‘স্বপ্নেও ভাবিনি নিজের জমি, বাড়ি-ঘর হবে, আল্লায় শেখ হাসিনারে বাচাই রাখুক’ অনলাইন ডেস্ক অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ৯:৩১ পূর্বাহ্ণ, জুন ৮, ২০২১ মুজিববর্ষের উপহার : শেরপুরে স্থায়ী আবাসন পেলো তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী স্টাফ রিপোর্টার : মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে এবার শেরপুরে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর (হিজড়া সম্প্রদায়) জন্য গড়ে দেওয়া হয়েছে স্থায়ী আবাসন। ৭ জুন সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহায়তায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প-২ এর আওতায় নির্মিত ওই স্থায়ী আবাসন প্রকল্পের ৪০টি ঘরের চাবি ও জমির কাগজ সুবিধাভোগীদের মাঝে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব। একইসাথে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে এখানকার তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) জনগোষ্ঠীর ব্যবহারের জন্য হাড়ি-পাতিল, থাকার জন্য বিছানা ও চাদর তুলে দেওয়া হয়। এদিকে স্থায়ী মাথা গুজার ঠাঁই পেয়ে সমাজের অবহেলিত তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর মানুষদের মুখে ফুটেছে হাসি। তারা আনন্দে উদ্বেলিত। দীর্ঘদিনের লাঞ্ছনা-গঞ্জনার অবসান ঘটায় নিজেদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল প্রাপ্তির আবেগ-উচ্ছ্বাস। এজন্য তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। অন্যদিকে ওই আবাসন ও তাদের কর্মসংস্থানের ওই উদ্যোগ সারাদেশের জন্য একটা রোল মডেল হয়ে উঠবে এবং তা হিজড়া জনগোষ্ঠিকে মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল। ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে শেরপুরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) এটিএম জিয়াউল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মুকতাদিরুল ইসলাম, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফিরোজ আল মামুন, জেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান নাছরিন বেগম ফাতেমা, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহা জামান শাপলা, নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, সদস্য সচিব হাকিম বাবুলসহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। জানা যায়, অন্যান্য এলাকার মতো তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর মাথা গুঁজার কোন ঠাঁই ছিল না শেরপুরেও। তাদের কাছে সহজে কেউ বাড়ি ভাড়াও দিতে চাইতো না। এক পর্যায়ে তারা সমিতি গঠনের মাধ্যমে সংগঠিত হয়ে শহরের গৌরীপুর এলাকায় ভাড়া থাকতো। কোন কাজের ব্যবস্থা না থাকায় চেয়ে-চিন্তে ও ক্ষেত্রমতে জোর করে বিভিন্ন বাজার, বাস টার্মিনালে টাকা আদায় করে জীবিকা নির্বাহ করতো তারা। পরে নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগ ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ধীরে ধীরে তাদের সহযোগিতা করা শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, করোনাকালীন সময়ে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান-সংগঠনের তরফ থেকে তাদের সহায়তা করা হয়। পরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তাদের জন্য স্থায়ী আবাসন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহায়তায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প-২ এর আওতায় সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের কবিরপুর মৌজাধীন আন্ধারিয়া সুতিরপাড় এলাকায় ৬৯ লাখ ৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ২ একর সরকারি খাসজমিতে হিজড়াদের জন্য গড়ে তোলা হয় ওই আবাসন প্রকল্প। এর মধ্যে ৪০টি ঘর নির্মাণের জন্য ৬০ লক্ষ টাকা, মাল্টিপারপাস হলরুমের জন্য ৭ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা, নলকূপের জন্য ৬০ হাজার ও গোসলখানা নির্মাণের জন্য ৫১ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, এ আবাসনে জেলার ৪০ জন হিজড়ার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জমিসহ ঘর। সঙ্গে রয়েছে রান্নাঘর ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা। সেইসাথে সকলের ব্যবহারের জন্য ৩টি নলকূপ ও ২টি গোসলখানা থাকছে। এছাড়া তাদের আয়বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য রয়েছে প্রায় ৪০ শতক জমির ওপর একটি পুকুর, শাক-সবজি, ফসল আবাদের জন্য রাখা হয়েছে খোলা জায়গা, আর প্রশিক্ষণের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে একটি মাল্টিপারপাস কক্ষ। গুচ্ছগ্রামের সঙ্গেই রয়েছে ৮ একরের বড় একটি সরকারি খাস বিল। সেটিও সেখানে বসবাসকারী হিজড়াদের লিজ দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। আবাসনের চারপাশে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে আবাসনটিকে পরিবেশবান্ধব ও মনোরম করা হয়েছে। ওই নতুন আবাসন প্রসঙ্গে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফিরোজ আল মামুন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহায়তায় ও জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনায় আমরা এই কাজটি শেষ করতে পেরে আনন্দিত। আমরা চাই তৃতীয় লিঙ্গের এই মানুষগুলো আমাদের সাথে বাস করে আমাদের জনশক্তিতে রূপান্তরিত হোক। কেবল জমিসহ ঘরই নয়, ওই গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে সমাজের অবহেলিত ও অপাংক্তেয় তৃতীয় লিঙ্গ হিজড়া জনগোষ্ঠির জীবনমান এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণও প্রদান করা হবে। যাতে তারাও সমাজের মূলস্রোতে একীভূত হতে পারে। এদিকে মাথা গুজার স্থায়ী ঠাঁই পেয়ে শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার সভাপতি কলেজ শিক্ষার্থী নিশি সরকার বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। স্বপ্নেও কোনদিন ভাবিনি আমাদের নিজের জায়গা-জমি ও বাড়ি-ঘর হবে। এজন্য তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ শেরপুরের জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আল্লায় শেখের বেটি শেখ হাসিনারে আরও বাঁচাই রাখুক- দীর্ঘজীবী করুক। তার নেতৃত্বেই আজ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং হিজড়া জনগোষ্ঠিসহ সমাজের পিছিয়ে পড়া অবহেলিত মানুষগুলো মূল স্রোতে ফেরার সুযোগ পাচ্ছে। আরেক হিজড়া মোর্শেদা বলেন, আমরা হাত পেতে ভিক্ষা করে খেতে চাই না, আমরাও আর দশটা মানুষের মতো স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চাই। কাজ করে খেতে চাই। এই স্থায়ী আবাসন এবং প্রতিশ্রুত প্রশিক্ষণ আমাদের নতুন করে জীবন শুরু করার অনুপ্রেরণা যোগাবে। তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়ের অধিকার নিয়ে কাজ করা নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও জনউদ্যোগের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শেরপুরে তৃতীয় লিঙ্গের লোকজনদের জন্য এক আশা জাগানিয়া কর্মউদ্যোগ শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হলো সমাজের অবহেলিত ও অপাংক্তেয় তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়ন এবং আর্থ-সামাজিক দিক থেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা। তাদের আবাসন ও কর্মসংস্থানের এ উদ্যোগ সারাদেশের জন্য একটা রোল মডেল হয়ে উঠবে বলে আমরা মনে করছি। এছাড়া তাদের কর্মসংস্থানের জন্য ইতোমধ্যেই বুটিক, সেলাইসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এখানে নির্মিত মাল্টিপারপাস হলরুমে নিয়মিত তাদের সরকারি বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হবে। আবাসনের পুকুরে মাছ চাষ এবং গবাদী পশু পালন করেও অর্থনৈতিকভাবে সফলতা অর্জন করতে পারবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। Related posts:শেরপুরে পুলিশের সাথে শ্রমিক নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিতনালিতাবাড়ীতে নদীতে নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর মিলল শিশুর লাশশেরপুরে বিদ্যুতায়িত হয়ে শিশুর মৃত্যু Post Views: ২০৬ SHARES শেরপুর বিষয়: