যেসব জলদস্যু ফিরে আসেননি তাদের ছাড় নেই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৭:৪১ অপরাহ্ণ, মে ৩০, ২০২৪

যেসব জলদস্যু ফিরে আসেননি তাদের ছাড় নেই বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘যারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন, তাদের ধন্যবাদ জানাই। আর যারা ফিরে আসেননি, আমরা তাদের কাউকে ছাড় দেব না। যে কোনো মূল্যে অপরাধীদের দমন করব। তারা যেন অপরাধ করার চিন্তাও না করে।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা র‌্যাব-৭ সদর দপ্তরের এলিট হলে আয়োজিত জলদস্যু আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে অপরাধীদের উদ্দেশে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ১২টি বাহিনীর ৫০ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেন। দেশে প্রথমবারের মতো একজন নারী জলদস্যুও আত্মসমর্পণ করেছেন। দস্যুদের কাছ থেকে ৯০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২৮৩টি গুলি জমা পড়েছে।
জলদস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জলদস্যুতা আপনাদের জীবনে কখনও শান্তি ফিরিয়ে আনবে না। আমরা খুব শিগগির সমস্ত অঞ্চল জলদস্যু ও ডাকাতমুক্ত ঘোষণা করব। আমরা কাউকে ক্ষমা প্রদর্শন করবো না। যারা এ পেশা ত্যাগ করবে না, তারা কী দুঃসংবাদ লিখে নিয়ে যাবেন, সেটা মহান আল্লাহ জানেন। কাউকে ক্ষমা করা হবে না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘চট্টগ্রামসহ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। এসব এলাকায় জলদস্যুরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। সুন্দরবনে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান রক্ষায় ২০১২ সালে র‌্যাবের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স গঠন করে তাদের দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। র‌্যাবের দুঃসাহসিক অভিযানে সুন্দরবন জলদস্যুমুক্ত হয়। ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘জলদস্যুরা যাতে আর সে কাজে ফিরতে না পারে তাদের আর্থিক অনুদান দেওয়া হচ্ছে। আজ তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। কেউ ব্যবসা করছে বা অন্য কাজ করছে। সুন্দরবনে জলদস্যুদের ভালো অবস্থা দেখে আজ অন্যরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।’
নারী জলদস্যু আত্মসমর্পণের প্রসঙ্গ তুলে মন্ত্রী বলেন, ‘একজন মহিলা জলদস্যুও আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। তারা কখনও অত্যাচারিত বা নিপীড়িত হয়ে বাধ্য হয়ে এসব কাজে জড়িয়ে থাকেন। স্থানীয় প্রভাবশালী লোকেরাও তাদের বাধ্য করেন এসব কাজে জড়াতে।’
পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘জনগণের শান্তির জন্য পুলিশের সঙ্গে র‌্যাব কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। সুন্দরবন জলদস্যুদের আস্তানা ও আধিপত্য ছিল। প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত করেছেন। যেটা র‌্যাবের মাধ্যমে হয়েছে। জলদস্যুদের সুন্দর জীবনে ফিরিয়ে আনতে সরকার বিভিন্ন কাজ করছে। জাল, নৌকা, দোকান দেওয়া হয়েছে। ঘর করে দেওয়া হয়েছে। দুবলার চরে সুপেয় পানির জন্য র‌্যাব ওয়াটার প্ল্যান্ট করে দিয়েছে।’
র‌্যাবের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শরীফ উল আলম জানান, ১২টি জলদস্যু বাহিনীর ৫০ জন জলদস্যু রয়েছে। এর মধ্যে তিনজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত জলদস্যু ও একজন নারী জলদস্যু রয়েছে। বাহিনীগুলোর মধ্যে জসিম বাহিনীর ছয়জন, কালু, মিন্টু ও বদল্ল্যা ডাকাত বাহিনীর পাঁচজন করে ১৫ জন, মাহমুদুল করিম, রমিজ, ইয়ার আলী, সুলতান ও কালা রশিদ বাহিনীর ৩ জন করে ১৫ জন, নাছির বাহিনী ও জালাল বাহিনীর ২ জন করে ৪ জন ও অন্যান্য বাহিনীর ১০ জন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফ, র‌্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল মাহাবুব আলম, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নূরে আলম মিনা ও র‌্যাব-৭-এর অধিনায়ক মাহবুব আলম।