জামালপুরে যমুনার পানি বিপদসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার উপরে ॥ তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট অনলাইন ডেস্ক অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ৯:৩০ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৫, ২০২০ জামালপুর প্রতিনিধি ॥ জামালপুরে বন্যার পরিস্থিতি চরম অবনতি হয়েছে। ১৫ জুলাই বুধবার দুপুর পর্যন্ত যমুনার বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পউবো) জামালপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ এবং পানি মাপক গেজ পাঠক আব্দুল মান্নান। এদিকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সরিষাবাড়ি, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ, মেলান্দহ, দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ ও জামালপুর সদরের চরাঞ্চলে র নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট। কোথায় কোথায় পানির তোড়ে রাস্তা ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। জামালপুরের মাদারগঞ্জে মহিষবাথান – মাহমুদপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৫০ মিটার ভেঙ্গে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করছে ১০ টি গ্রামে। নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম। বন্যার পানিতে দেওয়ানগঞ্জ-তারাটিয়া-সানন্দবাড়ি পাকা সড়কে সিএনজি ট্রাক বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়াও ডাংধরা ইউনিয়নের কাউনিয়ারচর টু জোয়ানেরচর রাস্তা পানির স্রোতে ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। হারুয়াবাড়ী আদর্শপাড়া মেইন রাস্তা, সানন্দবাড়ী বাজারের দক্ষিণ পাশে, জিঞ্জিরাম সেতুর দক্ষিণ পাশে, মিতালী বাজারের উত্তর পাশে, ঝালোরচর বাজারের দক্ষিণ পাশেসহ দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন রাস্তা পানিতে ডুবে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়ায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ও ভূমি অফিসসহ কয়েকটি সরকারি দফতর। বিভিন্ন বাজারে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় ভোগান্তিতে রয়েছে ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা। সব মিলিয়ে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দেওয়ানগঞ্জ পৌর এলাকা ও ৮ ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। সরিষাবাড়ির আওনা ইউনিয়নের কুমারপাড়ার ৯ ও ৭নং ওয়ার্ডে একটি বেরিবাধ ভেঙে গেছে। এতে ওই এলাকার জনসাধারন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এদিকে দেওয়ানগঞ্জ বাজার রেলস্টেশনে বন্যার পানির কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। তবে তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেন দু’টি ইসলামপুর পর্যন্ত চলাচল অব্যাহত রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জামালপুর রেল স্টেশনের ভার প্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার শেখ উজ্জ্বল মাহমুদ এবং দেওয়ানগঞ্জ বাজার স্টেশন মাস্টার আব্দুল বাতেন। তারা জানান, ইসলামপুর পর্যন্ত ট্রেন আসবে এবং ইসলামপুর স্টেশন থেকেই ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবে। তারা আরো বলেন, এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে জামালপুর থেকেই ট্রেন ঢাকা ফেরত যাবে। অপরদিকে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানী ইউনিয়নের মন্ডল বাজার অদুরে পাকা রাস্তাটি নদীতে বিলিন হচ্ছে। জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ি, বকসিগঞ্জ ও জামালপুর সদর ৭টি উপজেলার ৬৮টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ৪০টি ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ৫ লাখ মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। এদিকে ইসলামপুর উপজেলার সাপধুরী, বেলগাছা, চিনাডুলী, কুলকান্দি ইউনিয়নের যমুনার দ্বীপ চরের লোকজন নৌকার অভাবে তাদের ঘরের ধান চাল এমনকি গৃহপালিত পশু নিরাপদ স্থানে নিতে পারছে না বলে বেলগাছা ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক জানিয়েছেন। বন্যা কবলিত এলাকার গুলোর মধ্যে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা চুকাইবাড়ী, চিকাজানী, বাহাদুনাবাদ, চর আমখাওয়া, দেওয়ানগঞ্জ সদর ইউনিয়ন ও দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভা, ইসলামপুর উপজেলার পার্র্থশী কুলকান্দি, বেলগাছা, চিনাডুলী, নোয়ারপাড়া, ইসলামপুর সদর, পলবান্দা গোয়ালের চর, গাইবান্দা, চরগোয়ালীনী, চরপুটিমারী ইউনিয়ন ও ইসলামপুর পৌরসভা। মেলান্দহ উপজেলার, কুলিয়া, দুরমুঠ, মাহমুদপুর, শ্যামপুর, নাংলা, আদ্রা,ফুলকোচা, ঝাউগড়া ও ঘোষেরপাড়া ইউনিয়ন। মাদারগঞ্জ উপজেলার গুনারীতলা জোড়খালী, বালিজুড়ি ও চর পাকেরদহ ইউনিয়ন। সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা, আওনা, পোগলদিঘা, সাতপোয়া ও কামরাবাদ, ভাটার ইউনিয়ন। বকশিগঞ্জ উপজেলার সাদুরপাড়া, মেরুরচর, বগারচর, ইউনিয়ন, জামালপুর সদর উপজেলার লক্ষীরচর,তুলশিরচর, লক্ষ্মীরচর, মেস্টা, কেন্দুয়ার ইউনিয়নের আংশিক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষসহ গৃহপালিত পশু গরু, মহিষ, ছাগল হাঁস, মরগি পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় বন্যা কবলিত মানুষগুলো উচু বাঁধে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। বানভাসিদের শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধা পানির, গো খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এদিকে চলতি বন্যায় জামালপুর জেলায় বন্যার পানিতে ডুবে এ পর্যন্ত প্রায় ১৩জন মারা গেছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী বলেন, বন্যার্ত মানুষের জন্য এরমধ্যে সারা জেলায় ৩১০ মেট্রিক টন চাল, ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ৪ হাজার শুকনা খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আরো ত্রাণ রয়েছে যা চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেয়া হবে। জামালপুর সিভিল সার্জন ডা. প্রণয় কান্তি দাস জানান, এ পর্যন্ত বন্যাকবলিত এলাকায় ৮০টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। এদিকে দেওয়ানগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পানি ঢোকায় কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে। এছাড়া দেওয়ানগঞ্জ আরো ৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকে পানি উঠেছে বলেও জানান তিনি। জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ জানান, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে এবং এ বন্যা দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। Related posts:২৪ ঘন্টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৫ জনের মৃত্যুউন্নয়ন সূচকে অনেক ক্ষেত্রে ভারতের চেয়েও এগিয়ে বাংলাদেশ: মির্জা আজমনির্বাচনে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উৎকণ্ঠা বিবেচনায় বিশেষ নিরাপত্তা: আইজিপি Post Views: ৩৯১ SHARES সারা বাংলা বিষয়: