নালিতাবাড়ীতে সার্জেন্ট আহাদ স্মরণে স্মৃ‌তিফল‌ক উ‌ন্মোচন

প্রকাশিত: ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০২১

শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌরশহরে মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে দুরন্ত পাহাড়ি নদ ভোগাই। এই ভোগাই নদে শৈশব কেটেছে শহরের আমবাগান এলাকার সন্তান সার্জেন্ট আহাদ পারভেজের। সেই নদের পাড়ে পৌরসভার উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে সার্জেন্ট আহাদ স্মৃতি প্রাঙ্গণ। ২৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সার্জেন্ট আহাদ পারভেজের ২২ তম মৃত্যুবাষিকী। এই দিনটিকে কেন্দ্র করে প্রাঙ্গণে ‘সার্জেন্ট আহাদ: বীরত্ব গাথা’ স্মৃতিফলক উদ্বোধন করা হয়।

ফলক উন্মোচন করেন শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. হাসান নাহিদ চৌধুরী। ওইসময় তিনি বলেন, আজকের এইদিনে আমি কৃতজ্ঞতার সাথে তাকে স্মরণ করছি। এ ক্ষেত্রে আমারও কিছু স্মৃতি আছে। এটা ১৯৯৯ সালের ঘটনা। তখন আমি পুলিশে ঢুকিনি, তার অনেক পরে পুলিশে ঢুকেছি। কিন্তু সেদিনের এই ঘটনা আসলে মনকে আলোড়িত করেছিলো। একটা মানুষ নিষ্ঠাবান, দায়িত্ববান হলে কতটা দেশপ্রেম থাকলে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে কাজ করতে পারে এটা একটা শিক্ষনীয় বিষয়। সেদিন আলোকিত হয়ে ছিলাম আমরাও তথা বাংলাদেশ পুলিশ। যদিও তার পরিবার পরিজন তাকে হারিয়েছেন। তাদের সেই কষ্ট কখনো লাঘব হবে না। তারপরও যতদিন যাবে সার্জেন্ট আহাদ কিন্তু মৃত নয়, তার কোনো মৃত্যু নেই, তিনি অমর হয়ে আছেন বাংলাদেশ পুলিশে ও আপনাদের নালিতাবাড়ীবাসীর কাছে। এরকম চমৎকার জায়গায় সার্জেন্ট আহাদের স্মৃতিস্তম্ভ প্রতিষ্ঠা করার জন্য মেয়র ও বেগম মতিয়া চৌধুরী, এমপি মহোদয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সেইসাথে একজন পুলিশ সদস্য হিসাবে আমাকে দিয়ে সার্জেন্ট আহাদ এর স্মৃতিফলকের উন্মোচনের বিরল সম্মাননা দেওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

পরে এ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় মুঠোফোনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। পৌর মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিকের সভাপতিত্বে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, সার্জেন্ট আহাদের বড় ভাই আনোয়ার গ্রপ অব ইন্ড্রাষ্টিজের নির্বাহী পরিচালক এম এ হান্নান, নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেলেনা পারভীন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো.ফজলুল হক, সার্জেন্ট আহাদের বড় ভাই স্থানীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি এমএ হাকাম হীরা প্রমুখ।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পুলিশের উজ্জল মুখ সার্জেন্ট আহাদের জন্ম শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বিখ্যাত কাজী পরিবারে। বাবা আব্দুল আলী ও মা আমেনা খাতুন। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। তারাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৭ সনে এসএসসি, ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজ থেকে আইএসসি (১৯৮০) ও বিএসসি ( ১৯৮২)। ঢাকা বিশ^ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৫ সালে গ্রন্থাগারিক বিজ্ঞানে এম এ ডিগ্রি অর্জন করার পর ওই বছরই পুলিশ সার্জেন্ট পদে যোগ দেন। তিনি জড়িয়ে ছিলেন নাটক ও সংস্কৃতি চর্চ্চার সঙ্গে। চাকুরী জীবনে তিনি কম্বোডিয়া, কসভোতে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে দায়িত্ব পালন করেন এবং মৃত্যুর সাতদিন আগে আবারও পূর্ব তিমুরে জাতি সংঘ শান্তি মিশনের জন্য যাওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে বিয়ে করেন অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচীকে। তাদের লামিছা রিমঝিম নামে একমাত্র কন্যা সন্তান রয়েছে।
১৯৯৯ সালের ২৮ অক্টোবর মতিঝিল এলাকায় ছিনতাইকারীদের শেকড় উৎপাটনে এক দু:সাহসিক অভিযানে নেমে গুরুতর আহত হন। পরে ওইদিনই রাত ১০টায় ঢাকা সিএমএইচে শেষ নি:শ^াস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে ঢাকা সহ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ২৯ অক্টোবর মীরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
সৎ, দক্ষ, নির্ভীক পুলিশ সার্জেন্ট আহাদকে স্মরণীয় করে রাখতে ওই সময়েই গুলিস্তান পুলিশ বক্সটির নামকরণ করা হয় সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্স। আউটার স্টেডিয়ামে গুলিস্তানের হকাররা স্থাপন করে একটি স্মৃতি ফলক। তার নাটকের গ্রুপ নাট্যচক্র ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের নাট্যতত্ত্ব বিভাগে চালু করে সার্জেন্ট আহাদ বৃত্তি। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর চারদিনব্যাপী শতাব্দির শেষ বিজয় উৎসব উদযাপনকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পশ্চিম গেইটে পথ নাটক অঙ্গনের নামকরণ করে সার্জেন্ট আহাদ পথ নাটক প্রাঙ্গন। তার জন্মভূমি নালিতাবাড়ীতে বাংলার অগ্নিকন্যা বেগম মতিয়া চৌধুরীর পরিকল্পনায় নালিতাবাড়ী পৌরসভার মেয়র আবুবক্কর সিদ্দিক ভোগাই নদীর তীরে সার্জেন্ট আহাদ স্মৃতি প্রাঙ্গণ স্থাপন করেন। সেখানেই বানানো হয়েছে সার্জেন্ট আহাদ: বীরত্বগাঁথা স্মৃতি ফলক। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘যতদিন ভোগাই থাকবে বহমান, সবুজ বৃক্ষরাজিতে বিকশিত হবে কচি পাতা, প্রাঙ্গণ মুখরিত থাকবে পাখির কলকাকলিতে, ততদিন রবে তোমার বীরত্বগাঁথা’।