শেরপুরে ‘অজানা রোগে’ মারা যাচ্ছে গরু অনলাইন ডেস্ক অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ৩:০১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৬, ২০২২ অজানা রোগে মারা যাচ্ছে গরু। গত একমাসেই মারা গেছে প্রায় ৭০টির বেশি গরু। এতে শঙ্কিত সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের ক্ষুদ্র খামারিরা। তাদের অভিযোগ প্রাণী সম্পদ বিভাগের কেউ এ ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছেন না। তবে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মুস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু হয়েছে, এরইমধ্যে রোগ শনাক্তকরণে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ২০১৬ সালে শেরপুর সদর উপজেলার পাকুরিয়া ইউনিয়নের তিলকান্দীকে দুগ্ধগ্রাম ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ। এ গ্রামের কমবেশি সবাই গাভী পালন করে। দুধ উৎপাদন হয় চাহিদার চেয়ে বেশি। যা আশপাশের জেলাতেও বিক্রি করা হয়। কিন্তু গত একমাসে পাল্টে গেছে গ্রামের অবস্থা। এই সময়ের মধ্যে গ্রামের পূর্বপাড়া ও ভাটিয়াপাড়াতেই ৭০টির বেশি গরু মারা গেছে। তবে কি রোগে আক্রান্ত হয়ে গরুগুলো মারা গেছে তা বলতে পারছেন না কেউ। এতে খামারিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি হতাশা ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। অনেক খামারি কম দামে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন। পাকুরিয়ার পূর্বপাড়ার আব্দুল আজিজুল হক (৬০) নামের একজন কান্নাজড়িত বলেন, প্রায় চল্লিশ লিডার (লিটার) দুধ দিতো আমার দুইডা গাই (গাভী)। গাই দুইডা সাড়ে পাঁচ লাখ থাইক্কা ছয় লাখ ট্যাহা (টাকা) দাম অইতো (হতো)। কিছু বুইজ্জা উডার আগেই সন্ধ্যের (সন্ধ্যার) আগ দিকে আধা ঘন্টার মধ্যে মারা গেল দুইডা গাই-ই (গাভী)। আমার সব শেষ। পাকুরিয়ার তিলকান্দীর তালুকদার বাড়ির আব্দুল আজিজ তালুকদার জানান, তার গাভীও হঠাৎ করে অজানা রোগে মারা গেছে। সুস্থ গরু নিয়েও ব্যাপক চিন্তায় আছেন তিনি৷ তিলকান্দী দুধগ্রামের গাভী সমিতির সভাপতি জিএম হাসান বলেন, ‘সারাজেলার দুধের চাহিদা মেটায় আমাদের গ্রামের গাভী থেকে। অথচ এখানে সরকারি চিকিৎসক তেমন আসেন না। আসলেও দিতে হয় দুই তিন হাজার টাকা। কিছু ওষুধ দিয়েই বলে, বিল এতো টাকা, এতো টাকা। আমরা মূর্খ্য মানুষ, তাই ওষুধের দাম জানি না। যা চায় তাই দিয়ে দিতে হয়।’ গাভী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আলী বলেন, গ্রামের পল্লী চিকিৎসক দিয়েই চিকিৎসা করাতে হয় কারণ সরকারি ডাক্তার আসলে তাদের তিন চার হাজার টাকা ভিজিট দিতে হয়। তাই তাদের আমরা নিয়ে আসতে পারি না। সমিতির কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রহমান সজীব তালুকদার বলেন, ‘গ্রামে ৬০ থেকে ৭০টি গরু মারা গেছে। অথচ সরকারি কোনো চিকিৎসা বা পরামর্শ আমরা পাচ্ছি না। একদিন ডাক্তার আইসা মরা গরুর কলিজা, চোখ, গোশ, ভূড়ি (নমুনা সংগ্রহ) কেটে নিয়ে গেছে। আর কোনও খবর নেই। যদি ফোন দিয়ে আনা হয় তাহলে চার পাঁচ হাজার টাকা চেয়ে বসে। তাই টাকার ভয়ে আমরা সরকারি ডাক্তার নিয়ে আসি না।’ বাংলাদেশ কৃষক সমিতির শেরপুর সদর উপজেলার আহ্বায়ক সোলাইমান হোসেন বলেন, একটা গ্রামেই ৬০ থেকে ৭০ টা গরু মারা গেল। অথচ এ ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রাণী সম্পদ বিভাগের চিকিৎসকরা। চার পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে সরকারি চিকিৎসক নিয়ে এ গ্রামের খামারিদের এখন মরার উপর খড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিনামূল্যে সরকারি চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি এ গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের দাবি জানান কৃষকদের এ নেতা।’ এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের ইউএনও ডা. পলাশ কান্তি দত্ত বলেন, রোগ শনাক্তে আমরা পাকুরিয়ার দুগ্ধ গ্রামের তিনটি মৃত গরুর নমুনা সংগ্রহ করেছি। তবে ৫০টির বেশি গরু মারা গেছে, তথ্যটা আসলে এমন নয়। কয়েকটা গরু বয়স জনিত এবং ঠান্ডাজনিত রোগেও মারা গেছে। জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মুস্তাফিজুর রহমান জানান, অজানা রোগ শনাক্তে মৃত গরুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, আর এ ব্যাপারে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। Related posts:শেরপুর জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাসুম, সেক্রেটারি মিল্লাতনারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও নিপীড়নের প্রতিবাদে শেরপুরের নকলায় শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনশেরপুরে তথ্য অধিকার আইন ও আরটিআই অনলাইন ট্রাকিং সিস্টেম বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও জনঅবহিতকরণ সভা Post Views: ২৯২ SHARES শেরপুর বিষয়: