ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলন আজ

প্রকাশিত: ১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৬, ২০২২

স্বাধীনতাসংগ্রামসহ বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিল ছাত্রলীগ। সংগঠনটির বয়স বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যোগ হয়েছে নানা বিতর্কও। তবে স্বর্ণালি সেই অতীত ফিরিয়ে আনার প্রত্যাশা করছেন সাবেক ও বর্তমান নেতারা। তাঁরা চান, আজ মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৩০তম সম্মেলনে বিতর্কহীন নেতৃত্ব পাবে ছাত্রলীগ।

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনে সংগঠনটি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিল; যে কারণে রাজনৈতিক মহলে বলা হয়, ছাত্রলীগের ইতিহাসই বাংলাদেশের ইতিহাস।
ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলন হয় ২০১৮ সালের মে মাসে। ওই বছরের ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। চাঁদাবাজি ও নৈতিক স্খলনের কারণে পরের বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর পদচ্যুত হন শোভন-রাব্বানী। তখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব দেওয়া হয় যথাক্রমে সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি তাঁরা পূর্ণ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।
ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাহালুল মজনুন চুন্নু বলেন, ‘ছাত্রলীগকে অবশ্যই দেশের মানুষের জন্য কাজ করা উচিত। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা উচিত।
আমাদের সময় ছাত্রনেতারা সংগঠনের আদর্শ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বলে ছাত্রলীগ করতে উদ্বুদ্ধ করতেন। এখন সেই নিয়ম নেই। ওই সময় ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন সীমিতসংখ্যক, এখন তো অনেক। এখনকার নেতাদের মধ্যে সুবিধা নেওয়ার বিষয় কাজ করে, যেটা আমাদের সময় ছিল না। আমরা চাই ছাত্রলীগে বিতর্কহীন নেতৃত্ব।’
ছাত্রলীগের সাবেক পাঁচজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় ছাত্রলীগে নেতা বাড়ছে। বিভিন্ন সময় ছাত্রশিবির, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরাও পরিচয় গোপন করে বিভিন্ন শাখার নেতৃত্বে আসার অভিযোগ ওঠে। এমন অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত অক্টোবর মাসে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।
তবে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘টাকা খেয়ে কমিটি, পদ-বাণিজ্যের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা কখনো কোনো ইউনিটে পদ-বাণিজ্য করিনি।’
২৯তম সম্মেলনে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব আসার বয়সসীমা অনূর্ধ্ব ২৯ বছর ছিল। দুই বছর মেয়াদি কমিটির সম্মেলন ৪ বছর ৭ মাস পরে হওয়ায় এবারের সম্মেলনে বয়সসীমা কত হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থিতার ফরম জমা দিয়েছেন ২৫৪ জন। তাঁদের মধ্যে সভাপতি প্রার্থী ৯৬ জন এবং সম্পাদক প্রার্থী ১৫৮ জন।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, তাঁরা দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে সংক্ষিপ্ত তালিকা দেবেন। তিনি সেগুলো থেকে কিংবা ব্যক্তিগত যাচাই-বাছাই করে তার বাইরে থেকে নেতা নির্বাচন করে দেবেন।
ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বয়সের বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি, কিন্তু এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এবার যেহেতু করোনাসহ বিভিন্ন ক্রাইসিস সময় আমরা পার করছি, তাই এ ব্যাপারে নতুন সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’
আজ ৬ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই শীর্ষ নেতার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতার নাম ঘোষণা করা হবে।
পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন সোহান খান, সাদ্দাম হোসেন, সৈয়দ আরিফ হোসেন, ইয়াজ আল রিয়াদ, কামাল খান, মাজহারুল ইসলাম শামীম, তাহসান আহমেদ রাসেল, সাদ বিন কাদের চৌধুরী, বরিকুল ইসলাম বাধন, তানভীর হাসান সৈকত, ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী সজীব, আবু হাসনাত সরদার হিমেল, ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত, হায়দার মোহাম্মদ জিতু, আব্দুল্লাহ হীল বারী, রনি মুহাম্মদ, তিলোত্তমা শিকদার, ফরিদা পারভীন, তানভীর রহমান মাহিদ, জয়দীপ দত্ত (জয়াজৎ), খাদিমুল বাশার জয়, আরিফুজ্জামান ইমরান, শেখ ওয়ালী আসিফ (ইনান), ফাল্গুনী দাস তন্বী, তারেক আজীজ, শেখ মেহেদী হাসান, রফিকুল ইসলাম সবুজ, শরীফ বায়েজিদ ইবনে মাহমুদ কোতওয়াল, ইমরান জমাদ্দার।
ছাত্রলীগের আগামীর নেতৃত্বে কারা আসবেন, তা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চূড়ান্ত করবেন বলে আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তবে তিনি বলেন, ‘বিতর্কিত কাউকে যেমন বানানো হবে না, এ ছাড়া বিতর্কের ঊর্ধ্বে সেরাদের সেরাকেই নেতা বানানো হবে।’
ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস ছাত্রলীগের ইতিহাস। সেই জায়গা তাঁরা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করবেন, এটাই প্রত্যাশা।