জামালপুরে পরকিয়ায় বিধবা গৃহবধু অন্ত:সত্ত্বা ॥ সালিশ বৈঠকে অস্বীকার করায় বিষপানে আত্মহত্যা

প্রকাশিত: ৫:১৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২০

জামালপুর প্রতিনিধি ॥ বিয়ের লোভ দেখিয়ে এক বিধবা নারীকে সাথে দৈহিক সম্পর্কের ফলের ৪ মাসের অন্ত:সত্ত্বাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করায় আলিছা বেগম (২৮) বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। ধর্ষক শেরপুর নতুন ভাগলঘর গ্রামের হাসেন আলীর ছেলে তারা মিয়া (৩০) বিয়ের প্রলোভনে দীর্ঘদিন ধরে ওই নারীর সাথে স্বামী-স্ত্রীর মতো সম্পর্ক চালিয়ে আসছিলো। দুইদিন পর শনিবার রাত সাড়ে ১০টার ওই বিধবার লাশ জামালপুরের কম্পুপুরে বাবার বাড়িতে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ওই বিধবা নারী শেরপুর নতুন ভাগলঘর গ্রামের আলিছা বেগমের আট বছর আগে বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের ঘরে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হবার কিছুদিন পরে স্বামী বুসা শেখ মারা যায়। স্বামীর মারা যাবার পর আলিছা বেগম তার শ্বশুর বাড়িতে থাকতেন।
আলিছা বেগমের শাশুড়ি হামেদা বেগম জানান, পাঁচ বছরের একটি সন্তান রেখে মারা যায় ছেলে বুসা শেখ। সন্তানের দিকে তাকিয়ে বউমা অন্য কোথাও বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়নি। মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে তার একটি সন্তানকে লালন পালন করে। গত ১ বছর ধরে আমগরে বাড়ির পাশে হাসেনের ছেলে তারা আমগরে বাড়িতে ঘনঘন যাতায়াত শুরু করে। তারা মিয়া বাড়িতে এসে বউমা কাছে অবৈধভাবে দৈহিক সম্পর্ক তৈরির কুপ্রস্তাব দিতো।
বিধবার মা রোকেয়া বেগম জানান, মেয়ে আমাকে বলছে তারা মিয়া মাঝে মধ্যেই সে মেয়েকে বিবাহ করবে বলে আশ্বস্ত করে। বিবাহের লোভে আমার মেয়ের সাথে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তুলে। আমার মেয়ের পেটে যখন বাচ্চা আসে তারা মিয়া তাকে বিয়ে করবে না বলে জানায়।
মৃতের বাবা আলছার শেখ বলেন, আমার মেয়ে আর তারা মিয়া অবৈধ দৈহিক সম্পর্কের বিষয়টি প্রকাশ হবার পর গ্রামের মুরব্বি ও যুব সমাজের নজরে আসলে তারা গ্রাম্য সালিশি বৈঠকে বসেন। সালিশি বৈঠকে আমার মেয়ে ও তারা মিয়া সম্পর্কের বিষয়টি উভয়ের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি পাওয়ায় সালিশিয়ানরা উভয়কে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে চাইলে বৈঠকে তারা মিয়া ৩০ হাজার টাকা দিতে চায় মেয়েকে। বিবাহ করবে না আর আমার মেয়েকে অপবাদ দেয়। তার পেটে বাচ্চার কথাও সে অস্বীকার করে। সন্তানের পরিচয়ের কথা ব্যাপারটা কেউ মাথায় নয় না। আমাগরে পরিবারের সবাইকে আমার মেয়েকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তারা মিয়া। আর বলে যদি পুলিশ বা কারো কাছে বলি তাহলে আমাদের মাইরা ফালাবো, আমার মেয়ের পেটে বাচ্চার, সমাজের মুখ দেখাবে কি করে- আমার মেয়ে এগুলো অপবাদ সহ্য না করতে পেরে শুক্রবার ভোররাতে ঘরে রাতে বিষ খায় আমরা তা দেখে আশেপাশের সবাইকে জানিয়ে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার ময়মনসিংহ পাঠায়। শুক্রবার দুপুরে আমার মেয়ে মারা যায়।
তার ভাই খোকন বলেন, আমরা গ্রামের মাতব্বরের কাছে সুষ্ঠু বিচার চাইছিলাম তারা মিয়া তা মানে নাই। আমার বোনকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। যদি কারো কাছে বলি তাইলে আমাদের পরিবারের সবাইকে খুন করবে। আমরা গরীব মানুষ সরকারের কাছে সুষ্ঠ বিচার চাই। আমার বোনের মতো অনেক মেয়ের সর্বনাশ করছে তারা মিয়া।
তিনি আরো জানান, ময়মনসিংহ থেকে ময়না তদন্তের রিপোর্ট জামালপুরে পাঠিয়েছে। আজ রোববার জামালপুর থানায় গিয়ে মামলা করা হবে। শনিবার রাত সাড়ে ১০টা সময় জানাজা দাফনের কাজ সম্পন্ন করে আত্মীয়-স্বজনরা।