নালিতাবাড়ীতে শেষ হল দুদিনব্যাপী ‘তীর্থ উৎসব’

প্রকাশিত: ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০২১

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী বারমারীতে অবস্থিত ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের দেশের সর্ববৃহৎ তীর্থকেন্দ্র খ্রিষ্টান ধর্মপল্লীতে ২দিনব্যাপী ফাতেমা রাণীর তীর্থ উৎসব শেষ হয়েছে। ২৯ অক্টোবর শুক্রবার দুপুরে মহা খ্রিস্টযাগের প্রার্থনার মাধ্যমে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে ওই তীর্থোৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা করেন ময়মনসিংহ খ্রিস্ট ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ পনেন পৌল কুবি সিএসসি। উৎসবের এবারের মূল সুর ছিল ‘ভ্রাতৃত্ব ও মিলন সমাজ গঠনে ফাতেমা রাণী মা মারিয়া’।

এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে পুনর্মিলন, পাপ স্বীকার এবং বিকেলে পবিত্র খ্রিস্টযাগের মধ্য দিয়ে তীর্থ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পরে রাতে আলোক শোভাযাত্রা, আরাধ্য সাক্রান্তের আরাধনা, নিরাময় অনুষ্ঠান ও নিশি জাগরণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রথম দিনের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে দেশ ও বিদেশ থেকে আসা প্রায় ৩০ হাজার রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টভক্ত যোগ দেন। আলোক মিছিলে অংশ নেন খ্রিস্টানদের বাংলাদেশের প্রধান কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও সিএসসি।
তীর্থ উৎসবের সমন্বয়কারী রেভারেন্ড ফাদার তরুণ বানোয়ারী জানান, দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা খ্রিস্টভক্তরা নিজেদের পাপমোচনে মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোর মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। ওইসময় প্রায় দুই কিলোমিটার পাহাড়ি ক্রুশের পথ অতিক্রম শেষে মা-মারিয়ার প্রতিকৃতির সামনে সমবেত হয়ে ভক্তি ও শ্রদ্ধা জানিয়ে অকৃপণ সাহায্য প্রার্থনা করেন তারা।


রাজশাহী ক্যাথলিক খ্রিস্ট ধর্মপ্রদেশ বিশপ জের্ভাস রোজারিও বলেন, এবারের তীর্থযাত্রায় বিশ্বমানবতার কল্যাণে বিশেষ করে বাংলাদেশের সকল সমস্যার সমাধানের জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে। পাশাপাশি সকল ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণ দিন দিন তীর্থ উৎসবটি এখন সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
তীর্থযাত্রা উপলক্ষে সেখানে মেলাও বসে। এবারও মেলা বসেছে, তবে কেনাকাটা অন্য বছরের চেয়ে কম হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। নেত্রকোনার বিরিশিরি থেকে যাওয়া ক্যাথলিকভক্ত আঁখি মারাক বলেন, পাপ মোচনসহ নানা সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে মা মারিয়ার কাছে ছুটে এসেছি। আমার সন্তানের অসুখের জন্য মানত ছিল, তাই এখানে এসেছি। আমার মানত ভালো হয়েছে। আরেক ভক্ত লিউনি নকরেক বলেন, আমরা যেন ভালোভাবে শিক্ষা অর্জন করতে পারি, আগামী এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে পারি, এ জন্য মা মারিয়ার সাহায্যের জন্য এসেছি।
আদিবাসী নেত্রী কেয়া নকরেক বলেন, আমাদের বারোমারী মিশনে সারা দেশ থেকে ক্যাথলিকসহ সব খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা এখানে আসেন, মা মারিয়ার কাছে সাহায্য চাইতে, পরিবারের শান্তির জন্য। আর এ বছর আমরা মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করছি, সারা বিশ্ব যেন করোনা থেকে মুক্ত হতে পারে।
অন্যদিকে তীর্থ উৎসবে আগতদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। কেবল তাই নয়, সেখানে সরাসরি উপস্থিত থেকে তদারকি করেন জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ ও পুলিশ সুপার মো. হাসান নাহিদ চৌধুরী।
উল্লেখ্য, নালিতাবাড়ীর বারমারী সাধু লিওর খ্রিষ্টান ধর্মপল্লীতে ফাতেমা রাণীর তীর্থস্থানটি পর্তুগালের ফাতেমা নগরের আদলে ও অনুকরণে ১৯৯৮ সালে স্থাপিত হয়। সেই থেকেই ফাতেমা রাণীর করুণা ও দয়া লাভের আশায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী তীর্থযাত্রীরা এখানে সমবেত হয় নিজেদের পাপ মোচনের জন্য।