতেও পারছেনা। আবার ত্রান ও খাদ্যসামগ্রীর জন্য লাইনে দাড়াঁতেও পারছেনা। তারা আক্ষেপ করে বলেন, ‘বড় লোকের টাকার অভাব নেই। গরিবরা ত্রাণ পায়। আর মধ্যবিত্তরা না খেয়ে চোঁখের পানি লুকায়’। সদর বাজারের আরেক চা দোকান ব্যবসায়ী ও দূরপাল্লার গাড়ীর শ্রমিকরা জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সারাদশে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই মুহুর্তে গৃহবন্দি সাধারণ মানুষ। নিম্ন আয়ের মানুষের হাতে ত্রান-খাদ্যসামগ্রী এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্য তুলে দিচ্ছেন অনেকেই। বড়লোকদের ব্যাংকে জমানো টাকা দিয়ে ভালো ভাবেই পরিবার নিয়ে সংসার চলছে তাদের। তবে মধ্যবিত্তদের পাশে নেই কেউ। ঘরে খাবার না থাকলেও মধ্যবিত্তরা লজ্জায় কিছু বলতে পারছে না। মধ্যবিত্তরা পারছেনা মাঠে শ্রমিকের কাজ করতে, রিক্সা চালাতে, না পাচ্ছে সরকারী-বেসরকারী ও কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী সহায়তা। একমাত্র আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনেরাই শুধুমাত্র বর্তমান সময়ে অতি কষ্টে মানবেতর দিনযাপন করে চলছে বলে তারা জানান। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়। হোটেল, রেস্তুরা, ছোট খাটো গার্মেন্টস, কাপড়ের দোকান, জুতার দোকান, স্বর্ণ শিল্পালয়ের কারিগর। উপজেলা, জেলা পর্যায়ে মূলত এ দোকান গুলোই একেবারেই বন্ধ রয়েছে। একমাত্র খাদ্য সহায়তা পেলে ওই দোকানের কর্মচারী, হোটেল শ্রমিক, দূরপাল্লার গণপরিবহন গাড়ীর শ্রমিকরা পাওয়ার যোগ্য বলে বাস্তবে দেখা যায়। কর্তা ব্যক্তিরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে অভিজ্ঞ মহল আশাবাদী।