শেরপুরের বিভিন্ন অঞ্চল ছেয়ে গেছে কাশফুলে

প্রকাশিত: ১২:২০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৫, ২০২২

‘ইচ্ছে করে ডেকে বলি: ওগো কাশের মেয়ে, আজকে আমার চোখ জুড়ালো তোমার দেখা পেয়ে। তোমার হাতে বন্দি আমার ভালোবাসার কাশ, তাই তো আমি এই শরতে তোমার কৃতদাস।’
রোমান্টিকতার আদলে কবি নির্মলেন্দু গ‍ুণ যে কাশফুলের বন্দনা করেছেন, সেই কাশফুলের ঋতু শরৎ এখন প্রকৃতিতে। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলার মতো শরতের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ কাশফুলেও ছেয়েছে প্রকৃতি। শেরপুরের বিভিন্ন অঞ্চলও ছেয়ে গেছে কাশফুলে। বিশেষ করে শরতের কোমলতার ছোঁয়ায় নদীর পাড়গুলো যেন পরিণত হয়েছে কাশফুলের সাম্র‍াজ্যে। প্রকৃতিপ্রেমীরাও প্রতিদিনই ভিড় করছেন কাশবনে। আনন্দঘন মুহূর্তগুলো করছেন ক্যামেরাবন্দি।

শেরপুর শহরের বাটারাঘাট, কসবা কাঠগড়, সদরের হরিণধরা, নকলা উপজেলার নারায়ণখোলা ও ব্রহ্মপুত্র‍ নদীর পাড়সহ বিভিন্ন নদ-নদীর আশপাশ এখন ভরে উঠেছে কাশফুলে। নীল আকাশের নিচে এ যেন সাদা মেঘের ভেলা। নাগরিক কোলাহল থেকে একটু মুক্তি পেতে তাই প্রিয়জনদের নিয়ে কাশবনগুলোতে ভিড় জমছে প্রতিদিন।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেল, সকাল থেকেই নদীর পাড়ের কাশবনগুলোতে ভিড় করতে থাকেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। বেলা গড়ালে ভিড় একটু কমলেও বিকেল থেকে যেন মানুষের ঢল নামে কাশবনে।


স্থানীয়রা বলছেন, প্রতি বছর কাশফুল ফুটলেও এবার কাশফুলের উপস্থিতি গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর সেই কাশফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতেই দলে দলে ছুটে আসছেন মানুষেরা। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে দুপুর গড়ালেই মানুষ যেন উপচে পড়তে থাকে।
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদীর পাড়ে ঘুরতে এসেছিলেন শিলা। তিনি বলেন, প্রতিদিনের যে চাপ, তাতে একঘেয়েমি চলে আসে। একটু মুক্ত বাতাস পেলে ভালো লাগে। তাই একটু ছুটে এসেছি। কাশফুল দেখে খুব ভালো লাগছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে কাশফুল ফুটেছে। সবগুলো জায়গাই ঘুরে দেখছি।
বীথি আক্তার নামে আরেক দর্শনার্থী বলেন, কাশফুল সাধারণত গ্রামেই বেশি দেখা যায়। কিন্তু এখন শহরেও বিভিন্ন স্থানে কাশফুল ফুটছে। প্রতিদিনের ক্লান্তি কাটাতে এসব জায়গায় এসে একটু প্রশান্তি পাওয়া যায়। এই জায়গাগুলো আমাদের বিনোদন স্পট হিসেবেও কাজ করছে।
শিলা ও বীথির মতোই বিভিন্ন স্থান ঘুরে ঘুরে কাশফুল দেখছেন শোয়াইব রহমান। তিনি বলেন, শহরের বাইরেও গ্রামাঞ্চলে প্রচুর কাশফুল ফুটছে এবার। আমার কাছে নকলার নারায়ণখোলার কাশফুলের সমারোহ অসাধারণ মনে হয়েছে।
নকলার নারায়ণখোলার কাশবনের প্রশংসা করলেন আশরাফুল ইসলামও। তিনি বলেন, আমার শখ ঘোরাঘুরি করা। আমি ঘুরতে ভালোবাসি। নকলা নারায়ণখোলার কাশবনও ঘুরে দেখেছি। এত বড় কাশবন আর কোথাও দেখিনি। খুবই চমৎকার পরিবেশ। সবাই ঘুরতে আসছে। বন্ধুবান্ধব নিয়ে ছবি তুলছে, সুন্দর সময় কাটাচ্ছে।
অন্তর খান, জাবির হাসান খান পরাগ ও সোহানুর রহমান সোহাগের সঙ্গেও কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাশফুলের ছবি দেখে ভালো লাগে তাদের। তাই পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে কাশবন দেখতে এসেছেন তারা। একটু নিরিবিলি সময় কাটাতে পেরে তারা খুব সন্তুষ্টও।
কাশবনগুলোতে দর্শনার্থীদের ভিড় অবশ্য স্থানীয়দের জন্য কিছু উপার্জনের সুযোগও তৈরি করেছে। শহরের কবির মিয়া কাশবনের পাশে একটি দোকান দিয়েছেন। তিনি বলেন, এখানে কাশবনে অনেকে ঘুরতে আসে। অনেক মানুষ আসে। তাই এখানে একটি দোকান দিয়েছি। বিকেলে দোকান খুলি। বেচাকেনা ভালোই হচ্ছে। কাশফুল যতদিন থাকবে, ততদিন কিছু বাড়তি উপার্জন আসবে।