শরিকদের জন্য ৭টি আসন ছেড়ে দিচ্ছে আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ১০:০৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০২৩

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের আসন ছাড়ের বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। কাকে কোন আসন ছেড়ে দেওয়া হবে তা আজ কিংবা আগামীকালের মধ্যে শরিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। তবে ছাড় দেওয়া আসনেও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মুখোমুখি হতে হবে তাঁদের।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্রে জানা গেছে, শরিকদের আসন ছাড়ের বিষয়টি গতকাল বুধবার চূড়ান্ত করা হয়েছে। ওই দিন রাতে ছাড় দেওয়া আসনের তালিকা জোটের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুকে জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সেখানে জানানো হয়, বর্তমান সংসদে ১৪ দলীয় জোটের চারটি দলের আটজন সংসদ সদস্য থাকলেও এবার তিনটি দলের সাতজনকে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন পর্যন্ত বাদের তালিকায় আছেন চট্টগ্রাম-২ আসনে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি।
আমির হোসেন আমু বলেন, মোটামুটি আগের মতোই চূড়ান্ত হয়েছে। এখানে ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদকে তিনটি করে ও জেপি একটি।
বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের আটজন সংসদ সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে—ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের তিনজন করে। আর জাতীয় পার্টি-জেপি ও তরিকত ফেডারেশনের একজন করে সংসদ সদস্য রয়েছেন।
যার মধ্যে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর (কুষ্টিয়া-২) আসন ছাড়া বাকি সাতটি প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে শরিকদের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হয়েছে। গত ৪ ডিসেম্বর ১৪ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন জোট প্রধান শেখ হাসিনা। সেখানে আসন ভাগের বিষয়ের আলোচনা সমন্বয় করতে জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর তিনিসহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কয়েক দফা বৈঠক করেন।
সূত্রে জানা গেছে, শরিকদের সর্বসাকল্যে সাতটি আসনে ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ১৪ দলীয় জোটের শরিক তিনটি দলকে সাতটি। ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছাড় দেওয়ার তালিকায় আছে বরিশাল-৩ (রাশেদ খান মেনন), রাজশাহী-২ (ফজলে হোসেন বাদশা) ও সাতক্ষীরা-১ (মুস্তফা লুৎফুল্লাহ) আসন। এসব আসনে দলীয় প্রতীকের বদলে ওয়ার্কার্স পার্টি নৌকায় নির্বাচন করবে।
জাসদকে ছাড়ের তালিকায় আছে কুষ্টিয়া-২ (হাসানুল হক ইনু), বগুড়া-৪ (এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন) ও লক্ষ্মীপুর-৪ (মোশাররফ হোসেন)। জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতারকে (ফেনী-১) আসনে ছাড় না দিয়ে নির্বাচনের পরে তাঁকে সংরক্ষিত আসনে এমপি বনানো হতে পারে বলে সূত্রে জানা গেছে।
জাতীয় পার্টি-জেপিকে পিরোজপুর-২ (আনোয়ার হোসেন মঞ্জু) ছাড় দেওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘শরিকদের সমর্থন দিয়ে নৌকা প্রতীক দেওয়া হলেও তাদেরকে আমাদের স্বতন্ত্র প্রার্থীর মুখোমুখি হতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই বিজয়ী হয়ে আসতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের দল তাদের কোনো ধরনের ছাড় দেবে না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়ার্কার্স পার্টির এক পলিটব্যুরো সদস্য বলেন, ‘আসন ভাগাভাগি এক ধরনের চূড়ান্ত হয়েছে। আমাদের বর্তমান তিনজন সংসদ সদস্যকে আওয়ামী লীগ ছাড় দেবে। এটা কালকে (শুক্রবার) বিকেলে বা পরশুদিন (শনিবার) সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা আসবে। এর আগে আমি কোনো কথা বলতে চাই না।’
আওয়ামী লীগ কি নৌকা প্রতীক দেওয়ার পাশাপাশি দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সরাবে—এমন প্রশ্নের জবাবে ওই নেতা বলেন, ‘আমাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। তবে মেনন ভাইয়ের সঙ্গে লাঙলের (বর্তমান এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু) প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে।’
জাতীয় পার্টি-জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, ওনারা (আওয়ামী লীগ) বলেছেন জানাবেন, কিন্তু এখনো জানায়নি। তাই কিছু বলতে পারব না।
আসন ভাগাভাগির বিষয়ে জানতে চাইলে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ১৪ দলীয় জোটের আসন ভাগাভাগির বিষয়টি এখনো কোনো সমাধান হয়নি। সেটা হলে জানাব।
‘দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের আসন বণ্টন, সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচন পরবর্তী বিএনপি-জামায়াতসহ বিদেশিদের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আগামীকাল শুক্রবার সকালে ধানমন্ডির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি। জানতে চাইলে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি আজকের পত্রিকাকে বলেন, যা বলার কালকেই (শুক্রবার) বলব।