ঝিনাইগাতীর ভূয়া কাজী বাছেদকে ভিন্ন কায়দায় শাস্তি দিলেন ইউএনও ॥ উপজেলাবাসী সন্তুষ্ট

প্রকাশিত: ৮:২৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৯, ২০২০

হারুন অর রশিদ দুদু ॥ শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় ভুয়া কাজী বাছেদ মিয়ার দৌরাত্ম্য থামছে না। তিনি বিভিন্ন এলাকায় গোপনে বিবাহ রেজিষ্ট্রি করেই চলছেন। এতে কয়েক শতাধিক বিবাহ রেজিষ্ট্রির ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। নকল পাইতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, বাছেদ আলী ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতীবান্দা ইউনিয়নের কাজী হিসেবে দাবি করে বিভিন্ন গ্রামে বিবাহ রেজিষ্ট্রি করে আসছে। তার বাড়িতে কাজী অফিস বানিয়ে বিবাহ রেজিষ্ট্রির কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এ ধরনের কার্যকলাপের কারণে গত ৬ মাস পূর্বে ওই ভূয়া কাজী বাছেদকে বাল্য বিবাহ পড়ানোর দায়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে কাজীকে জেল জরিমানাও করেছিলেন। এর পরেও কাজী ক্ষান্ত হয়নি। উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ অক্টোবর বুধবার রাতে শেরপুর সদর উপজেলার দমদমা কালিগঞ্জ এলাকার মুরাদ নামের এক যুবকের সাথে ঝিনাইগাতী উপজেলার পশ্চিম হাতিবান্ধা গ্রামের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর (১৪) বিয়ে রেজিষ্ট্রি করেন। ওই বিয়ের বিষয়টি ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানতে পেরে রাতেই বিয়ের স্থানে ছুটে যান। ইউএনও’র ভ্রাম্যমান আদালত টের পেয়ে ভূয়া কাজী বাছেদ মিয়া ওই স্থান থেকে সটকে পড়ে। পরদিন ইউএনও ওই ভূয়া কাজী বাছেদের বাড়ীতে খুঁজতে যান। বাছেদকে সেখানে না পেয়ে ইউএনও’র কার্যালয়ে হাজির হওয়ার জন্য দিনব্যাপী মাইকিং করা হয়। তার পরেও বাছেদ উপস্থিত না হওয়ায় ঝিনাইগাতী বাজারে সরকারী জায়গায় বাছেদের একটি দোকান ঘর ভ্রাম্যমান আদালত সিলগালা করে দেয়। অবশেষে গত ৬ ডিসেম্বর ভূয়া কাজী বাছেদ ইউএনওর কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলে ইউএনও তাকে শর্ত দেন। প্রথম শর্ত দেওয়া হয়েছে- একশত টাকা মূল্যের ১০০টি ষ্ট্যাম্পে মুচলেকা দিয়ে এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যসহ বিভিন্ন দপ্তরে পৌছাইতে হবে, ভবিষ্যৎতে এমন কাজ আর করবে না ওই কাজী এবং দ্বিতীয় শর্ত- ওই ভূয়া কাজী নিজে পুরা উপজেলা সাতদিন ব্যাপী নিজ মুখে বলবে আমি ভূয়া কাজী, আমি অন্যায় করেছি। অনেক বাল্য বিবাহ রেজিষ্ট্রি করেছি। এতে এলাকাবাসীসহ সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ক্ষতি করেছি। কোমলমতি ছেলে-মেয়েদের জীবন নষ্ট করেছি। আমি আর কোন বাল্য বিবাহ রেজিষ্ট্রি করবো না, আমি প্রকৃত কাজী নহে এবং কাজী পরিচয় দিব না। এ শর্তে তাকে সাতদিনব্যাপী সমস্ত ঝিনাইগাতী উপজেলায় গ্রাম গঞ্জে মাইকিং করে করতে হবে। ওই শর্ত মোতাবেক বর্তমানে ওই ভূয়া কাজী বাছেদ আলী নিজেই উপজেলাব্যাপী মাইকিং করছেন। মাইকিং এ কাজী নিজের মুখে বলছেন, আমি বাল্য বিবাহ পড়িয়ে অন্যায় করেছি, আসলে আমি প্রকৃত কাজী নহে, আমি আর কোন দিন কাজী পরিচয় দিব না। ভূয়া কাজীকে ইউএনও’র এমন ভিন্ন কায়দায় শাস্তি দেওয়ায় উপজেলাবাসী ইউএনও’র প্রতি সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন।