গালিগালাজ কবিরা গুনাহ

প্রকাশিত: ১০:২২ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৭, ২০২১

গালিগালাজ কবিরা গুনাহগুলোর মধ্যে অন্যতম। একজন মুমিন ব্যক্তি তার মুখ দিয়ে অন্যকে গালিগালাজ দেবেন তা ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে কাম্য নয়। কেননা একজন মুমিনের মুখ পবিত্র। এ মুখ দিয়ে আহার করে শরীরে শক্তি জোগায়, কোরআন তিলওয়াত করে, আল্লাহতায়ালার জিকির করে, নিজ পরিবার ও সন্তানের সঙ্গে কথা বলে, নিজের সব প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে।

রসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন কখনো দোষারোপকারী, অভিশাপদাতা, অশ্লীলভাষী ও গালিগালাজকারী হয় না।’ তিরমিজি। আমরা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি তিনি আমাদের কথা বলার শক্তি দিয়েছেন। একটু ভাবী, আমাদের পাশে অনেকেই রয়েছেন তারা কথা বলতে পারেন না। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তারা মনের ভাব মুখ দিয়ে প্রকাশ করতে পারছেন না। অথচ আমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে কথা বলার নিয়ামত পেয়েও গালিগালাজ ও অশ্লীল ভাষায় কথা বলছি। এমনটি কখনো উচিত নয়।
দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, কথা বলার সময় দুষ্টামি করে অযথা গালিগালাজ ও অশ্লীল শব্দ মুখে ব্যবহার করে অন্যের সঙ্গে হাসিতামাশা করি। আবার অন্যের মা-বাবাকে উদ্দেশ করে গালি দিতেও অন্তর কম্পিত হয় না। অন্যের বাবা-মাকে গালি দিলে সে গালি নিজের বাবা-মায়ের ওপর অর্পিত হয় তা আমরা বুঝি না।
বুখারির বর্ণনায় এভাবে রয়েছে, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন অন্যের বাবাকে গালিগালাজ করে তখন সে নিজের বাবাকেও গালিগালাজ করে থাকে। আর অন্যের মাকে গালি দেয়, বিনিময়ে সে তার মাকেও গালি দেয়।’
বর্তমানে গালিগালাজ এবং অসভ্য ভাষায় কথা বলা অনেকের কাছে তেমন কিছু মনে হয় না। আবার অসভ্য ভাষায় কথা বলাকে মডার্ন ভাবা হয়। হাসিতামাশায় বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় অসভ্য ভাষায় কথা বলতে শোনা যায়। আবার অধীন কর্মচারীদের গালিগালাজ করাটা অনেকে তাদের পেশা বানিয়ে নিয়েছেন। উঠতে বসতে বিনা অপরাধে সব সময় কর্মচারীদের সঙ্গে অশ্লীল বাক্যে কথা বলেন অনেকে। তাদের সঙ্গে ঝগড়া সৃষ্টি করেন। যা একজন মুমিনের মুখ থেকে কাম্য নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে অন্যকে গালি দেওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ। আর তা যদি হয় বিনা অপরাধে তাহলে তা আরও বেশি অপরাধ।
আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘যারা বিনা অপরাধে ইমানদার পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয় তারা অবশ্যই মিথ্যা অপবাদ ও স্পষ্ট অপরাধের বোঝা বহন করে।’ সুরা আহজাব আয়াত ৫৮। গালিগালাজ কিংবা অশ্লীল বাক্যে কথা বলে কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে নিজের ভুল স্বীকার করে তাদের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। অন্যথায় মৃত্যুপরবর্তী সময়ে এর জবাবদিহি করতে হবে।
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের সম্মান নষ্ট করেছে অথবা কোনো বিষয়ে জুলুম করেছে সে যেন আজ দুনিয়ায় তার কাছে ক্ষমা চেয়ে হালাল করে নেয়। ওই দিন আসার আগে যেদিন দিনার ও দিরহাম কিছুই থাকবে না। তার যদি কোনো নেক আমল থাকে তবে তার জুলুমের পরিমাণ অনুযায়ী তা থেকে নিয়ে নেওয়া হবে। আর যদি তার কোনো নেকি না থাকে তবে তার সঙ্গীর পাপরাশি তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।’ মুসনাদে আহমাদ।
প্রিয় পাঠক! আসুন গালিগালাজ অসভ্য ভাষায় কথা বলা বন্ধ করি। পবিত্র মুখ দিয়ে পবিত্র কথা বলি। ওয়াদা করি গালি দিয়ে অযথা গুনাহ নিজের আমলে যোগ করব না। সর্বদা অন্যের সঙ্গে হাসিমুখে সভ্য ভাষায় কথা বলব। অন্যের উপকারে নিজেকে ব্যস্ত রাখব। এমন সব কথা মুখ দিয়ে বলব যে কথায় মহান আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রসুল (সা.) খুশি হন। আমার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে যেন অন্যরা বলে লোকটি ভালো ছিল, আমাদের সঙ্গে সুন্দর ভাষায় কথা বলত। এমন সব কথা বলব না যে কথায় অন্যদের হৃদয়ে ব্যথা দেওয়া হয়।
রসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি যার হাত ও জবান থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদে থাকে বা কষ্ট না পায়।’ অথবা ‘প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি যার হাত ও জবান দ্বারা অন্য মুসলমান শান্তি পায়।’ বুখারি।
লেখক : মো. আবু তালহা তারীফ, ​ইসলামবিষয়ক গবেষক