পাকিস্তানে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত : নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইন ডেস্ক অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ৬:১০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৮, ২০২৫ ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। প্রতিবেশী দেশ দুটির পাল্টাপাল্টি অবস্থান নতুন করে যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করেছে। এরইমধ্যে সীমান্তে একাধিকবার গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক পক্ষগুলো উভয় দেশকে শান্ত থাকার এবং সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। তবে ভারত এখন সংঘাত এড়াতে নয় বরং পাকিস্তানে সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে — এমনটাই জানিয়েছে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। প্রতিবেদন অনুসারে, ২২ এপ্রিলের পর থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশ্বের অন্তত এক ডজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে এ প্রচেষ্টা মূলত পাকিস্তানের সাথে উত্তেজনা কমানোর জন্য নয়, বরং সামরিক পদক্ষেপে তাদের সমর্থন নিশ্চিত করতে করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি এক ভাষণে মোদি পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করেই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে এবং দোষীদের কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে যে, ভারত সরাসরি সামরিক পদক্ষেপের দিকে এগোতে পারে। খবরে বলা হয়, কাশ্মীরে পরিস্থিতি এখনও উত্তেজনাপূর্ণ। ভারতীয় বাহিনী ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছে এবং হামলার সাথে জড়িতদের সন্ধানে অভিযান চালাচ্ছে। একই সঙ্গে ভারত ১৯৬০ সালের ইন্দাস ওয়াটারস চুক্তির আওতায় পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত পানির প্রবাহ বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে এবং পাকিস্তানি কূটনীতিক ও নাগরিকদের ভারত ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। পাকিস্তানও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তারা দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন চুক্তি, বিশেষ করে সিমলা চুক্তি (যা কাশ্মীর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ রেখা পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ), স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। একইসঙ্গে পাকিস্তান স্পষ্টভাবে ভারতের অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, তাদের এই হামলার সাথে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, হামলার পাঁচ দিন পরেও ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নাম প্রকাশ করেনি বা বা পাকিস্তানের জড়িত থাকার অকাট্য প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। ভারতের কর্মকর্তারা কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ে পাকিস্তানের অতীতে সন্ত্রাসীদের মদদদানের কথা উল্লেখ করলেও তা আন্তর্জাতিক মহলের সামনে প্রকাশ করা হয়নি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হয়তো ভারত আরও তথ্য সংগ্রহ করছে অথবা আন্তর্জাতিক অস্থিরতার সুযোগে তারা ব্যাখ্যা না দিয়েই পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইরান এবং সৌদি আরব উভয় পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। ইরান মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় শক্তিগুলোর মনোযোগ বর্তমানে অন্যান্য সংকটের দিকে হওয়ায়, ভারত কার্যত কোনো আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়াই এগোচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টায় সমর্থন প্রকাশ করেছে। তবে এই সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৯ সালে যখন কাশ্মীরে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর বড়সড় হামলা হয়েছিল, তখনও ট্রাম্প প্রশাসন প্রথমে ভারতের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল এবং পরে যখন ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে গিয়েছিল, তখনই সংযমের আহ্বান জানিয়েছিল। ২০১৯ সালের কাশ্মীর সংঘর্ষের প্রসঙ্গ টেনে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেবারও ভারত হামলার জবাবে পাকিস্তানে বিমান হামলা চালিয়েছিল, যার পরিণতিতে পাকিস্তান ভারতের একটি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছিল এবং পাইলটকে বন্দি করেছিল। বিশেষজ্ঞ ড্যানিয়েল মার্কি জানিয়েছেন, এবার ভারত ‘দৃষ্টান্তমূলক’ কিছু করতে পারে — অর্থাৎ তিনি বড় ধরনের সামরিক প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানও ঘোষণা দিয়েছে, ভারত যদি হামলা চালায়, তারা তার চেয়ে শক্তিশালী জবাব দেবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের এমন উত্তপ্ত অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলের দায়িত্ব এখন, উভয় পক্ষকে সংযম অবলম্বন করতে বাধ্য করা এবং যুদ্ধ এড়ানোর জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা। Related posts:ভারত সরকারের বিরুদ্ধে হোয়াটসঅ্যাপের মামলাআকস্মিক মহড়ায় ইরানি সেনাবাহিনীইরাকি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বিস্ফোরকভর্তি ড্রোন হামলা Post Views: ৭২ SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: