ঝিনাইগাতী মহিলা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের সেই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু অনলাইন ডেস্ক অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ১০:৪৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ৯, ২০২০ স্টাফ রিপোর্টার : শেরপুরের ঝিনাইগাতী মহিলা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের খবর প্রকাশের পর শেরপুর জেলা প্রশাসকের গঠিত তদন্ত কমিটি ৯জুলাই তদন্তকাজ শুরু করেছেন। এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান ঝিনাইগাতী উপেজলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ কলেজের অফিস গৃহে এ তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তদন্তানুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কলেজের গভর্নিং বডির বর্তমান ও সাবেক সভাপতি, সদস্য, অভিযুক্ত অধ্যক্ষ ও অভিযোগকারী শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষক এবং কর্মচারীদের সঙ্গে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলেন। এছাড়া তিনি তদন্তানুষ্ঠান থেকেই মোবাইলে গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রকৌশলী একেএম ফজলুল হক চাঁনের সাথেও কথা বলেন এবং তার মতামত গ্রহণ করেন। ওইসময় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজ, প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তন ও বর্তমান অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তদন্তানুষ্ঠানে অভিযোগকারী ২ শিক্ষক, কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিসহ গভর্নিং বডির সাবেক ২ সভাপতি, সাবেক সদস্য, শিক্ষক ও সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীসহ অনেকেই অধ্যক্ষের সীমাহীন দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরেন। অন্যদিকে অধ্যক্ষ খলিলুর রহমান কলেজের নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজ-পত্রসহ রেজুলেশন, শিক্ষক হাজিরা খাতা এবং বিতর্কিত সনদ প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়ে দাবি করেন, সেগুলো হারিয়ে গেছে। এ নিয়ে তদন্তানুষ্ঠানে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হলেও পরে তদন্ত কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে তা প্রশমিত হয়। তবে এতদিন অধ্যক্ষের তদবিরে শিক্ষক বা অন্যদের মধ্যে যারা ছিলেন নীরব, তাদেরকেও তদন্ত কর্মকর্তার জিজ্ঞাসাবাদে মুখ খুলতে দেখা গেছে। অভিযোগকারী কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক পি.আর মুহম্মদ রাহুল বলেন, তিনি ২০১২ সালে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে কলেজের ডিগ্রি শাখায় ইংরেজির প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। গত ৮ বছর ধরে কোনো বেতন ছাড়াই শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন তিনি। তাছাড়া কলেজের পরিচালনা পর্ষদে শিক্ষক প্রতিনিধি এবং জাতীয় নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্বও পালন করেছেন। গত ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে এমপিও হওয়ার পর তাকে অধ্যক্ষ নিজের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান। এমপিওর তালিকায় নাম তুলতে চাইলে উপরের অফিসে ১৫ লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানান তিনি। কিন্তু অধ্যক্ষের ওই প্রস্তাব তিনি নাকচ করায় টাকার বিনিময়ে দীর্ঘ ১৭/১৮ বছর যাবত ময়মনসিংহে অবস্থানকারী আবু হানিফ নামে একজন অচেনা ব্যক্তিকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া তিনি অধ্যক্ষের স্ত্রীসহ আরও একাধিক শিক্ষকের জাল সনদে চাকরি গ্রহণ, আরও একাধিক পদে অচেনা ও অন্যত্র চাকরিজীবীদের এমপিও তালিকা পাঠানোসহ অন্যান্য অভিযোগও দালিলিক প্রমাণসহ তুলে ধরেন। দর্শন বিভাগের প্রভাষক যমুনা খাতুন বলেন, গত মার্চ মাস থেকে তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। এরই মধ্যে তিনি জানতে পেরেছেন, ফুলপুর উপজেলার কাতুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে অধ্যক্ষ দর্শন বিভাগে চাকরি দিয়েছেন। তিনি ২০১৫ সাল থেকে কলেজে পড়াচ্ছেন। অথচ আফরোজা আক্তার নামে অন্য একজন এখন কলেজের শিক্ষক! তিনিও তার নিজের বিষয়সহ অধ্যক্ষের অন্যান্য দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করে তার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। অধ্যক্ষের দুর্নীতির বিষয়ে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা সাংবাদিকদের বলেন, এ কলেজের অধ্যক্ষ খলিলুর রহমান একজন নিয়োগ বাণিজ্যকারী, জাল-জালিয়াতিকারী, তার স্ত্রী এইচএসসি পাশ, অথচ তাকে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক রাহুল ও যমুনা নিয়োগ পরীক্ষায় পাশ করার পরে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্ত তাদের নাম এমপিওভুক্ত না করে টাকার বিনিময়ে অন্য ২ জনের নাম অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। তিনি ওই অধ্যক্ষের অনিয়মের জন্য দ্রুত শাস্তির দাবি জানান। গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি একেএম বেলায়েত হোসেন বলেন, ওই অধ্যক্ষ একজন জামায়াত সমর্থক লোক ও সাবেক শিবির নেতা। ইতোপূর্বে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য এবং তৎপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রেজুলেশন গ্রহণের পরও আমাদের কোন কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তির দুর্বলতায় তিনি পার পেয়ে যাওয়ায় আজ নারী শিক্ষার প্রসারে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাঙ্গন থেকেই দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে। তার সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির সঠিক ও সুষ্ঠু তদন্তের পাশাপাশি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে খোদ প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্বই একদিন হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়বে। কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম বলেন, অভিযাগ প্রমাণিত হলে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে তদন্তকারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তদন্ত কাজ শুরু করেছি। অভিযোগকারী ২ শিক্ষক ও অধ্যক্ষের ব্যাপারে আজ কলেজের অন্য শিক্ষকদের কাছে লিখিত বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। গভর্নিং বডির সাবেক ও বর্তমান সভাপতিদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের লিখিত বক্তব্য চাওয়া হয়েছে। লিখিত বক্তব্য পেলেই জেলা প্রশাসকের কাছে সমস্ত কাগজপত্রসহ প্রাপ্ত তথ্য পাঠানো হবে। পরে জেলা প্রশাসক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ওই কলেজের অধ্যক্ষ খলিলুর রহমানের সীমাহীন দুর্নীতির বিষয়ে এমপিওবঞ্চিত ২ নিয়মিত শিক্ষক স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, দুদক ও ময়মনসিংহের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের বিষয়ে পত্রপিত্রকায় খবর প্রকাশিত হলে জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব ওই বিষয়ে দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদকে নির্দেশ দেন। Related posts:শ্রীবরদীতে ছুরিকাঘাতে কৃষক নিহত, ঘাতক গ্রেফতারনকলায় নিজ বসতঘরে ঝুলছিলো মানুষিক ভারসাম্যহীন যুবকের মরদেহঝিনাইগাতীতে ভূমি সেবা সপ্তাহ-২০২৩ উদ্বোধন Post Views: ৩৬২ SHARES শেরপুর বিষয়: