নালিতাবাড়ীতে মাদ্রাসার ওয়াকফ করা জমি নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত ৩৩, আটক ৮

প্রকাশিত: ১:১৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২১, ২০২৪

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে মাদরাসার নামে ওয়াকফকৃত জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ৩৩ জন আহত হয়েছেন। ২০ জানুয়ারি শনিবার সকালে উপজেলার কলসপাড় ইউনিয়নের গোল্লারপাড় এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৮ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। ওই ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় ১০ জনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৪০ বছর পূর্বে উপজেলার কলসপাড় ইউনিয়নের গোল্লার পাড় ইবতেদায়ী মাদরাসা নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ওই এলাকার মৃত সফর উদ্দিন, মৃত নীল মাহমুদ ও মৃত ছাবেদ আলী মিলে মোট ১ একর ৫ শতাংশ জমি ওয়াকফ করে দেন। বর্তমানে ইবতেদায়ী মাদরাসা প্রতিষ্ঠানটি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় মাদরাসার ওয়াকফকৃত সম্পত্তি দাতার ওয়ারিশগণ ভোগ করে আসছিল।
পরবর্তীতে পার্শ্ববর্তী গোল্লারপার মদিনাতুল উলুম কওমি মাদ্রাসা নামে নতুন একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে আগের বিলুপ্ত হওয়া মাদরাসার সম্পত্তির উপার্জিত অর্থের অংশ কওমি মাদরাসায় দান করে আসছিল কর্তৃপক্ষ। পরে ওয়াকফকৃত সম্পত্তির উপার্জিত অংশ ওই কওমি মাদরাসার নামে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে কওমি মাদরাসার সভাপতি উসমান গনি ও সাধারণ সম্পাদক হাফেজ আলীর মাঝে বিরোধ বাঁধে।
এতে সভাপতি উসমান গনি চলমান বোরো আবাদে ওই জমি চাষ করে লাগানোর প্রস্তুতি নিলে সাধারণ সম্পাদক হাফেজ আলীর লোকজন গতকাল শুক্রবার ওই ক্ষেতে ধা‌নের চারা রোপণ করে। এনিয়ে শনিবার সকাল ৯ টার দিকে সভাপতি উসমান গনির নেতৃত্বে কয়েকশত লোকজন সাধারণ সম্পাদক হাফেজ আলী ও তার স্বজনদের বাড়িতে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে। এতে ৩টি দোকান ঘর ও ৩টি অটোরিকশা ভাংচুর করে তাঁরা।
ওইসময় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে উভয় পক্ষের মাঝে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ৩৩ জন আহত হন। পরে আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ও জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে বেশ কয়েক জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে ৭ জন নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন।
এছাড়াও গুরুতর আহত মো, মামুন, আজাদ মিয়া, ‌মো,মাসুদ ও বাক্কি মিয়াসহ ১০ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মোস্তফা কামাল বলেন, ওই ঘটনায় ৩৩ জন আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। গুরুতর ১০ জনকে রেফার্ড করা হয়েছে ও ৭ জন হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়াও বাকীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।
এদিকে খবর পেয়ে নালিতাবাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার দিদারুল ইসলাম ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল আলম ভূঁইয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ওইসময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বল্লম, লাঠিসোঠা ও কুড়ালসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে।
অ‌ভি‌যোগ সম্প‌র্কে জান‌তে কওমি মাদরাসার সভাপতি উসমান গনি ও সাধারণ সম্পাদক হাফেজ আলীর মু‌ঠো‌ফে‌া‌নে যোগা‌যোগ করা হ‌লে দুইজনের ফোনই বন্ধ পাওয়া যায়।
নালিতাবাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার দিদারুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৮ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।