নকলায় বাল্যবিয়ের অপরাধে কনের মায়ের অর্থদন্ড

প্রকাশিত: ৯:৫৩ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৬, ২০২১

নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি : শেরপুর জেলার নকলা উপজেলায় অপ্রাপ্ত বয়স্ক (১৩ বছর) মেয়েকে বাল্যবিবাহ দেওয়ার অপরাধে কনের মাকে ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। ১৫ জানুয়ারি শুক্রবার শুরুর প্রথম ঘন্টায় উপজেলার গৌড়দ্বার ইউনিয়নের গৌড়দ্বার গ্রামে ওই আদালত পরিচালনা করা হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গৌড়দ্বার ইউনিয়নের গৌড়দ্বার গ্রামের মো. রাসেল মিয়ার অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে একই ইউনিয়নের তেঘড়ী গ্রামের মো. কটন মিয়ার ছেলে মো. আপেল মিয়ার সাথে বিয়ের আয়োজন চলছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাহিদুর রহমান কনের বাবা মো. রাসেল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন। তবে আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাহিদুর রহমান বিয়ে বাড়িতে পৌঁছার আগেই রেজিস্ট্রেশন ও ইসলামিয়া শরিয়াহ মোতাবেক বিয়ের সকল কাজ শেষ হয়ে যায়।
এদিকে আদালতের উপস্থিতি টেরপেয়ে বরসহ বরযাত্রী, কাজী ও কনের বাড়ির সবাই পালিয়ে যায়। এমতাবস্থায় বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে কনের মাকে ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড করার পাশাপাশি মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত কনেকে বরের বাড়িতে যেতে দিবেন না এবং বরকে কনের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতে দিবেন না মর্মে কনের মা মোছা. রেনু বেগমের কাছ থেকে মুচলেকা নেয়া হয়। এ আদালত পরিচালনার সময় পুলিশ বিভাগে কর্মরত নকলা থানার এসআই মো. সবুজ মিয়া, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় ইউপি সদস্য, গ্রাম পুলিশ, এলাকার গন্যমান্যরা উপস্থিত থেকে আদালতের কাজে সহায়তা করেছন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বাল্যবিবাহে কঠুর আইনী বাধা থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যাকে ম্যানেজ করে বর-কনের নামে জন্ম নিবন্ধন নিয়ে বা ভুয়া জন্মনিবন্ধন তৈরী করে এ বাল্যবিবাহের আয়োজন করা হয়। এলাকাবসী অনেকে বলেন, এমন বিয়ের ক্ষেত্রে নিকাহ রেজিষ্ট্রার বা কাজীদের কোন প্রকার দোষ দেওয়া সুযোগ থাকে না; কারন তাঁরা শিক্ষাগত সনদ বা জন্মনিবন্ধন সনদ দেখে সে অনুযায়ী বিবাহ রেজিষ্ট্রার করেন। স্থানীয় অনেকে জানান, পদাধিকার বলে ইউপি চেয়রম্যানগন ইউনিয়ন বাল্যবিবাহ নিরোধ কমিটির সভাপতি, অথচ তাদের দেওয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়েই বাল্যবিবাহ সম্পন্ন হয় বা হচ্ছে। তাই বাল্যবিবাহ শতভাগ নিরোধ করতে হলে ইউপি চেয়ারম্যানসহ সকল জনপ্রতিনিধিদের সতর্কতার সহিত জন্মনিবন্ধন সনদ প্রদান করতে হবে এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও এলাকার গন্যমান্যদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। এর পরেও যদি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ভোটের আশায় এমন সামাজিক অপরাধকে সহায়তা করেন, তাহলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা উচিত। তা-না হলে বাল্যবিবাহ শতভাগ রোধ করা সম্ভব নয়; সরাসরি এ ভাবেই নিজ নিজ মতামত পেশ করেন অনেক সুশীল ব্যাক্তি।
এলাকার কোন ছেলে-মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগে যেন বিবাহ না হয়, সে দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্য ও উপস্থিতিদের মৌখিক অঙ্গীকার করান ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী বিচারক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাহিদুর রহমান। ইউএনও জাহিদুর রহমান বলেন, ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখে নকলাকে জেলার প্রথম বাল্যবিবাহ মুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অতএব, এ উপজেলায় বাল্যবিবাহ কোন ভাবেই মেনে নেওয়া হবেনা। নকলা উপজেলায় বাল্যবিবাহের কোন ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট পরিবারের অভিভাবক, বর, আয়োজক ও নিকাহ রেজিষ্ট্রার বা কাজীদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। এক্ষেত্রে আইনি ভাবে কোন প্রকার আপোষ নেই। বাল্যবিবাহ নিরোধ ও বন্ধে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগসহ বাল্যবিবাহ নিরোধ কমিটির সংশ্লিষ্টরা সদা তৎপর রয়েছেন বলে জানান ইউএনও জাহিদুর রহমান।