স্মার্ট ভূমি সেবা প্রদান এবং সরকারি স্বার্থ রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয় এসিল্যান্ড ঝিনাইগাতীর অনলাইন ডেস্ক অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ, মে ১৩, ২০২৩ হারুন অর রশিদ দুদু : উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা অনেকাংশে কঠিন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর অন্যতম কাজ হচ্ছে সরকারী খাস জমি, অর্পিত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা, ভূমি উন্নয়ন কর আদায় এবং নামজারি করা। খাস জমি ও অর্পিত সম্পত্তি সমূহ অনেক ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে। ফলে খাস জমি বা অর্পিত সম্পত্তি উদ্ধার করার ক্ষেত্রে অনেকের রোষানলে পড়তে হয়। এই চ্যালেঞ্জিং কাজটি নিখুতভাবে করে যাচ্ছেন শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আশরাফুল কবীর। ইতোমধ্যে তিনি তার কর্মকান্ডের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন। খাস জমি উদ্ধারঃ সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আশরাফুল কবীর যোগদানের পর থেকে নিয়মিতভাবে বেদখলকৃত খাস জমি উদ্ধার করে যাচ্ছেন। একই সাথে লীজ বিহীন অবস্থায় যারা অর্পিত সম্পত্তি দখলে রেখেছেন তাদেরকে নোটিশ প্রদান করে যাচ্ছেন। যারা লীজ নবায়ন করছেন না তাদের জমি দখলে নিয়ে নতুন করে লীজ প্রদানের ব্যবস্থা করছেন। উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এপ্রিল ২০২৩ মাস পর্যন্ত প্রায় ছয় একর খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে যার বাজার মূল্য আনুমানিক আট কোটি টাকা। উদ্ধারকৃত এসব ভূমি নীতিমালা অনুযায়ী ভূমিহীনদের মাঝে বন্দোবস্ত প্রদান করা হবে বলে জানা গেছে। অর্পিত সম্পত্তি হতে প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষাধিক টাকা লীজ মানি হিসেবে আদায় করা হয়েছে যা ঝিনাইগাতীতে এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ আদায়। রেকর্ড পরিমাণ ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ঃ সারাদেশে ১৪ এপ্রিল, ২০২৩ হতে শতভাগ অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করার নির্দেশনা জারি হয়েছে। কিন্তু শেরপুরের জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তারের নির্দেশনায় ঝিনাইগাতী উপজেলায় নভেম্বর ২০২২ হতেই শতভাগ অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হচ্ছে। উপজেলা ভূমি অফিসের উদ্যোগে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঝিনাইগাতীতে প্রথমবারের মতো পনেরো দিন ব্যাপী ভূমি উন্নয়ন কর মেলার আয়োজন করা হয়েছিলো। উপজেলার প্রতিটি মসজিদে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানের গুরুত্ব তুলে ধরে খুতবা প্রদানের জন্য ব্যবস্থা করা হয়। কৃষকদের অংশগ্রহণে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান বিষয়ক উদ্বুদ্ধকরণ সভা আয়োজন করা হয়। এসব প্রচার প্রচারণার কারণে ঝিনাইগাতীতে রেকর্ড পরিমাণ ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হয়েছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল কবীর জানান, চলতি অর্থ বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রায় এক কোটি টাকা ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা হয়েছে যা বিগত অর্থ বছরের তুলনায় তিন গুণেরও বেশি। ইতোপূর্বে সর্বোচ্চ আদায় ছিল বিয়াল্লিশ লক্ষ টাকা। ভুয়া ওয়ারিশান সনদ দাখিল করে নামজারি বন্ধঃ ওয়ারিশ সূত্রে জমির মালিকানা পরিবর্তিত হলে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত ওয়ারিশান সনদমূলে নামজারি করতে হয়। ফলে অনেকক্ষেত্রে ওয়ারিশান গোপন করে বিশেষ করে নারীদের বঞ্চিত করে ভুয়া ওয়ারিশ সনদ দাখিল করে নামজারি করে নেয়ার প্রবণতা ছিল। এই প্রতারণা বন্ধে সহকারী কমিশনার ভূমি বিশেষ কিউআর কোড সম্বলিত ওয়ারিশান সনদের ফরম্যাট তৈরি করে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানগণকে সরবরাহ করেন। ফলে জাল বা ভুয়া ওয়ারিশান সনদের মাধ্যমে জমি হস্তান্তর বন্ধ করা গেছে। স্বল্প সময়ে নামজারিঃ জমির নামজারি বা খারিজ প্রদান ভূমি অফিসের অন্যতম প্রধান সেবা। প্রতিমাসে এ উপজেলায় গড়ে তিনশত জন এই সেবা নিয়ে থাকেন। নামজারিকে কেন্দ্র করে ভূমি অফিসে দালাল শ্রেণীর উদ্ভব হয়ে থেকে। বিশেষ করে দলিল লেখকগণ এই কাজে জড়িত থাকেন মর্মে জানা গেছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আশরাফুল কবীর নামজারিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেন গণবিজ্ঞপ্তি জারির পরেও যদি কোন দালাল/মধ্যস্বত্বভোগী অফিস চত্বরে প্রবেশ করে তবে তাকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা প্রদান করা হবে। তিনি আরো বলেন, ঝিনাইগাতী উপজেলা ভূমি অফিস দেশে দ্রুততম সেবা প্রদানকারী অফিসসমূহের মধ্যে অন্যতম। এই অফিসে মাত্র সতেরো দিনে নামজারি আবেদন নিষ্পত্তি করা হচ্ছে যেখানে সারা বাংলাদেশে গড় নিষ্পত্তির সময় একত্রিশ দিন। মিসকেস নিষ্পত্তিঃ নামজারি রিভিউ মামলা, খতিয়ানের করণিক ভুল সংশোধন, দেওয়ানী আদালতের রায়ের মাধ্যমে খতিয়ান সংশোধন প্রভৃতি সেবা পেতে মানুষের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। বছরের পর বছরেও মিলে না এসব সেবা। কিন্তু ঝিনাইগাতী উপজেলা ভূমি অফিসের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আশরাফুল কবীর বলেন, আমি যোগদানের সময় দুইশত বিয়াল্লিশটি মিসকেস অনিষ্পন্ন ছিল যার বেশিরভাগই এক থেকে দুই বছরের পুরনো ছিলো। পুরনো মিসকেসসমূহ নিষ্পত্তি করাকে আমি ফার্স্ট প্রায়োরিটি দেই। মাত্র দুই মাসের মধ্যে সব মিসকেস নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হই। বর্তমানে এক থেকে দেড় মাস সময়ের মধ্যে মিস কেসসমূহ নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে। জনতার এসিল্যান্ডঃ সাধারণত ভূমি অফিসে ঢুকে এসিল্যন্ডের সাথে কথা বলার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ কিছুটা সংকোচ বোধ করেন। কিন্ত ঝিনাইগাতী উপজেলা ভূমি অফিসে ঢুকে যে কেউ ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে এসিল্যান্ডের সাথে নির্ভয়ে কথা বলতে পারেন। এর কারণ হলো এসিল্যান্ড নিজেই রুমের বাইরে এসে অপেক্ষারত সেবা প্রার্থীদের সাথে কথা বলেন। তাদের অভাব অভিযোগ মনযোগ সহকারে শুনেন। তাৎক্ষণিকভাবে সেবাটি তার আওতায় থাকলে তিনি তা প্রদান করেন অন্যথায় আইনানুগ পরামর্শ দিয়ে দেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আশরাফুল কবীর বলেন, জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার স্যারের দিক নির্দেশনায় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারুক-আল-মাসুদ স্যারের তত্ত্বাবধনে উপজেলা ভূমি অফিসে আসা সকল সেবাগ্রহীতার জন্য জনবান্ধব সেবা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। একজন মানুষও যাতে ভোগান্তির শিকার না হয় সেজন্য আমরা সর্বদা তৎপর রয়েছি। তবে আইনগত সীমাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন সময় সেবাগ্রহীতাদের চাহিত সকল সেবা প্রদান করা সম্ভব হয় না। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের লক্ষ্যে আমরা সেবাগ্রহীতগণকে স্মার্ট ভূমি সেবা প্রদান শুরু করেছি। ভবিষ্যতে এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারবো বলে আমার। Related posts:ঝিনাইগাতীতে রাতের আধারে সবজি (শিম) বাগান কেটে দিলো দুস্কৃতিকারীরাদেশে কুরআনের আইন চালু ব্যতিত বৈষম্য দূর হবে না : নকলায় জেলা জামায়াতের আমিরশেরপুরে সাজ্জাত হত্যার আসামিদের গ্রেফতার-ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ Post Views: ৩৮৬ SHARES শেরপুর বিষয়: