জামালপুরে দ্বিতীয় দফায় বন্যা ॥ পানিবন্দী ২৫ হাজার মানুষ

প্রকাশিত: ৮:৩৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০২০

জামালপুর প্রতিনিধি ॥ জামালপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন করে বন্যার পানি বেড়ে চলেছে। এতে জেলার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ির নিম্নাঞ্চলে বন্যা পানি প্রবেশ করছে।
১৩ জুলাই সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত যমুনা নদীর বিপদ সীমার ৭৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপের নিয়ন্ত্রক আব্দুল মান্নান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য সময়ের চেয়ে দ্বিতীয় দফায় অস্বাভাবিকভাবে পানি বাড়ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন এলাকা বন্যাকবলিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। গত শুক্রবার থেকে পানি অব্যাহত ভাবে বেড়ে যাওয়ায় বন্যার শঙ্কায় আছেন হাজারো মানুষ। একই সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় তলিয়ে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি।


এদিকে বকশীগঞ্জে নতুন করে সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বিলেরপাড়, উত্তর আচ্চাকান্দি, চর কামালের বাত্তী, মদনের চর, ডেরুরবিল, গাজীপাড়া, কুতবের চর, বাংগালপাড়া, কামালের বাত্তী এলাকায় আবার বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এসব গ্রামের মানুষ নতুন করে পানি বন্দি হতে যাচ্ছে । গত দুই দিন ধরে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল ও প্রবল বর্ষণের কারণে দশানী নদীর পানি ফের বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সরিষাবাড়ি উপজেলার আওনা, কুলপালচর, কুমারপাড়া, নলসন্ধ্যা, মিরকুটিয়া, কাজলগাঁও, দমোদরপুর, চর পোগলদিঘা, কালিপুর, শ্যামপুর, মালিপাড়া, বিন্নাফৈর, টাকুরিয়া, মানিক পোটল, গোবিন্দ পোটল, চর সরিষাবাড়ি, চর নান্দিনা, আদ্রা, ছাতারিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে।


পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্লাবিত নতুন এলাকার মধ্যে রয়েছে মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর, দুরমুঠ, নাংলা, কুলিয়া, ফুলকোচা, ঝাউগড়া এবং মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ি, জোড়খালি, চর পাকেরদহ ইউপির বিস্তীর্ণ এলাকা।
ইসলামপুর উপজেলার নদী তীরবর্তী চিনাডুলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম বলেন, যমুনা নদীবেষ্টিত এলাকার মানুষের দুর্দশা ছাড়ছে না। প্রথম দফার পানি দুর্গত এলাকা থেকে নামতে থাকায় বন্যার্তরা নিজেদের ঘরবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছিলেন। তবে অনেক মানুষ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়ে আছেন। এর মধ্যে আবার পানি বাড়ছে। এতে অনেক এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। যেভাবে পানি বাড়ছে, একদিনের মধ্যেই পুরো ইউনিয়ন আবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়বে। এতে দুর্গত এলাকার মানুষ কষ্টের মধ্যে পড়বে।


দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুকাইবাড়ী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মুক্তাদীর হোসেন বলেন, যমুনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ওয়ার্ড প্লাবিত হয়। অন্যস্থানে যখন পানি কোমর সমান হয়, তখন এখানে মাথা পর্যন্ত পানি থাকে। রোববার থেকে পানি ঢুকছে। টানা ১২ দিন মানুষ বন্যার পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে মাত্রই ঘরবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছিলেন। এর মধ্যেই আবার বন্যা। এতে করে এসব অঞ্চলের মানুষের দুঃখের সীমা থাকবে না। বেশির ভাগ মানুষের হাতে টাকা–পয়সা নেই। অনেকের কাজকর্ম নেই। এর মধ্যে বন্যার কারণে চরম বিপাকে পড়বেন মানুষ।
ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিবার বন্যায় এই উপজেলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ পুরো উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। দুর্গম অনেক চরাঞ্চল থেকে প্রথম দফার পানিই নেমে যায়নি। এর মধ্যে দ্বিতীয় দফায় নতুন করে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। দ্বিতীয় দফার বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। দুর্গত মানুষকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী বলেন, জেলার ৪৬১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য। বন্যা কবলিত এলাকার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা-নেয়ার জন্য ইঞ্জিনচালিত ১২টি নৌকা রাখা হয়েছে।