আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে নকলার মাটির শিল্প

প্রকাশিত: ৩:৫৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৩, ২০২৫

আব্দুল্লাহ আল-আমিন, নকলা (শেরপুর): বাঙালি জাতির পুরোনো ঐতিহ্যের মধ্যে মাটির তৈজসপত্র বা মৃৎশিল্প অন্যতম। কিন্তু প্লাস্টিক, স্টিল, কাচ ও সিরামিক পণ্যের সহজলভ্য ও সহজপ্রাপ্যতার প্রভাবে পুরোনো এই ঐতিহ্য আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে পূর্ব পুরুষের মৃৎশিল্পের এ পেশাকে সময় ও শ্রম বিনিয়োগ করে জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমে এখনও ধরে রেখেছেন শেরপুরের নকলা উপজেলার গণপদ্দী ইউনিয়নের বিহাড়িরপাড় এলাকার পাল সম্প্রদায়ের অর্ধশত পরিবারের লোকজন।

বিভাগীয় শহরসহ বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে এখানকার মাটির তৈরি পণ্য। বড় বড় শহরের সৌখিন মাটিপণ্যের দোকানসহ জেলা-উপজেলার প্রায় অর্ধ শতাধিক বাজারে ওই গ্রামের মৃৎশিল্পের কারিগরদের তৈরি জিনিসপত্র বেচাকেনা হয়।


এই শিল্পের চাহিদা বছরের অন্য সময়ে কম থাকলেও, বাণিজ্য মেলা ও পহেলা বৈশাখসহ বিভিন্ন মেলাতে মাটির তৈরি জিনিসপত্র ছাড়া যেন জমেই না। তবে প্লাস্টিক, স্টিল, কাচ ও সিরামিকের তৈরি দৃষ্টিনন্দন বাহারী পণ্যের দাপটে হাতের তৈরি মাটির পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। তাই মৃৎশিল্পীরা আগের মতো সারা বছর চরকা ঘুরিয়ে মাটির পণ্য তৈরি করেন না।
সরেজমিনে দেখা যায়, আসন্ন পহেলা বৈশাখের মেলাকে সামনে রেখে মৃৎপণ্য বানাতে উপজেলার বিহারীপাড় গ্রামে নারী-পুরুষ ও শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। কেউ মাঠ থেকে মাটি আনছেন, কেউ মাটি পানির মিশ্রণে কাই তৈরি করছেন, আবার হাতে বা চাকী ঘুরিয়ে নিত্যব্যবহার্য পণ্য তৈরি করছেন। তাদের পণ্যগুলোর মধ্যে কলস, পেয়ালা, ঢাকনা, পুতুল, হাড়ি, পাতিল, পিঠা বানানোর পাত্র, খাদা, (মাটির থালা) ফুলের টব, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। যেনো মাটিই তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।
মৃৎশিল্পীদের দেয়া তথ্য মতে, একদিন মাটি সংগ্রহ করে পরের দিন কাই/লেই তৈরি করতে হয়। তারপর পণ্য তৈরি করে কয়েক ঘন্টা আগুনে পোড়াতে হয়। ওই ৩ দিন কাজ করে প্রতি জনে মোট ২৫০ থেকে ৪৫০টি পণ্য তৈরি করতে পারেন। তাদের তৈরি মাটির প্রতিটি পণ্যের আকার-আকৃতি ও গুরুত্বের উপর ভিত্তি করে পাইকারি প্রতিপিস ২ টাকা থেকে ৮০ টাকা করে এবং খুচরা প্রতিপিস ৫ টাকা থেকে ১০০ টাকা করে বিক্রি করা হয়।


মাটি ক্রয় করা, মাটি পরিবহণ করা, মাটি মিশানো, তৈরীকৃত পণ্যে রং করা, পুড়ানোসহ যে টাকা ব্যয় হয়। বিক্রি শেষে লাভ থাকেনা বললেই চলে। তাই এখন শুধুমাত্র এই পেশার আয় দিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচসহ সংসার খরচ চালানো সম্ভব হয়না। বাধ্য হয়েই অনেকে এই পেশার পাশাপাশি বিভিন্ন পেশায় মনোনিবেশ করেছেন।
সরকারি সহযোগিতার জন্য একাধিকবার নামের তালিকা নিলেও কোনো প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা পায়নি বলেও এই এলাকার মৃৎশিল্পীদের অনেকেই অভিযোগ জানিয়েছেন। এমতাবস্থায় যুগ যুগ ধরে চলে আসা পরিবেশবান্ধব নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় ও বাণিজ্যিক সামগ্রী তৈরির এ ক্ষুদ্র শিল্পগোষ্ঠীকে টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতাসহ সার্বিক সহযোগিতার দাবি সুশীল জনদের।