আশপাশের শহরগুলো দখলে নিয়ে কাবুলের দিকে এগোচ্ছে তালেবান

প্রকাশিত: ১:৩৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৪, ২০২১

অনলাইন ডেস্ক : আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় লগার প্রদেশের রাজধানী পুল-ই-আলম নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর ক্রমেই দেশটির রাজধানী কাবুলের দিকে এগোচ্ছে তালেবান। ১৪ আগস্ট শনিবার বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, শুক্রবার লগার প্রদেশের রাজধানী পুল-ই-আলম দখলে নেয় তালেবান যোদ্ধারা। একই দিনে তারা আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহার এবং কাছাকাছি থাকা আরেকটি শঞর লস্করগাহ অবরোধ করে। অন্যদিকে পশ্চিমে হেরাত শহরও অবরুদ্ধ করে রাখে তালেবান। এর মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশ প্রদেশের রাজধানীতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে তালেবান।
এদিকে তালেবানের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব দিয়েছে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি নেতৃত্বাধীন সরকার। রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দূরের গজনি প্রদেশের রাজধানী গজনির নিয়ন্ত্রণ কট্টরপন্থিরা নেওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়। কাতারে কাবুল সরকার ও তালেবান নেতাদের মধ্যে চলমান শান্তি আলোচনা থেকে এমন প্রস্তাব এসেছে। তবে সরকার বা ওই সশস্ত্র গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে এখনও কিছু জানানো হয়নি।
একদিকে দোহায় যখন শান্তি আলোচনা চলছে, অন্যদিকে দেশে পশ্চিমা-সমর্থিত সরকার হঠাতে একের পর এক প্রাদেশিক রাজধানী দখল করে নিচ্ছে তালেবান। মূলত বিদেশি সেনা প্রত্যাহার চূড়ান্ত করার মধ্য দিয়েই তালেবানের উত্থান ঘটে গেছে। তারা রাজধানী কাবুলের চারপাশের শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার গজনির দখল নেয় তালেবান। এখন ক্রমেই কাবুলের দিকে এগোচ্ছে কট্টরপন্থিরা। তবে আফগানিস্তান সংকটকে এখন অভ্যন্তরীণ ইস্যু হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র।
আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে হামলা চালিয়ে একের পর এক জেলা, শহর, সীমান্ত ক্রসিং ও প্রাদেশিক রাজধানী দখল করে নিচ্ছে তালেবান। তাদের ঠেকাতে রীতিমতো নাস্তানাবুদ হচ্ছে আফগান বাহিনী। এরই মাঝে শুক্রবার কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ গজনি দখলে নেয় তালেবান। শহরটি কাবুল-কান্দাহার মহাসড়ক-সংলগ্ন। রাজধানীর সঙ্গে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ এই সড়কপথ দিয়েই হয়ে থাকে। গজনির প্রাদেশিক কাউন্সিলের প্রধান নাসির আহমেদ ফকিরি বলেন, ‘শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান। তার মধ্যে গভর্নরের কার্যালয়, পুলিশ সদর দপ্তর ও কারাগার রয়েছে।’
তালেবানের পক্ষ থেকে আগেই দেশটির ৯০ শতাংশের বেশি দখলে নেওয়ার দাবি করা হয়েছে। তবে পশ্চিমা বিশ্লেষকরা বলছেন, আফগানিস্তানের মোট ভূখণ্ডের ৬৫ শতাংশে তালেবান তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।
আফগানিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ কান্দাহার, হেরাত ও লস্করগাহের নিয়ন্ত্রণ নিতে কয়েক দিন ধরে তুমুল লড়াই করছে তালেবান। মাজার-ই-শরিফ শহরেও হামলা জোরালো করেছে কট্টরপন্থিরা। এরই মধ্যে তালেবান বিদ্রোহীদের দ্রুত অগ্রগতির মুখে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়ালি মোহাম্মদ আহমদজাইকে অপসারণ করেছে সরকার।
এদিকে, ২০ বছর ধরে আফগান সরকারকে সাহায্য করছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলছেন, আফগানদের দায়িত্ব এখন সরকারকে নিতে হবে। তালেবানের হাতে সরকারের পতনের আশঙ্কাকে এখন দেশটির অভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রেসিডেন্টের কথাবার্তায় এমন আভাসই পাওয়া যাচ্ছে। তার কথায় এটা স্পষ্ট যে, কাবুল নিয়ে উৎসাহে ভাটা পড়েছে ওয়াশিংটনের। মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট বলেছেন, সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে কোনো অনুশোচনা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যে এটা পরিস্কার যে, তারা আফগানিস্তান সংকটকে আর আন্তর্জাতিক সমস্যা মনে করছেন না।
অন্যদিকে, আফগানিস্তানের চরম এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ইমরান খান বলেছেন, এ ‘বিশৃঙ্খলা’ সামলাতেই তার দেশকে পাশে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কাবুলের বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান কোনো পক্ষেই অবস্থান নেয়নি। তার ভাষ্য, এ মুহূর্তে দেশটিতে রাজনৈতিক সমাধান খুবই কঠিন।
যুক্তরাষ্ট্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০ বছর ধরে সংকট সমাধানের চেষ্টা করেও কোনো সুফল আসেনি। এখন শুধু জঞ্জাল পরিষ্কার করতেই ইসলামাবাদের কথা মনে পড়ছে ওয়াশিংটনের।