বিডিআর বিদ্রোহ : যারা ক্ষমতায় আসতে পারেনি তারাই ছিল পেছনে

প্রকাশিত: ৬:৪৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : বিডিআর বিদ্রোহের পেছনে বিএনপি-জামায়াত এবং ওয়ান/ইলেভেন সৃষ্টিকারীদের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, সরকারে থেকে আমরা এমন একটা ঘটনা ঘটাবো তা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। যারা ক্ষমতায় আসতে পারেনি তারাই এ ঘটনার পেছনে ছিল। তাদের সঙ্গে ছিল ওয়ান/ইলেভেন সৃষ্টিকারীরা। আওয়ামী লীগ মেজরিটি নিয়ে ক্ষমতায় আসায় সবকিছু নস্যাতের পরিকল্পনায় তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। একদিন না একদিন এ সত্য বের হবে।

রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে শোকপ্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। সংসদ সদস্য সাহারা খাতুন ও ইসরাফিল আলমের মৃত্যুতে আনা শোকপ্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বিডিআর বিদ্রোহের সময় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের সাহসী ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে প্রসঙ্গক্রমে বিডিআর বিদ্রোহের বিষয়টি টানেন।

বিডিআর বিদ্রোহের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, সাহারা খাতুনের সাহস দেখেছি বিডিআরের ঘটনা ঘটার সময়। সাহারা আপা ঝুঁকি নিয়ে সেখানে গেছেন। রাতের বেলা সেখানে গিয়ে বিডিআর সদস্যদের আর্মড সারেন্ডার করিয়েছেন। অনেক আর্মি অফিসার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করে নিয়ে এসেছেন। এজন্য তার জীবনের ওপরও হুমকি এসেছিল। এরপরও ওরা হামলা করতে গিয়েছিল। এরকম অবস্থায় তিনি দুঃসাহসিক ভূমিকা রেখেছিলেন। কোনো সাধারণ মানুষ এ সাহস করতে পারতো না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি সততার সঙ্গে কাজ করেছিলেন। মন্ত্রী হিসেবে তিনি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ কঠিন দায়িত্ব পালনের দৃষ্টান্ত রেখেছেন।

বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে বিএনপি থেকে শুরু করে অনেকে অনেক কথা রটায় উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা সরকার গঠনের ৫২ দিনের মাথায় এ ঘটনা ঘটল। ওই ঘটনায় যে সেনা অফিসাররা মারা যান তার ৩৩ জনই হচ্ছেন আওয়ামী পরিবারের। বিডিআরের ডিজি ছিলেন সংসদ সদস্য লুৎফুল হাই সাচ্চুর আপন চাচাত ভাই। ঘটনার পরে আমাদের চেষ্টা ছিল কোনোমতে এটাকে থামানো। অফিসার ও তাদের পরিবারগুলোকে রক্ষা করা। ওই সময় সেনাবাহিনী নিয়োগ করার পর তাদের (বিদ্রোহীদের) গুলিতে কয়েকজন সেনা সদস্য মারা গেলেন। বিডিআরের ওই ঘটনাটি ছিল অস্বাভাবিক। ঘটনার আগের দিন আমরা গেলাম। একটা ভালো পরিবেশ। পরের দিন এ ঘটনা ঘটলো- এর পেছনে কারা আছে? আমরা তো কেবল সরকার গঠন করেছি। এটা কোনো দিনই যুক্তিযুক্ত নয়- সরকার গঠনের পর আমরা এমন একটা ঘটনা কেন ঘটাবো, যাতে দেশে একটা অস্বাভাবিক পরিবেশ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়? কাজেই যারা তখন ক্ষমতায় আসতে পারেনি তারাই এর পেছনে ছিল। তাদের সঙ্গে ওয়ান/ইলেভেন যারা সৃষ্টি করেছিল, যাদের ধারণা ছিল একটা হ্যাং পার্লামেন্ট হবে। কিন্তু দেখলো আওয়ামী লীগ যখন মেজরিটি নিয়ে চলে এলো- তখন সবকিছুকে নস্যাতের পরিকল্পনা যাদের ছিল তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। একদিন না একদিন এই সত্য বের হবে।

বিএনপি ও জামায়াতের মিথ্যা বলার একটা আর্ট আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর তারা ব্যাপক প্রচার করেছিল আমি নাকি নিজেই গ্রেনেড নিয়ে নিজেই মেরেছি। বিডিআরের ঘটনার পরও তারা এভাবে অপপ্রচার করেছিল।

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু প্রণব মুখার্জি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের পাশে ছিলেন। পচাঁত্তরেও ছিলেন। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে আমি বন্দি থাকাকালে আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মা সেতু নিয়ে আমার ওপর দোষ চাপালো তখনও তিনি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিবাদ করেছেন। তিনি সব সময় বাংলাদেশের মানুষের পাশে ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ কামনা করতেন।

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ভারতে অবস্থানের সময়ের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে আপ্লুত হয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের পর আমরা যখন ভারতে ছিলাম। রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছে। নিজেদের নাম পর্যন্ত আমরা ব্যবহার করতে পারতাম না। কারণ নিরাপত্তার কারণে আমাদের ভিন্ন নামে থাকতে হতো। আমরা দুটি বোন একেবারে নিঃস্ব, রিক্ত অবস্থায় ওখানে (ভারতে) যখন পারিবারিক পরিবেশের একটু স্বাদ পাওয়া-প্রণব বাবু এবং তার পরিবারকেই পেয়েছিলাম। তার ধারাবাহিকতা আমৃত্যু বজায় ছিল। তার মতো একজন জ্ঞানী রাজনীতিবিদ পাওয়া খুবই মুশকিল। প্রতিটি বিষয়ে তার দক্ষতা আমরা দেখেছি। তিনি কংগ্রেসের হলেও সব দলই তকে সম্মান করে। তার মৃত্যু উপমহাদেশের রাজনীতিতে বিরাল শূন্যতা।