শেরপুরে পৌর কর্মচারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে থানায় মামলা

প্রকাশিত: ৭:৫৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১০, ২০২২

শেরপুরে মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ (৪৫) ও মো. শরিফুল ইসলাম শরিফের (৩৫) নামে ২ যুবকের হাতে আরমান আলী (৩১) নামে এক পৌর কর্মচারীকে লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। এ নিয়ে ১০ আগস্ট বুধবার দুপুরে সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী কর্মচারী। এদিকে ওই ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার না করলে আগামী রবিবার থেকে কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে পৌর কর্মচারী সংসদ। ওই ২ ভাই শহরের গোপালবাড়ি এলাকার মো. আবু জাফরের ছেলে এবং পৌর মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটনের চাচাতো ভাই। আর ভুক্তভোগী পৌর কর্মচারী আরমান শহরের খরমপুর মহল্লার মৃত শফিল উদ্দিনের ছেলে।

অভিযোগে প্রকাশ, গত ৯ আগস্ট মঙ্গলবার শহরের গোপালবাড়ি এলাকার মেঘনা সিনেমা হল মার্কেটের কাছে পৌরসভার তরফ থেকে জাতীয় শোক দিবসের ব্যানার-ফেস্টুন টানানোকালে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে পৌরসভার বিদ্যুৎ সহকারী আরমান আলীর সাথে তর্কাতর্কিতে লিপ্ত হয় পৌর মেয়রের আপন চাচাতো ভাই আরিফ ও শরিফ। এক পর্যায়ে তারা কর্তব্যকাজে বাঁধাসহ দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এরপর পাপ্পু ও শুভ নামে ২ কর্মচারীকে নিয়ে আরমান শহরের নবীনগর হাজীর মোড়ে ব্যানার-ফেস্টুন টানিয়ে ফেরার পথে ওই ২ ভাই মোটরসাইকেলযোগে সেখানে পৌঁছে পৌরসভার ট্রাকের সামনে দাঁড়ায়। এক পর্যায়ে তারা দুজন আরমানকে গাড়ি থেকে টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নেয় এবং কর্তব্যরত কর্মচারীদের বাধার মুখে তারা আরমানকে বেধড়ক মারপিটে লাঞ্ছিতসহ তাকে হত্যাচেষ্টা চালায়। ওই অবস্থায় সঙ্গীয় ২ কর্মচারীসহ আশেপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে। পরে তারা পৌরসভা কার্যালয়ে পৌঁছলে একইদিন বেলা আড়াইটার দিকে আরিফ ও শরিফ সেখানে পৌঁছে ডাকাডাকি করে আরমানকে না পেয়ে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সামনে প্রকাশ্যে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। ওই ঘটনায় সেদিন সরকারি ছুটি থাকায় বুধবার সকাল থেকেই পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দুপুরে পৌর কর্মচারী সংসদের এক জরুরি সভায় সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ওই ২ জনকে দ্রুত গ্রেফতার না হলে আগামী রবিবার থেকে লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা দেয় কর্মচারী সংসদ। সংগঠনের সভাপতি রফিকুজ্জামান ঝন্টুর সভাপতিত্বে সভায় জেলা পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারী এসোসিয়েশনের সভাপতি আবু লায়েস মোঃ বজলুল করিম, সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহম্মেদ ও কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মুসলিম উদ্দিনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পৌর কর্মচারী সংসদের সিনিয়র সহ-সভাপতি নুর-ই-আলম চঞ্চল জানান, আরিফ এর আগেও এটিএম মোতাসিম বিল্লাহ নামে এক পৌর কর্মচারীকে লাঞ্ছিত করে ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দিয়ে পার পেয়েছে। কিন্তু ওই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়ার কারণেই সে ফের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে সাহস পেয়েছে। সে আরিফ ও তার ছোটভাই শরিফের শাস্তির দাবি করে।বিষয়টি নিশ্চিত করে পৌর কর্মচারী সংসদের সভাপতি রফিকুজ্জামান ঝন্টু ও সাধারণ সম্পাদক এসএম রুহুল আমিন শোকের মাসে শহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যানার-ফেস্টুন লাগানোর কর্তব্যকাজে বাধা ও কর্মচারী আরমানকে লাঞ্ছিতকরণসহ হত্যাচেষ্টার নিন্দা জানিয়ে দ্রুত জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি করেন। পৌর মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন দেশের বাইরে থাকায় ঘটনার বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র মো. নজরুল ইসলাম জানান, শোকের মাসে বঙ্গবন্ধুর ব্যানার টানানোকালে পৌর কর্মচারীকে কর্তব্যকাজে বাধা ও মারপিটের ঘটনা খুবই দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। আমরা পৌর কর্মচারীদের সাথে সহমত পোষণ করেছি। ওই দুস্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে বিষয়টি আইনগতভাবেই দেখা হবে।
অন্যদিকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে আরিফুল ইসলাম আরিফ দাবি করেন, তার ভাই শরিফ কিছুটা প্রতিবন্ধী এবং সে পৌর পানির লাইনের ট্যাপ থেকে পানি নেওয়ার সময় পৌর কর্মচারী আরমান ওই পানিতে হাত ধুতে গেলে উভয়ের মধ্যে তর্কাতর্কি ও বাদানুবাদ হয়েছে। পরে বিষয়টি আমি তাকে জানাতে গেলে সে আমার সাথেও খারাপ ব্যবহার করেছে। পরে পৌরসভায় গিয়ে সকলকে অবহিত করেছি মাত্র।
এ ব্যাপারে সদর থানার নবাগত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ বছির আহমেদ বাদল বলেন, ওই ঘটনায় পৌর কর্মচারী সংসদের সভাপতি-সম্পাদকসহ ভুক্তভোগী থানায় এসে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়ে গেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।