ইউরোপের স্বপ্ন দেখিয়ে ২৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ : প্রতারকের নামে আদালতের সমন

প্রকাশিত: ৮:১২ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৫, ২০২৫

রুহুল আমিন, জামালপুর প্রতিনিধি : ইউরোপে কর্মসংস্থানের প্রলোভন দিয়ে ভুয়া ওয়ার্ক পারমিট ও নকল এয়ার টিকিট ধরিয়ে দিয়ে দুটি দরিদ্র পরিবারের কাছ থেকে ২৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার এক যুবক। শুধু এই দুই পরিবার নয়, স্থানীয়দের অভিযোগ, এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন আরও অন্তত ২০ থেকে ২৫টি পরিবার। প্রতারক জাহিদ তালুকদারের (২৭) বিরুদ্ধে জামালপুর আদালতে দুটি পৃথক মামলা হয়েছে, যার ভিত্তিতে আদালত ইতোমধ্যে তার নামে সমন জারি করেছেন। প্রতারক জাহিদ তালুকদার উপজেলার আদারভিটা ইউনিয়নের কয়ড়া দক্ষিনপাড়া এলাকার বায়েজিদ তালুকদারের ছেলে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, প্রথম মামলার বাদী লিটন মিয়া একজন প্রবাস ফেরত শ্রমিক। জীবনের দীর্ঘ সময় মধ্যপ্রাচ্যে কাটিয়ে উপার্জনের অর্থ জমিয়ে রেখেছিলেন ছেলের ভবিষ্যতের জন্য। সেই সঞ্চয়ের পুরোটাই তিনি তুলে দেন জাহিদের হাতে ছেলে তাজুল ইসলামকে বেলারুশ পাঠাবেন এই আশ্বাসে। ধাপে ধাপে ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধের পর একদিন হাতে পান একটি এয়ার টিকিট এবং একটি ওয়ার্ক পারমিট। বলা হয় ২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ফ্লাইট। সেই খুশির আবহে ২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এয়ারপোর্টে হাজির হন তারা। কিন্তু ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা জানিয়ে দেন তাদের সব কাগজপত্র জাল।
একই রকম কাহিনি খোরশেদ আলমের। পেশায় কৃষক এই মানুষটি তার ছেলে রাকিব উদ্দিনকে বিদেশে পাঠাতে নিজের গরু বিক্রি করেন, কৃষিজমি বন্ধক রেখে দেন জাহিদের হাতে ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সেও হাতে পান একটি জাল টিকিট ও ভুয়া ওয়ার্ক পারমিট। স্বপ্নভঙ্গ হয় ঠিক একইভাবে ঢাকায় ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে।
প্রতারণা শুধু এখানেই থেমে থাকেনি। বিশ্বাস অর্জনের জন্য দুই পরিবারকে জাহিদ স্বাক্ষর করা দুটি চেক দেন। কিন্তু চেক জমা দিলে দেখা যায় অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। ব্যাংক সেই চেক ‘ডিজঅনার’ করে ফেরত দেয়। এরপর লিটন মিয়া ও খোরশেদ আলম গত ৬ অক্টোবর পৃথকভাবে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলা গ্রহণ করে জাহিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জাহিদের প্রতারনার ফাঁদে পড়েছেন আরও বহু পরিবার। কিন্তু অনেকেই লিখিত প্রমাণ না থাকায় মামলা করতে পারেননি। তাই তারা এই প্রতারক জাহিদের শাস্তি দাবি করেন।
ভুক্তভোগীদের লিটন মিয়া বলেন, আমি আমার ঘাম ঝরানো উপার্জনের সবটুকু দিয়েছি। আশেপাশ থেকে সুদে টাকা এনে দিয়েছি, বিশ্বাস ছিল ছেলে বিদেশে গিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে। এখন সব শেষ। না পারলাম ছেলেকে ইউরোপে পাঠাতে। না পারছি বাড়িতে একটু শান্তিতে থাকতে। যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলাম তারা এখন আমার বাড়িতে এসে বসে থাকে টাকার জন্য। তাই এখন আমি জাহিদকে দেয়ে টাকা ফেরত পেতে ধারে ধারে ঘুরছি।
খোরশেদ আলম বলেন, আমার গোয়ালের গরু বিক্রি করে ও আমার শেষ সম্বল কৃষি জমি বন্ধক করে টাকা জোগাড় করে জাহিদের হাতে তুলে দেয়। সেই টাকা আমাদের পরিবারের শেষ ভরসা ছিল। জাহিদের কারণে এখন ঘরে অন্ধকার। আমি সব হারিয়ে একেবারে পথে বসেছি।
খোরশেদ আলমের ছেলে রাকিব হোসেন বলেন, জাহিদ তালুকদার আমাকে রেলারুশ পাঠানো কথা বলে আমার বাবার কাছ থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা নিয়েছে। পরে আমাকে বিমান টিকিট ও বেলারুশের ওয়ার্ক পারমিট দেয় জাহিদ। ফ্লাইটের তারিখে এয়াপোর্টে ইমিগ্রেশনে গিয়ে জানতে পারি আমার হাতে থাকা সব কাগজ নকল। জাহিদ আমার সব স্বপ্ন নষ্ট করে দিয়েছে।
মাদারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল্লাহ সাইফ জানান, আমরা মামলার কাগজপত্র হাতে পেয়েছি। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কাউকে বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারণা করতে দেওয়া হবে না। সাধারণ মানুষ যেন সচেতন হয়, সে লক্ষ্যেও পুলিশ কাজ করছে।