শ্রীবরদীতে পানি ও তেলে শিশু লাবীবের ‘ফুঁ’ নিতে হাজার হাজার মানুষের ঢল অনলাইন ডেস্ক অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ৪:১৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৯, ২০২৫ পানি ও সরিষা তেলের বোতলে চার বছরের এক শিশুর ফুঁ নিতে হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমাচ্ছেন। কারণ, তাদের বিশ্বাস ওই ‘ফুঁ’ দেয়া পানি পান করে ও তেল ব্যবহার করে জটিল ও কঠিন রোগ থেকে মুক্তি মিলছে। প্রতিদিন শিশুর বাড়িতে ভিড় বাড়ছেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে মানুষের মুখে মুখে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ছে দূরদূরান্তে। ছুটে আসছেন উৎসুক মানুষ। কেউ বলছেন অলৌকিক, কেউ বলছেন ফাঁদ। এ ঘটনা ঘটেছে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার উত্তর লঙ্গরপাড়া গ্রামে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শ্রীবরদী উপজেলার লঙ্গরপাড়া বাজারের দর্জি ও কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াহাবের চার বছরের ছেলে শিশু লাবীবের ঝাড়ফুঁকের জন্য কয়েকশ’ মানুষ অপেক্ষা করছেন। আর সেই শিশু খেলা করছে। কিন্তু সময় না হওয়ায় পানি বা তেলে ফুঁ দিচ্ছে না শিশু। কারণ, প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে দু’বেলা করে ‘চিকিৎসা’ দেয় শিশুটি। এই দুই সময় ছাড়া ফুঁ দেয় না শিশু। শিশুর স্বজনেরা জানান, প্রায় দুই মাস আগে লাবীব তার মাকে পার্শ্ববর্তী জঙ্গল থেকে একটি গাছের পাতা ছিড়ে এনে দিয়ে ব্যথা জায়গায় সেই পাতা মালিশ করতে বলে। প্রথমে তার মা বিশ্বাস না করলে, পরবর্তীতে ছেলের জেদে ওই পাতা পায়ে মালিশ করার কিছুক্ষণ পর দীর্ঘদিনের পায়ের ব্যথা ভালো হয়ে যায়। এভাবে প্রতিবেশীদের অনেকের রোগমুক্তি হলে বিষয়টি দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর রোগমুক্তির আশায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এসে ভিড় করছেন ওই বাড়িতে। শিশুর বাবা আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ‘আমার ছেলে অনেক রোগীকে সুস্থ করেছে। পানি ও তেলে শুধু ‘ফুঁ’ দেয় লাবীব। এরপর রোগীদের ‘আল্লাহু আকবার’ বলে পানি পান ও তেলে মালিশ করতে হয়। তাহলেই রোগীটি সুস্থ হয়ে যায়। লাবীবের এই ক্ষমতা আল্লাহ প্রদত্ত। প্রথমে সে তার মাকে চিকিৎসা করে ভালো করেছে। পরে সুস্থ করেন এলাকার আঘাতপ্রাপ্ত স্থানীয় কয়েক জন ফুটবল খেলোয়াড়কে। ঘটনা জানাজানি হলে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। আল্লাহর নাম নিয়ে আমার ছেলে ফুঁ দিয়ে দিলে অনেকেই সুস্থ হয়ে যায়। তাই হাজারও লোক আসে আমাদের বাড়িতে। প্রতিদিন দুই বেলা ফুঁ দেয় আমার ছেলে।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ১০টা এবং বিকেল ৫টা থেকে দুই ঘণ্টা, দুই ধাপে চলে ঝাড়ফুঁকের কার্যক্রম। ঝাড়ফুঁক নিতে আসা রোগীদের মধ্যে নারীদের আধিক্য চোখে পড়ার মতো। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নারী ও পুরুষ রোগী এবং রোগীর স্বজনরা জানান, অনেকেই এই শিশু কবিরাজের পানিপড়া বা তেলপড়া দিয়ে সুস্থ হয়েছেন শুনেছি। তাই আমরাও এসেছি স্বজনদের রোগমুক্তির আশায়। আমাদের বিশ্বাস আশা করি আমরাও সুস্থ হতে পারবো। শেরপুর শহরের মীরগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা খুকি বেগম বলেন, ‘আমার মা অসুস্থ। মেলা ডাক্তার দেহাইছি। কোন কাম হই নাই। এহন এই শিশুর কথা হুইনা পানি ও তেল নিয়ে আইলাম। হুনতাছি বালা হবো।’ রোগী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি দ্বিতীয়বারের মতো স্ট্রোক হবার পর একেবারে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। লাঠি ছাড়া হাঁটতে পারতাম না। এই শিশু কবিরাজের চিকিৎসায় আমি এখন সুস্থ। আমি এখন লাঠি ছাড়া দ্রুত হাঁটতে পারি।’ আরেক রোগী আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘আমার চাচাতো ভাইয়ের কঠিন রোগ হয়েছিল। বহু ডাক্তার দেহাইছি, কোন কামই হই না। খালি টেহা আর টেহা গেছে। খবর হুইনি এইহানে আইছিলাম দুইদিন আগে। পরে বাচ্চাটা পানি ও তেল পড়ে দিছিলো, এখন অনেকটা সুস্থ।’ শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এ.এস.এম মফিদুল ইসলাম বলেন, শিশুটিকে নিশ্চয়ই বড় কেউ এটা করার জন্য বলেছে। মেডিকেল সাইন্সে ঝাড়ফুঁকের কোনো ভিত্তি নেই। আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো। শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জাবের আহমেদ বলেন, ঘটনাটি অবৈজ্ঞানিক এবং কুসংস্কার। ঠিকানাসহ অভিযোগ পেলে উপজেলা প্রশাসন যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেবে। Related posts:শেরপুরে এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের অগ্রগতি ও অর্জন বিষয়ে অবহিতকরণ কর্মশালাশ্রীবরদীতে প্রেমিকার বাড়ির লোকজনের হামলায় যুবক নিহতশেরপুরে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে স্মরণসভা Post Views: ৫৮ SHARES শেরপুর বিষয়: