নালিতাবাড়ীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ট্রাক চলাচল ॥ ড্রাইভারের কারাদণ্ড

প্রকাশিত: ৯:১১ অপরাহ্ণ, জুন ১৮, ২০২০

মাহফুজুর রহমান সোহাগ ॥ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দশ টনের অধিক ভারী ওজনের বালু লোড করে নাকুগাঁও ব্রিজ দিয়ে পারাপারের অভিযোগে আবু রায়হান নামে এক ট্রাক চালককে তিন দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়াও অতিরিক্ত বালুবাহী ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। বুধবার (১৭ জুন) দিবাগত রাতে নাকুগাঁও ব্রিজ এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওই অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আরিফুর রহমান। ওইসময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) সঞ্চিতা বিশ্বাস, ব্যাটালিয়ন আনসার ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নাকুগাঁও ব্রিজ ২০১০ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। দশ টনের অধিক ভারী যানবাহন এ ব্রিজ দিয়ে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও স্বার্থান্বেষী বালু ব্যবসায়ীদের খামখেয়ালীপনায় প্রায় দুই বছর যাবত ৭০-৮০ টন ভারী বালুবাহী ট্রাক এ ব্রিজ দিয়ে চলাচল শুরু করে। ফলে চলতি বছরের গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত বালুবাহী ট্রাকের চাপে ব্রিজের একাংশের ছাদ ধ্বসে পড়ে। এরপর নামকাওয়াস্তে মেরামত করে ব্রিজটি পুনরায় চালু করা হয়।
এদিকে মেরামতের পর সড়ক ও জনপথ বিভাগ দশ টনের অধিক ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারী করে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিদিন অতিরিক্ত বালুবাহী ট্রাক ব্রিজ পারাপার হচ্ছিল।
জানা যায়, ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা ভোগাই নদীর উপর প্রায় ১০ বছর আগে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় ভোগাই সেতু। সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর প্রচেষ্টায় ২০০১ সালে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ ওই কাজটি বাস্তবায়ন করে। ১২৮টি পাইল ও ৬টি ব্যাচে ১৮৬.৪০ মিটার দীর্ঘ ওই সেতু নির্মাণে ৩ দফায় ৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা থেকে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে প্রায় ১২ কোটি টাকা করা হয়। এই ব্রিজটির শুরু থেকেই সর্বাধিক ১০ টন মালামাল বহন করার ক্ষমতা রয়েছে । ২০০৯ সালে জনসাধারণ ও যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয় এটি। এরপর ওই সেতুর উপর দিয়ে সীমান্ত সড়ক চালু হয়।
নালিতাবাড়ীর নাকুগাঁও এবং হালুয়াঘাটের গোবরাকুড়া ও কড়ইতলী স্থলবন্দরের কয়লা-পাথর বোঝাই ভারি যানবাহন চলাচল করত এ সেতু দিয়ে। কিন্তু গত দু’বছর ধরে ভোগাই নদী থেকে অবৈধভাবে যত্রতত্র বালু উত্তোলন করে একদল বালুখেকো ৫০-৬০ টন পর্যন্ত ওজনের ভেজা বালুর ট্রাক ভোগাই সেতুর উপর দিয়ে নিয়ে যেতো। ফলে ব্রীজটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং বিভিন্ন জায়গায় গর্ত হয়ে ভেঙ্গে যায়।
ঘটনাটি জানার পর সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকায় স্থানীয় এমপি মতিয়া চৌধুরী প্রশাসনকে ওই বিষয়ে বেশ কয়েকবার সতর্ক করেন। কিন্তু বিষয়টি গায়ে লাগায়নি তারা। অতিরিক্ত লোডের ফলে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ভোগাই সেতুর একাংশ ধ্বসে পড়ে। পাশাপাশি সেতুর নিচের পাইল মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্ধ হয়ে যায় সেতুর উপর দিয়ে সব রকমের যাতায়াত। কিন্তু নিম্নমানের কাজ করে কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে সেই সেতু জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার ঘটনায় তিনি ভীষণ ক্ষুব্ধ হন। এদিকে সাবেক এই মন্ত্রীর নিরব প্রতিবাদের পরেও এক শ্রেণীর বালুখেকুরা সড়ক ও জনপথ (সওজ) এর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ৫০-৬০টন ওজনের দশ চাকার ভেজা বালুর ট্রাক চলাচল অব্যাহত রাখায় বিভিন্ন গনমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
সরকারী এই স্থাপনা ব্রিজটি ঝুকিপূর্ন হওয়ায়র কারণে নালিতাবাড়ীর সীমান্তবর্তী রামচন্দ্রকুড়া, পোড়াগাঁও, নয়াবিলসহ ১০ ইউপি চেয়ারম্যান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরে কাছে লিখিত অভিযোগ করে বালু উত্তোলন বন্ধ ও সেতু ধসের সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়ে চিঠিও দিয়েছিল।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুর রহমান বলেন, ঝুকিপূর্ন এই ব্রিজ দিয়ে মালবাহী ভারী ওজনের যান বাহন চলাচলে সড়ক ও জনপথের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও দশ টনের অধিক ভারী যান চলাচল করা এক ট্রাক ড্রাইভারকে তিন দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে, ট্রাকটিকে জব্দ করে নালিতাবাড়ী থানায় পাঠানো হয়েছে।সরকারী এই স্থাপনা রক্ষায় ভ্রাম্যমান কোর্টের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান।
ছবিতেঃ নালিতাবাড়ীর ভোগাই ব্রীজে আটককৃত বালু ভর্তি ট্রাক।