‘এরা ঠেক দিয়া ভাড়া নিতাছে, প্রতিবাদ করলে মারতে আসে’

প্রকাশিত: ৩:৫৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৬, ২০২২

শেরপুর শহরের থানা মোড় থেকে বকশীগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা সাহাবুদ্দিন মিয়া (৫০) তার স্ত্রীকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে যাবেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ইতোপূর্বে তিনি ১২০-১৩০ টাকা দিয়ে ময়মনসিংহ যেতেন। আজ ২৫০ টাকা ভাড়া চাচ্ছে চালক ও স্ট্যান্ডের মাষ্টার। তিনি ভাড়া বৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে প্রতিবাদ করেছেন। এ ব্যাপারে সাহাবুদ্দিন মিয়ার কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরা ঠেক দিয়া যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিতাছে। কয়েকদিন আগেও ১২০ টাকা দিয়া যাতায়াত করছি। আইজ ২৫০ টাকা ভাড়া চায়। প্রতিবাদ করলে মারতে আসে।

ঈদ শেষে শেরপুর থেকে কর্মস্থলে যেতে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। বাস- সিএনজি চালিত অটোরিকশার চালকেরা কর্মস্থলমূখী মানুষের কাছ থেকে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুন ভাড়া আদায় করছেন। শুধু তাই নয়, ভাড়া নিয়ে দরকষাকষি করলে বাস টার্মিনাল ও সিএনজি স্ট্যান্ডের দালাল চালক, হেলপারদের রোষানলে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের- এমন অভিযোগ করেছেন অনেক যাত্রী। অন্যদিকে কয়েকদিন ধরে চলা ওই অব্যবস্থাপনা নিরসনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। গত বৃহস্পতিবার দুটি যাত্রীবাহী বাস কাউন্টারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে সাড়ে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হলেও কমেনি গণপরিবহনের ভাড়া নৈরাজ্য।
শহরের নতুন বাস টার্মিনাল, নবীনগর বাস টার্মিনাল, রঘুনাথবাজার (নিউমার্কেট) এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, শেরপুর থেকে ঢাকা যেতে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকা। বাসের বোনাটে বসে যারা যাচ্ছেন তাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৪০০- ৫০০ টাকা। এতে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কর্মস্থলমুখী যাত্রীরা। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে নিম্ম মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সেলিম ঢাকা যা্ওয়ার জন্য একটি টিকিট ক্রয় করতে। ৪০০ টাকার ভাড়া কেন ৬০০ বা ৭০০ টাকা হবে এমন প্রশ্ন করলে রেগে যান টিকিট বিক্রেতা। এসময় ওই ছাত্র জেলা প্রশাসককে ফোন করে ভাড়া বৃদ্ধির কথা জানালে জেলা প্রশাসক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
এদিকে শহরের সদর থানার উল্টো দিকের অটোরিকশার স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায় কর্মস্থলমুখী মানুষের ভিড়। এ স্ট্যান্ডে আসা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শেরপুর থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার একমাত্র স্ট্যান্ড এটি। এখান থেকে শেরপুরের চার উপজেলা ও পার্শবর্তী জামালপুরের বকশীগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজিবপুরের অনেক লোক ময়মনসিংহে যান।
কয়েকজন যাত্রী জানান, শেরপুর থেকে ময়মনসিংহে যাওয়ার জন্য কোন বাস নেই। ঈদ শেষে যাত্রীদের চাপ বেশি। এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন সিএনজি চালিত অটোরিকশার মালিক- শ্রমিকরা। শেরপুর থেকে ময়মনসিংহের ভাড়া কখনো ১২০ টাকা আবার কখনো ১৩০- ১৫০ টাকা উঠে। কিন্তু এবার এক লাফে ভাড়া ২৫০ টাকা করে নিচ্ছে। এক অরাজক পরিস্থিতির তৈরি করেছে অটোস্ট্যান্ডের লোকজন। কোন উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে তাদের।
অটোচালক ও স্ট্যান্ডের লোকজন জানান, শেরপুর থেকে ময়মনসিংহের দূরত্ব ৬৯ কিলোমিটার। যানজট না থাকলে ময়মনসিংহ যেতে সময় লাগে দেড়ঘন্টা। আর যানজট থাকলে লাগে দুইঘন্টা । প্রতিদিন শেরপুর থেকে ময়মনসিংহে ৫০-৬০টি অটোরিকশা যাতায়াত করে। ঈদ ছাড়া প্রত্যেক যাত্রীর ভাড়া ১৫০ টাকা। সদর উপজেলার খরখরিয়া গ্রামের মুকুল মিয়া তার পরিবারের তিন সদস্য কে নিয়ে যাচ্ছেন ময়মনসিংহ। তিনি বলেন- ২৫০ টাকা নিচে কোন ভাড়া নেই। প্রায় একঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে অবশেষে গাড়ীতে উঠলাম। বিশ্বাস করেন ২৫০ টাকা দিয়ে ময়মনসিংহে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে। ১৩০ টাকার ভাড়া যদি ২৫০ টাকা হয় তাহলে কিছুতেই এটা মানা যায় না। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কোন মাথা ব্যাথা নেই বলে মনে হচ্ছে।
স্ট্যন্ডের মাষ্টার হান্নান মিয়া বলেন, চালকরা ২৫০ টাকার নিচে ভাড়া নিতে চায় না। আমরা কি করবো। তিনি বলেন- ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জে ভীষণ যানজট। অনেক সময় লাগে। আবার ফেরার সময় যাত্রী পাওয়া যায় না তাই ভাড়া একটু বেশি।
শেরপুর বাস মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক সুজিত ঘোষ বলেন, ঈদ উপলক্ষে ভাড়া কিছু বেশি নেওয়া হচ্ছে। কারণ যেসব গাড়ী যাত্রী নিয়ে ঢাকা যাচ্ছে তারা খালি গাড়ী নিয়ে শেরপুর ফিরছে। ফলে লাভ তো দূরের কথা কখনো কখনো লোকসান গুনতে হচ্ছে মালিকদের।
ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে শেরপুর ট্রাফিক বিভাগের সার্জন মো. রুবেল মিয়া বলেন, বেশি ভাড়া নেওয়ার জন্য চারটি অটোরিকশার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে শেরপুরের জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার বলেন, বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পেয়ে ইতোমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে কয়েকটি বাস কাউন্টারকে জরিমানা করা হয়েছে। আবারও বেশি ভাড়া নেওয়া হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।