শেরপুর জেলায় প্রাথমিক ঝড়ে পড়েছে ৩০ হাজার ২৭৩ শিশু

প্রকাশিত: ৬:৩৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২১

বিশেষ প্রতিনিধি : শেরপুর জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে পড়েছে ৩০ হাজার ২৭৩ শিশু। তন্মধ্যে ২১৫ জন শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বাইরে রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে পড়া ৮-১৪ বছর বয়সী শিশুদের আবারো পড়ালেখায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাদেরকে ‘আউট অব স্কুল চিল্ড্রেন’ কার্যক্রমের আওতায় পঞ্চম শ্রেনী পাশের পর দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মকর্মী হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। জেলায় আগামী ৩ বছরে ঝড়ে পড়া ৪ হাজার ২০০ শিশুকে ‘আউট অব স্কুল চিল্ড্রেন’ র্কসূচির আওতায় এনে পড়ালেখার সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।
শেরপুরে ২ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ‘আউট অব স্কুল চিল্ড্রেন’ শনাক্তকরণ কার্যক্রমের জেলা পর্যায়ের এক অবহিতকরণ সভায় এমন তথ্য জানানো হয়। ৪র্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ণ কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) আওতায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট আয়োজিত এ অবহিতকরণ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব। অনলাইনে জুম ক্লাউডে ভার্চূয়ালি অনুষ্ঠিত এ সভায় জেলা পর্যায়ের সরকারি-সেবরকারি কর্মকর্তা, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ, স্থানীয় স্টেকহোল্ডার, সাংবাদিক, শিক্ষা কর্মকর্তা, বাস্তবায়নকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ সংযুক্ত হন।
সভায় মুলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর উপ-পরিচালক সৈয়দ মোক্তার হোসেন। মুলপ্রবন্ধে বলা হয়, ২০২০ সালের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষাজরিপ অনুসারে জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় গমনোপযোগী শিশুর সংখ্যা ২ লাখ ২ হাজার ৯২৯ জন। তন্মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৭১৪ জন। বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ৯৯ শতাংশ হলেও ১ শতাংশ শিশু রয়েছে বিদ্যালয়ে ভর্তির বাইরে। তাছাড়া প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেনীর সমাপনী পরীক্ষা পর্যন্ত যেতে ১৩ শতাংশ শিশু ঝড়ে পড়ছে। অর্থাৎ জেলায় ঝড়ে পড়া শিশুর সংখ্যা ৩০ হাজার ২৭৩ জন। ঝড়ে পড়া এসব শিশু জড়িয়ে পড়েছে শিশুশ্রমে। অনেকেই শিকার হয়েছে বাল্যবিয়ের। শেরপুর জেলার ঝড়ে পড়ায় এসব শিশুর মধ্যে আগামী ৩ বছরে সদর ও ঝিনাইগাতী উপজেলায় ‘আউট অব স্কুল চিল্ড্রেন’ কর্মসূচি’র আওতায় ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৪ হাজার ২০০ শিশুকে নিয়ে প্রতি উপজেলায় একজন শিক্ষকের তত্বাবধানে ৩০ জন করে ঝরে পড়া শিশু নিয়ে ৭০টি করে শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। যাদের ৫ম শ্রেনী পাশ করার পর চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যাতে তারা নিরক্ষরতার অভিশাপমুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হতে পারে।
প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব আউট অব স্কুল চিল্ড্রেন কার্যক্রম বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। এজন্য ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থী বাছাইয়ে যাতে কোন ধরনের ক্রটি না হয় এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্র যেন এতে আবার ঢুকে না পড়ে, সেদিকে দৃষ্টি রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ওয়ালীউল হাসান-এর সভাপতিত্বে এ অবহিতকরণ সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক এটিএম জিয়াউল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোহিত কুমার দে। বিশেষ আলোচক হিসেবে সংযুক্ত হন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ ড. মো. আব্দুল কাইয়ুম, সহযোগি অধ্যাপক সৈয়দা আতিকুন নাহার, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইয়্যেদ এজেড মুরশিদ আলী। অন্যান্যের মাঝে আলোচনা করেন জেলা শিক্ষা অফিসার সৈয়দ মো. রেজুয়ান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফেরদৌসী বেগম, অধ্যক্ষ মাওলানা মো. ফজলুল হক, সাংবাদিক হাকিম বাবুল, বাস্তবায়নকারি সংস্থা ‘প্রত্যয়’ নির্বাহী পরিচালক রেবেকা ইয়াসমিন রেবা প্রমুখ।
সভায় জানানো হয়, ইতোমধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে পড়া শিশু জরিপ কাজ শুরু হয়েছে। জরিপ কাজ শেষে বাস্তবায়নকারি সংস্থার মাধ্যমে শীঘ্রই শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন, শিক্ষক নিয়োগ ও পাঠদান কার্যক্রম শুরু হবে।