শিক্ষায় ক্ষতি কাটাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রস্তাব শিক্ষাবিদদের

প্রকাশিত: ৪:৪৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৮, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : করোনাভাইরাসের প্রকোপে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। দীর্ঘসময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীরা নতুনভাবে সেশনজটে পড়বে এবং শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষাবিদরা। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে যদি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে, এতে খুব বেশি সমস্যা হবে না। যদি পরিকল্পিতভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সেমিস্টারের সময় কমিয়ে আনা যেতে পারে। সরকারি ছুটি দুইদিনের পরিবর্তে একদিন করা, আনুষঙ্গিক ছুটি কমিয়ে সমন্ত সময়ে ক্লাস নিয়ে এটি ফুলফিল (সম্পন্ন) করা যেতে পারে। তবে এর জন্য অবশ্য এখন থেকে পরিকল্পনার তৈরি করতে হবে।

করোনাভাইরাসের প্রকোপের শুরুতে যদি পরিকল্পনা নিয়ে রাখা হতো তাহলে আমাদের আজ দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়াতে হতো না উল্লেখ করে মনজুরুল ইসলাম বলেন, এখন পড়াশোনার যে বিঘ্ন ঘটছে সেটা কাটিয়ে উঠতে এখনই পরিকল্পনা করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে। বিভিন্ন এনজিও সংস্থার সাহায্য নেয়া যেতে পারে। প্রত্যেকের সমন্বয়ে একটি বৃহত্তর কমিটি গঠন করতে হবে এবং তা এখন থেকেই পরিকল্পনা নিয়ে রাখতে হবে।

সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে এখনই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করার প্রস্তাব জানিয়েছেন শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. একরামুল কবীর। তিনি বলেন, পরিকল্পনা মোতাবেক দ্রুত সময়ের মধ্যে পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশ করতে হবে। আমাদের একটি বছর যে পিছিয়ে যাচ্ছে সেটি আগামী দুই বছরের মধ্যে যাতে সমন্বয় করা যায় সে ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যদি এখনই পরিকল্পনা গ্রহণ করা না যায় তাহলে সে ক্ষেত্রে নানা সমস্যা তৈরি হবে। এছাড়া শিক্ষকদের জন্য একটা নির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করতে হবে।

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী  বলেন, করোনা পরিস্থিতি একটি বৈশ্বিক সমস্যা, তার কবলে পড়ে আমাদেরও সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। বর্তমানে শিশুরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে। আমাদের শিশুদের আগে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, তারপর বন্ধ থাকার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে। প্রধানমন্ত্রী তিন বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনার কথা বলেছেন তা বাস্তবায়নে এখনই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও সাবেক তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, প্রাইমারি থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যায় পর্যন্ত আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। যেটি আমাদের প্রধানমন্ত্রী সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে।

এক্ষেত্রে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিষয়টি বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) অবশ্যই তিনি অনেক চিন্তাভাবনা করে বলেছেন উল্লেখ করে সাদেকা হালিম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম শুরু করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অর্থনীতি সচল রাখতে বিভিন্ন শিল্পকারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সরকার অনলাইন ক্লাসের কথাও বলছে। অনলাইন ক্লাসের বিষয়টা একটু চিন্তা করতে হবে যে কয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামর্থ্য আছে? সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এটি পরিচালনার সামর্থ্য নেই। শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে গ্রামে রয়েছে, তাদেরও অনেকের সামর্থ্য নেই। সুতরাং সেটিও বিবেচনা করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।