পবিত্র আশুরা আজ

প্রকাশিত: ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৬, ২০২৫

শোক, ত্যাগ আর প্রতিবাদের গৌরবময় স্মৃতি বিজড়িত আরবি মহররম মাসের ১০ম দিন, পবিত্র আশুরা আজ। দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে গভীরভাবে শোকাবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, আজকের এ-ই দিনেই কারবালার প্রান্তরে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যাকাণ্ড স্মরণে দিনটি পালিত হয় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও গভীর আবেগে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে বাংলাদেশেও নানা ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ও কর্মসূচি রয়েছে। তবে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য রক্ষার পাশাপাশি জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়েছে কড়া প্রস্তুতি।
ঢাকা মহানগরীতে আশুরা উপলক্ষ্যে তাজিয়া মিছিলের সময় যেকোনো ধরনের বিপজ্জনক বস্তু বহনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। গত ২ জুলাই জারি করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মিছিলে দা, ছোরা, তলোয়ার, বল্লম, বর্শা, কাঁচি, লাঠিসহ কোনো ধরনের অস্ত্র বা বিপজ্জনক বস্তু বহন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ সরওয়ার স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ, ১৯৭৬-এর ২৮ ও ২৯ ধারা অনুযায়ী এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং তা মিছিল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
এদিকে আশুরা উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কারবালার আত্মত্যাগকে ‘ন্যায়-ইনসাফের জন্য সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত’ হিসেবে আখ্যা দেন।
তিনি বলেন, ইমাম হোসেন (রা.) এর শাহাদাত অন্যায়, অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক আদর্শিক সংগ্রামের নিদর্শন। যারা মানবতা ভুলুণ্ঠিত করে ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে পড়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ইমাম বাহিনী প্রাণ উৎসর্গ করেছিল। আজও সেই আত্মত্যাগ পৃথিবীর নিপীড়িত জনগণকে সাহস জোগায়।
তিনি আরও বলেন, আজকের ফ্যাসিবাদী শাসন, গণতন্ত্রহীনতা, ভোটাধিকার হরণ, গুম-খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে কারবালার আত্মত্যাগের আদর্শ ধারণ করেই।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে দেওয়া অপর এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, জুলুম ও অবিচারের বিপরীতে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আশুরা আমাদের চেতনায় শক্তি ও সাহস যোগায়। কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসেন (রা.) ও তার সঙ্গীদের আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ইসলামের শান্তিপূর্ণ আদর্শ রক্ষায় তাদের এই আত্মদান শুধু শোকের নয়, বরং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অনন্য দৃষ্টান্ত। মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের আশুরার চেতনাকে লালন করতে হবে।
মূলত, কারবালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আশুরার ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছাড়াও এই দিনটিকে ইসলামি ঐতিহ্যে একটি ফজিলতপূর্ণ দিন হিসেবেও দেখা হয়। বিভিন্ন হাদিসে আশুরার দিনে রোজা রাখার গুরুত্বের কথা বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (সা.) নিজেও আশুরার দিনে রোজা রাখতেন এবং অনুসারীদের তা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন।
ফলে, আশুরার দিনে মুসলমানরা নানা ইবাদত, দোয়া-মোনাজাত এবং সমাজকল্যাণমূলক কাজের মধ্য দিয়ে কারবালার আত্মত্যাগের মহিমা স্মরণ করে। দেশের শিয়া সম্প্রদায়ের পাশাপাশি সুন্নি মুসলমানরাও এই দিনটিকে আত্মশুদ্ধি ও ন্যায়প্রতিষ্ঠার অনুপ্রেরণার দিন হিসেবে পালন করে আসছেন যুগ যুগ ধরে।