মুজিববর্ষে এটিই আমাদের বড় উৎসব : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৬:০৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০২১

অনলাইন ডেস্ক : মুজিববর্ষে ৯ লাখ পরিবারকে বাড়ি করে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপের ৭০ হাজার পরিবারকে জমিসহ পাকা ঘর করে দেয়া হয়েছে। আগামী মাসে আরও এক লাখ পরিবার পাবে এমন বাড়ি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় দেশব্যাপী এ কার্যক্রম চলমান আছে।
শনিবার (২৩ জানুয়ারি) প্রথম ধাপে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ৭০ হাজার পরিবারের হাতে বাড়ির কাগজপত্র হস্তান্তর করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে সত্যি আমার জন্য একটি আনন্দের দিন। কারণ এই দেশের যারা সবথেকে বঞ্চিত মানুষ, যাদের কোনো ঠিকানা ছিল না, ঘর-বাড়ি নেই। আজকে তাদেরকে অন্তত একটা ঠিকানা, মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে পেরেছি।
তিনি বলেন, মুজিববর্ষে আমাদের অনেক কর্মসূচি ছিল। কিন্তু করোনার কারণে তা করতে পারিনি। করোনা আমাদের জন্য যেমন অভিশাপ নিয়ে এসেছিল, আবার আরেকদিকে আশীর্বাদও। কারণ আমরা এই একটি প্রকল্পেই নজর দিতে পেরেছি। এটাই আমাদের আজকে বড় উৎসব; গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষদের ঘর দিতে পেরেছি। এর চেয়ে বড় উৎসব বাংলাদেশে হতে পারে না। এ সময় সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তশালীদের নিজ নিজ এলাকার ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর তৈরি করে দেয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
এই প্রকল্প জাতির পিতার চিন্তার ফসল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশের মানুষের জন্যই কিন্তু আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। তিনি আমাদের কথা কখনো চিন্তা করেননি। সারাজীবন চিন্তা করেছেন এই দেশের মানুষের কথা। স্বাধীনতার পরে তিনি (বঙ্গবন্ধু) মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন। এই দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, নানাভাবে সামাজিক কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দারিদ্রের কারণে ভিটেমাটি বিক্রি করে শূন্য হাতে রাস্তায় বের হয়। এইভাবে মানুষগুলো জীবনযাপন করে। তিনি (বঙ্গবন্ধু) স্বাধীনতার পরপরই গৃহহীন মানুষগুলোকে ঘর দেয়ার জন্য গুচ্ছগ্রাম পরিকল্পনা হাতে নেন। তিনি (বঙ্গবন্ধু) নোয়াখালীর চরাঞ্চলে গিয়ে গুচ্ছগ্রাম উদ্বোধন করেন। সাধারণ মানুষের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি করার চিন্তাটা তিনিই করেছিলেন।
নিজেরও ঘর বাড়ি ছিল না দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮১ সালে দেশে মানুষের শক্তি নিয়েই আমি দেশে ফিরে আসি। আমার কিছু ছিল না। ঘর নেই, কোথায় উঠবো তাও জানি না, কিভাবে চলবো তাও জানি না। কিন্তু তখন আমার মনে একটাই কথা ছিল আমাকে যেতে হবে। কারণ দেশের মানুষ সামরিক শাসকদের হাতে নিষ্পেষিত হচ্ছে, তাদেরকে মুক্তি দিতে হবে, অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে, তার জন্য কাজ করতে হবে। এই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে, যা আমার বাবা চেয়েছিলেন। সেই আদর্শ সামনে নিয়েই আমি ফিরে আসি। কখনো আমি ছোট ফুফুর বাড়ি, মেঝ ফুফুর বাড়িতে দিন কাটিয়েছি। তখন আমার লক্ষ্য ছিল একটাই, আমি কিভাবে থাকবো সেটা বড় কথা নয়, কিন্তু দেশের মানুষের কষ্ট-দুঃখ-হাহাকার কিভাবে দূর করবো, সেই কাজ করবো।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিদেশ থেকে প্রণোদনা নিয়ে সাহায্য করা হতো না। এরকম দূভার্গ্যে তারা পড়েছিল, এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। জাতির পিতা তো সব পরিকল্পনা নিয়েছিলেন, গৃহহীনদের ঘর দিবেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে হাসপাতাল করে চিকিৎসা সেবা দিবেন। লেখাপড়ার ব্যবস্থা করবেন, মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন, এটাই ছিল জাতির পিতার লক্ষ্য। তার পরিকল্পনা যদি বাস্তবায়ন করতে পারতো তাহলে দেশের মানুষ আরও আগে উন্নত জীবন পেতো।
আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে নৌকার জয় হয়েছিল জনগণের আন্দোলনের ফসল হিসেবে। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরে আমাদের লক্ষ্য ছিল দেশের খেটে খাওয়া, গরীব, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা এবং বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করা। আমরা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও স্বামী পরিত্যক্তদের ভাতা দেয়া শুরু করলাম। গৃহহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্প নিলাম। কারণ তখন দেখা গিয়েছিল আলাদা ঘর দিলে সেটা বিক্রি করে দিতো, শূন্য হাতে ফিরে আসতো। সেই জন্য ব্যারাক করে দিয়ে প্রত্যেককে একটি ঘরের মালিক করে দিয়ে ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর দেয়া শুরু করলাম।
তিনি আরও বলেন, এরপর কমিউনিটি ক্লিনিক করে চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় নেয়ার ব্যবস্থা করলাম। নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছি। আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন জাতি গড়ে তোলার কাজ করলাম। বস্তিবাসীদের মধ্যে যারা নিজের গ্রামে ফিরে যাবে, তাদের জন্য ঘরে ফেরা কর্মসূচি নিলাম। নিজ গ্রামে ফিরে গেলে ছয় মাস বিনা পয়সায় খাবার পাবে, বাচ্চাকে স্কুলে দিতে পারবে, বিনা পয়সায় একটা ঘর করে দিব। সেই সঙ্গে টাকা দেব যেন তারা কাজ করে খেতে পারে। এর মাধ্যমে ঘরে ফেরা কর্মসূচি শুরু করলাম।