জামালপুরে ডাঃ সুলতানা পারভীন হত্যা মামলায় ডাঃ শাহাদাত গ্রেফতার

প্রকাশিত: ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১২, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার, জামালপুর ॥ জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার (গাইনি) ডাক্তার সুলতানা পারভীন হত্যা মামলায় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার (গাইনি) ডাক্তার শাহাদাত হোসেনকে আটক করেছে মেলান্দহ থানা পুলিশ। গত শুক্রবার রাতে তাকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে গতকাল শনিবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন।
গত ১৬ আগস্ট মেলান্দহ উপজেলা হাসপাতালের আবাসিক ভবনের বাসায় নিজ কক্ষ থেকে ডাক্তার সুলতানা পারভীনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধারের পর ২২ আগস্ট তার বাবা বাংলাদেশ রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত পরিদর্শক মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন আজাদ বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ করে মেলান্দহ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ডাক্তার সুলতানা পারভীনদের বাড়ি রাজশাহী জেলা সদরের পোস্ট অফিস গলি এলাকায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ আগস্ট ডাক্তার সুলাতানা পারভীনের মরদেহ উদ্ধারের পর তার মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্তে নামে মেলান্দহ থানা পুলিশ। তদন্তের একপর্যায়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার (গাইনি) ডাক্তার শাহাদাত হোসেনের সাথে ডাক্তার সুলতানা পারভীনের ঘনিষ্ঠ সর্ম্পক থাকার সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ। ডাক্তার শাহাদাত হোসেন ৩ সন্তানের জনক। তিনি জামালপুর শহরের শহীদ হারুণ সড়কের অবসরপ্রাপ্ত পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মচারী মো. ফজলুল হকের ছেলে। কর্মস্থল ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল হলেও ডাক্তার শাহাদাত হোসেন বেশির ভাগ সময় জামালপুরে অবস্থান করে ব্যক্তিগত চেম্বারে এবং শহরের বিভিন্ন ক্লিনিকের চেম্বারে রোগী দেখেন।
ডাক্তার সুলাতানা পারভীনের ফোন নম্বরের কললিস্ট থেকে ডাক্তার শাহাদাত হোসেনের সাথে কথোপকথন ও খুদেবার্তা আদান-প্রদানসহ বেশকিছু প্রমাণ সংগ্রহ করে পুলিশ। এর ভিত্তিতেই গত শুক্রবার রাতে জেলা পুলিশের সহায়তায় জামালপুর শহরের শহীদ হারুন সড়কে নিজ বাসা থেকে ডাক্তার শাহাদাত হোসেনকে আটক করে মেলান্দহ থানা পুলিশ। থানা হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে সন্তোজজনক কোন জবাব না পাওয়ায় ডাক্তার শাহাদাত হোসেনকে ডাক্তার সুলাতানা পারভীনের বাবার দায়ের করা হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে গতকাল শনিবার তাকে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ। আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
ডাক্তার সুলতানা পারভীনের মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল ইসলাম খান বলেন, ডাক্তার সুলতানা পারভীনের মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এখনো পাইনি।
এ প্রসঙ্গে জামালপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার সীমা রানী সরকার বলেন, ডাক্তার সুলতানা পারভীনের মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এখনো থানায় যায়নি। তবে শুনেছি যে মরদেহের কিছু নমুনার ভিসেরা পরীক্ষা জন্য ময়মনসিংহ ও ঢাকায় তিনটি ল্যাবে পাঠিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। ভিসেরা প্রতিবেদন এখনো আসেনি। ভিসেরা প্রতিবেদন এলে পরেই ডাক্তার সুলতানা পারভীনের মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
সীমা রানী সরকার আরো বলেন, ডাক্তার সুলাতানা পারভীন ও ডাক্তার শাহাদাত হোসেনের মধ্যে ফোনে কথোপকথন ও খুদেবার্তা আদান-প্রদানসহ বেশকিছু সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতেই ডাক্তার শাহাদাত হোসেনকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ডাক্তার সুলাতানা পারভীন যে ডাক্তার শাহাদাত হোসেনের দ্বারা প্ররোচিত ও প্রতারিত হয়েছেন তা নিশ্চিত হতে পেরেছি। এটাও একধরনের গুরুতর অপরাধ। প্রয়োজনে ডাক্তার শাহাদাত হোসেনকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করারও পরিকল্পনা রয়েছে। মামলাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্তাধীন রয়েছে।
প্রসঙ্গত, মেলান্দহ উপজেলা হাসপাতালের একটি আবাসিক ভবনের বাসার নিজ কক্ষ থেকে ডা. সুলতানা পারভীনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় গত ১৬ আগস্ট বিকেলে। মেলান্দহ থানা পুলিশ ওইদিন মরদেহ উদ্ধার করে জামালপুর মর্গে পাঠায়। পরের দিন সোমবার ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের স্বজনরা তার মরদেহ তাদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহী জেলা সদরের পোস্ট অফিস গলি এলাকায় নিয়ে দাফন করেন। মরদেহ উদ্ধারের সময় ওই কক্ষের বিছানায় ডাক্তার সুলতানা পারভীনের শরীর একটি চাদর দিয়ে ঢাকা, ঠোঁট কাটা ও থেতলানোসহ রক্তমাখা মুখমন্ডল, চোখ ও কপালে ফোলাজখম, দুই হাত ও বুকের দিকেও রক্তাক্ত কালচে জখমের চিহ্ন পাওয়া যায়। ২২ আগস্ট ডাক্তার সুলতানা পারভীনের বাবা মুক্তিযোদ্ধা মো. আলাউদ্দিন আজাদ বাদী হয়ে তার মেয়েকে পরিকল্পিভাবে হত্যার অভিযোগ এনে অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ করে মেলান্দহ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে শুক্রবার আটক ডাক্তার শাহাদাত হোসেন ছাড়া আরো কেউ জড়িত রয়েছে কি না পুলিশ তা অনুসন্ধান ও তদন্ত করে দেখছে।