ঢাকা সফরে আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনলাইন ডেস্ক অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ১২:১৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৪, ২০২৫ দীর্ঘদিন স্থবির থাকা কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন মাত্রায় নিতে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে দ্বিপক্ষীয় সফরে ঢাকায় আসছেন। দুই দেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের মধ্যে এ বিষয়ে সম্মতি হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, সফরটি ২২ বা ২৩ আগস্টের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে, এবং এতে কয়েকটি চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। সফরের মাধ্যমে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার বার্তা দিতে চায় পাকিস্তান। বাংলাদেশ সরকারের এক ঊর্ধ্বতন কূটনীতিক জানিয়েছেন, চলতি বছরের এপ্রিলে দারের নির্ধারিত সফর সন্ত্রাসী হামলার কারণে স্থগিত হলেও বর্তমানে তা বাস্তবায়নের সব প্রস্তুতি চলছে। ওই সফর সামনে রেখেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে উভয় দেশের। সফরকালে ইসহাক দারের মূল বৈঠক হবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে। পাশাপাশি তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। নিউইয়র্কে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ফাঁকে ইসহাক দারের সঙ্গে তৌহিদ হোসেনের সাম্প্রতিক সাক্ষাতেও এই সফর নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে দার বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সহজকরণ এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণের আগ্রহ ব্যক্ত করেন। দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে—পাকিস্তান থেকে সরাসরি পণ্যবাহী জাহাজের বাংলাদেশে আগমন, ভিসা প্রক্রিয়ায় শিথিলতা এবং ভিসা ফি প্রত্যাহার। দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচলের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বিদেশিদের ভিসা প্রদানে নীতিগত ছাড় দেয়। গত এপ্রিলে দুই দেশের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যা প্রায় ১৫ বছর পর ছিল প্রথম। বৈঠকে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেন পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ। এটি দ্বিপক্ষীয় আলোচনার একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হয়। তবে এ সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি অমীমাংসিত ঐতিহাসিক ইস্যুগুলোও থেকে যাচ্ছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া, যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, সম্পদের হিস্যা এবং দুর্যোগকালে দেওয়া বিদেশি সহায়তার পাওনা ফেরত দেওয়ার মতো বিষয়গুলোর নিষ্পত্তির দাবি এখনও জোরালোভাবে আছে। এই সফরে এসব অমীমাংসিত ইস্যু তোলা হবে কি না—জানতে চাইলে এক কূটনীতিক জানান, বিষয়গুলো এজেন্ডার অংশ হিসেবে বিবেচনায় আছে। কোন বিষয় আলোচনা হবে, তা চূড়ান্ত হবে বৈঠকের সময়। তবে যা যা গুরুত্বপূর্ণ, সবই আলোচনায় থাকবার সম্ভাবনা রয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বাংলাদেশ আন্তরিক হলেও ইতিহাসকে ভুলে যাওয়ার কোনো ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি বলে বারবার জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘একাত্তরের প্রসঙ্গ বাদ রেখে সম্পর্ক উন্নয়নের কোনো বার্তা আমরা দিইনি। বরং আমরা বিশ্বাস করি, ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে হলেও একাত্তরের সত্যিটা সামনে রাখতে হবে।’ সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বৈঠকে ১৯৭১ সালের প্রসঙ্গ তোলেন ইউনূস, যা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এখনই পাকিস্তানের সঙ্গে ঐতিহাসিক ইস্যুগুলোর সমাধানে উপযুক্ত সময়। সংকটের মধ্যেও কূটনৈতিক সুযোগ তৈরি হয়েছে, এবং বাংলাদেশকে তা কাজে লাগাতে হবে। সাবেক এক হাইকমিশনার মন্তব্য করেন, ‘ভারতের সঙ্গে যেমন সম্পর্ক রাখা যায়, পাকিস্তানের সঙ্গেও তেমন সম্পর্ক রাখা সম্ভব—শুধু দরকার সাহসী ও কৌশলী কূটনীতি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে একটি স্থায়ী সমাধানের পথে এগোনো উচিত।’ Related posts:আজ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রীরোহিঙ্গাদের জন্য ২০ লাখ ইউরো অনুদান জার্মানিরশপথ নিলেন আ.লীগের নবনির্বাচিত এমপিরা Post Views: ৪৫ SHARES জাতীয় বিষয়: