নালিতাবাড়ীতে গৃহবধূর আত্মহত্যার ঘটনায় স্বামীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা অনলাইন ডেস্ক অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ৯:৫১ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৫, ২০২৪ শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় সাত পৃষ্ঠার চিঠি লিখে বাবার বাড়িতে ফাঁসিতে ঝুলে গৃহবধূর জান্নাতুল ফেরদৌসী (১৯) আত্মহত্যার ঘটনায় স্বামীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনায় থানায় মামলা হয়েছে। ১৪ জুলাই রবিবার রাতে নিহত গৃহবধূর বাবা বাদী হয়ে ওই মামলা করেন। এতে নিহত জান্নাতুলের স্বামী মো.শিপন মিয়া (২৫), শ্বশুর, শাশুড়ি ও ননদকে আসামি করা হয়েছে। নিহত গৃহবধূর জান্নাতুল ফেরদৌসী উপজেলার বিশগিরিপাড়া গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিকের মেয়ে। এর আগে গত ১৩ জুলাই শনিবার রাতে নানা বিষয় নিয়ে অভিমান করে সাত পৃষ্ঠার চিঠি লিখে বাবার বাড়িতে ঘরের আড়ার সাথে ওড়না পেচিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসী ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জান্নাতুল ফেরদৌসী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। তার সাথে এক সেনা সদস্যের বিয়ের কথা হয়। পরে ছেলে পক্ষে দেওয়া-পাওনা নিয়ে সম্পর্কটা আর বিয়ে পযন্ত গড়ায়নি। ওই সেনাসদস্যের ওপর বিরক্ত হয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসী সেনাবাহিনীর কাওকে জীবন সঙ্গি করার স্বপ্ন দেখেন। এর কিছুদিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সেনাবাহিনীর পোষাক পরিহিত শেরপুর সদরের সাপমারী এলাকার শিপন নামে এক যুবকের সাথে বন্ধুত্ব হয়। ওই যুবক নিজেকে সেনা সদস্য হিসেবে পরিচয় দেন। এই পরিচয়ে দুজন প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। গত বছর নভেম্বর মাসে পরিবারের অমতে শিপন জান্নাতুল পালিয়ে বিয়ে করে ফেলেন । বিয়ের পরে জান্নাতুল জানতে পারেন শিপন সেনা সদস্য নয়। তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রীর সহকারী। শিপনের বড় ভাই সেনাবাহিনীতে কমরত আছেন। এই সুযোগে শিপন তাঁর দেওয়া গেঞ্জি পোষাক পরে ফেসবুকে পোস্ট দিতেন। এই সময়ের মধ্যে শিপন জান্নাতুলকে দিয়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা ঋণ করান। পরে শিপন স্ত্রীর কাছে চাকুরী নেওয়ার কথা বলে ৮ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। এ নিয়ে স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। জান্নাতুল চার মাস আগে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি চলে আসেন। শিপন তাঁর শ্বশুড় বাড়িতে কয়েকবার যাতায়াত করেন। যৌতুক দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে জান্নাতুল স্বামীর বাড়িতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মৃত্যুর আগে ৭ পৃষ্টার চিঠি লিখে শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাবার বাড়িতে আত্মহত্যা করেন। গত রবিবার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ ও চিঠি উদ্ধার করেন। ময়নাতদন্ত শেষে রোববার রাতেই জান্নাতুলের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। জান্নাতুল চিঠিতে স্বামীর উদ্দেশ্যে লেখেন, ‘ অনেক ভালোবাসি তোমাকে শিপন। কিন্তু তুমি শেষ পর্যন্ত তোমার সঙ্গে থাকতে দিলা না। ‘অনেক ইচ্ছে ছিল আমাদের সন্তান হবে, আমাকে মা ডাকবে। আর হলো না। দেখ, তুমি সব পাবে, শুধু আমি থাকব না। আমার সঙ্গে যেমন মিথ্যা বলেছ, আর কারও সঙ্গে বলো না।’ তিনি আরো লিখেন, আমি চাই না,আমার মেয়ের মত আর কেও যেন এই ভাবে প্রতারণার শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে না নেয়। নিহত জান্নাতুলের মাহমুদা বেগম বলেন,আমাদের মেয়ের সাথে শিপন প্রতারণা করে বিয়ে করছে। আমাদের মেয়েকে দিয়ে ঋণ করিয়েছেন। মেয়ে একার সিদ্ধান্তে বিয়ে করার সব কিছু মুখ বুঝে সহ্য করেছে। আমার মেয়ে ঋণের ও যৌতুকের চাপে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। আমি এর সঠিক তদন্তের মাধ্যমে শিপনসহ অভিযুক্তদের বিচার চাই। এ ব্যাপারে শিপনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.মনিরুল আলম ভূইয়া বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনায় মেয়ের বাবা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। Related posts:নিখোঁজের ৬ দিন পরও সন্ধান মেলেনি শেরপুরের শিক্ষার্থী সুমন মিয়ারশেরপুরে ব্রিজের নিচ থেকে অজ্ঞাত নারীর মরদেহ উদ্ধারশেরপুরে ছাত্র জনতার আন্দোলনে গাড়িচাপায় মাহবুব হত্যা মামলায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার Post Views: ৮৭ SHARES শেরপুর বিষয়: