শেরপুরে বিষমুক্ত সবজি বিক্রিতে আলাদা বিক্রয়কেন্দ্র দাবি কৃষকদের

প্রকাশিত: ১১:১০ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২১, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিষমুক্ত সবজির ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বিক্রির জন্য আলাদা বাজার কিংবা বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা। তাছাড়া কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য পরিবহন ও বাজারজাতকরণের সুবিধার্থে গ্রামীণ রাস্তাঘাটা সংস্কার ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নেরও দাবি জানানো হয়েছে। ২০ জানুয়ারি বুধবার দুপুরে শেরপুরে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন বিষয়ক এক উদ্বুদ্ধকরণ সভায় অতিথিদের কৃষকরা এমন দাবি তুলে ধরেন। পরিবেশ সুরক্ষা এবং নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে নাগরিক প্ল্যাটফরম জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটি ‘ভেজিটেবল বাস্কেট’ খ্যাত সদর উপজেলার বলাইরচর ইউনিয়নের জঙ্গলদী পশ্চিমপাড়া এলাকায় ওই উদ্ধুদ্ধকরণ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব প্রধান অতিথি এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোহিত কুমার দে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সভায় জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব তার বক্তব্যে কৃষকদের দাবিগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হলে বিষমুক্ত সবজির আবাদ বাড়াতে হবে। কীটনাশক ব্যবহারের পরিবর্তে ফসল উৎপাদনে জৈব বালাইনাশকের ব্যবহার করতে হবে। জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করতে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোহিত কুমার দে বলেন, আমরা আগে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর দিয়েছি। এখন খাদ্যে স্বয়ংস¤পূর্ণ হওয়ায় বিষমুক্ত নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। মানুষ এখন বাজারে গিয়ে ভেজালমুক্ত, বিষমুক্ত নিরাপদ খাদ্যসামগ্রীর খোঁজ করেন। এসব ফসলাদির ভালো দামও পাওয়া যায়।
সভায় জঙ্গলদী পশ্চিমপাড়া আইপিএম ক্লাব সভাপতি কৃষক দেলোয়ার হোসেন, কৃষানী ইশরাত জাহান, শিক্ষক রফিকুল ইসলাম আকন্দ প্রধান অতিথির দষ্টি আকর্ষণ করে তাদের বক্তব্যে বলেন, এলাকার কৃষকরা বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করছেন। কিন্তু কীটনাশক ব্যবহার করে উৎপাদিত সবজির সাথে একই বাজারে বিষুমক্ত বিক্রি হওয়ায় ভালো দাম মিলছে না। এজন্য বিষমুক্ত নিরাপদ সব্জীর জন্য আলাদা বাজার সৃষ্টি করা প্রয়োজন। খারাপ রাস্তাঘাটের কারণে উৎপাদিত সবজি বাজারজাত করণে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। সেজন্য তারা বিষমুক্ত সব্জীর জন্য আলাদা বাজার ও রাস্তাঘাট উন্নয়নের জন্য অতিথিদের নিকট দাবী জানান। অনুষ্ঠানে স্থানীয় কৃষকরা জেলা প্রশাসককে তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের বিষমুক্ত সব্জী উপহার প্রদান করেন।
সভায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর শেরপুর খামারবাড়ীর উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল বারি ও মো. ফজলুর রহমান কৃষকদের বিষমুক্ত সবজি চাষ বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেন। একইসাথে তারা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সকল ধরনের কারিগরি সহায়তা প্রদানের আশ^াস প্রদান করেন। বিষমুক্ত সব্জী চাষের জন্য সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি, ফসলের উপকারি ও অপকারী পোকা সম্পর্কে ধারণা প্রদান, কীটনাশকের পরিবর্তে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার, জৈব সার-কম্পোস্ট সার তৈরী এবং ব্যবহার, বীজ সংরক্ষণ ও উন্নত বীজ ব্যবহার সহ বিভিন্ন বিষয়ে কৃষাণ-কৃষাণীদের অবহিত করেন।
জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটির আহ্বায়ক শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ-এর সঞ্চালনায় ওইসময় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফিরোজ আল মামুন, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শিব শংকার কারুয়া, ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইয়াকুব আলী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। জেলা প্রশাসন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর এভায়রণমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইইডি) এর সহযোগিতায় আয়োজিত এ উদ্ধুদ্ধকরণ সভায় ওই এলাকার শতাধিক কৃষক-কৃষাণী অংশগ্রহণ করেন। পরে উপস্থিত কৃষক-কৃষানীদের মাঝে সিডলেস লেবু গাছের চারা এবং মাস্ক ও কম্বল বিতরণ করা হয়।