বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম প্রথমবারের মতো আউন্সপ্রতি ৩০০০ ডলারে পৌঁছাল অনলাইন ডেস্ক অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ১:৫৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৫, ২০২৫ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি এবং ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার উদ্বেগের প্রভাব পড়েছে বিশ্বের স্বর্ণের বাজারে। বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিনিয়োগের সন্ধান করছেন, যার প্রভাবে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গতকাল শুক্রবার স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্স (২.৪৩ ভরি) ৩ হাজার ডলারে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩ লাখ ৬৪ হাজার ১৭০ টাকা) পৌঁছেছে। এ হিসাব অনুযায়ী, ১ ভরি স্বর্ণের দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮৬৪ টাকা। যুক্তরাজ্যের সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংস্থা এভলিন পার্টনার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেসন হল্যান্ডস স্বর্ণকে ‘অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাকালে পছন্দের সম্পদ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, সর্বশেষ মূল্যবৃদ্ধি ‘বিশ্ব বাণিজ্যব্যবস্থার চরম অনিশ্চয়তার প্রতিফলন’। আর এটি সৃষ্টি হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের অপ্রত্যাশিত ও আক্রমণাত্মক শুল্কনীতির কারণে। গতকাল শুক্রবার সাবেক মার্কিন অর্থমন্ত্রী ল্যারি সামারস সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদের মার্কিন অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগের একটি লক্ষণ। তিনি আরও বলেন, ‘এই অনিশ্চয়তার মধ্যে, একমাত্র সম্পদ যা ভালো করছে, তা হলো স্বর্ণ। মানুষ তখনই স্বর্ণ কেনে, যখন তারা দেশের পরিচালকদের ওপর আস্থা হারায়।’ গত বুধবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা সব ধরনের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন দ্রুত পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এরপর বৃহস্পতিবার ট্রাম্প আরও বড় পদক্ষেপ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। যদি তারা মার্কিন মদ ও মদজাত দ্রব্যের ওপর আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার না করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে ইউরোপীয় অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন তিনি। ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির কারণে যে অস্থিরতা ও বিলম্বের সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলো ব্যবসায় অনিশ্চয়তার জন্ম দিচ্ছে, যার প্রভাবে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বিনিয়োগের পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধও স্বর্ণের দামের ঊর্ধ্বগতির একটি কারণ। ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে স্বর্ণের দাম দীর্ঘ মেয়াদে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। রয়্যাল লন্ডন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগকারী ট্রেভর গ্রিথাম উল্লেখ করেন, ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে স্বর্ণের দাম প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো, বিশেষ করে চীনের পিপলস ব্যাংক, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাজেয়াপ্ত হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে স্বর্ণ মজুত করছে, যেমনটা রাশিয়ার ক্ষেত্রে ঘটেছিল।’ সুকডেন ফাইন্যান্সিয়ালের গবেষণা বিশ্লেষক ভিক্টোরিয়া কুসজাক বলেন, ‘রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করায় ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বেড়েছে।’ গত বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতির পক্ষে মত দিলেও কঠোর শর্ত আরোপ করেছেন এবং কিয়েভের কাছ থেকে বড় ধরনের ছাড় দাবি করেছেন। আরেকটি কারণ হলো সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের দুর্বল অবস্থা, যা স্বর্ণের দামের জন্য সহায়ক হয়েছে। এভলিন পার্টনার্সের হল্যান্ডস বলেন, ‘স্বর্ণের দাম সাধারণত ডলারে নির্ধারিত হয়, তাই ডলার দুর্বল হলে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের ক্রেতাদের জন্য আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।’ উল্লেখ্য, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সর্বশেষ ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, দেশের বাজারে বর্তমানে প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৬২ টাকা; ২১ ক্যারেট ১ লাখ ৪৪ হাজার ০০৪ টাকা; ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ২৩ হাজার ৪২৮ টাকা; সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণ ১ লাখ ১ হাজার ৬৪১ টাকা। Related posts:রেমিট্যান্সে সুবাতাস : আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ডলারস্বর্ণের দাম ভরিতে কমলো ৩১৩৮ টাকাঋণখেলাপিদের জেলে না পাঠিয়ে টাকা আদায় করতে হবে : অর্থমন্ত্রী Post Views: ৪৫ SHARES অর্থনৈতিক বিষয়: