খুনিদের উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হত্যা করা : জামালপুরে কৃষিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২০

জামালপুর প্রতিনিধি :  বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য, কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্র বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। খুনিদের উদ্দেশ্যই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হত্যা করা। তাদের কারণেই বঙ্গবন্ধু একটি অসাম্প্রদায়িক, ন্যায় ও সমতার ভিত্তিতে একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা করে যেতে পারেন নাই। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী চক্রটি এখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।’

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন উপলক্ষে ১৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে জামালপুর জিলা স্কুল মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এসব কথা বলেন। পূর্ব ঘোষিত প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক  এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শারীরিক অসুস্থতার কারণে জামালপুরে আসতে পারেননি।

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিএনপিনেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন শেখ হাসিনা না পালানো পর্যন্ত তিনি ঘরে ফিরে যাবেন না। কিন্তু মুখে কালিমা মেখে ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে খালেদা জিয়াই ঘরে ফিরে গেছেন। এখন তিনি এতিমের টাকা মেরে খেয়ে জেলখানায় পঁচতেছেন। আর আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে পরিচর্যা করছেন। গণভবনে বসে তিনি বাংলাদেশকে শাসন করছেন। বাংলাদেশকে উন্নয়নের অনেক উচ্চতায় নিয়েছেন। সারা পৃথিবী তাকে প্রশংসা করছে।’

গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সাম্প্রতিক বক্তব্যের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘কামাল হোসেনকে বঙ্গবন্ধু অনেক সম্মান দিয়েছিলেন। আমরাও তাকে সম্মান করি। কিন্তু সেই সম্মান তিনি ধরে রাখতে পারেননি। বঙ্গবন্ধুর আশীর্বাদে তিনি দুইবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। জীবনে তিনি কোনো দিন নির্বাচিত হতে পারেন নাই। এখন তিনি বলেন, লাথথি দিয়ে নাকি আমাদের সরকারকে সরিয়ে দিবেন, পতন ঘটাবেন।’

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘কামাল হোসেন আপনি যাদের হাত ধরে আছেন তারা আগুন জ্বালিয়ে সন্ত্রাস করে, বর্বরতা করে সরকারের পতন ঘটাতে পারে নাই। লাথথি দিতে চাইয়েন না। যারা কামান বন্দুক নিয়ে এসেছিল তারাও আমাদের পায়ের নিচে আত্মসমর্পণ করেছিল। আজকে আপনি কামাল হোসেন যাদের সাথে হাত মিলিয়েছেন, ওই সন্ত্রাসী, নাশকতাসৃষ্টি ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যাকারী বিএনপি-জামায়াত আবারও তারা আমাদের পায়ের নিচে আত্মসমর্পণ করবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন। ঘাতকরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগকে চিরদিনের জন্য মুছে ফেলতে চেয়েছিল। আজকে বঙ্গবন্ধুর খুনি মোশতাক-জিয়াউর রহমানরাই ইতিহাসের পাতা থেকে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে যদি হত্যা না করা হতো তাহলে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা ৪০ বছর আগেই বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিতে পারতাম।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বিএনপিকে প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে বিএনপি আবেদন করেছে এমন কিছু আমাদের প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের হাতে নেই। তিনি দুদকের মামলায় দুর্নীতির দায়ে কারাগারে রয়েছেন। তার মুক্তির বিষয়টি সম্পূর্ণ মহামান্য আদালতের এখতিয়ার। কিন্তু খালেদা জিয়ার মুক্তির নামে বিএনপি যদি নৈরাজ্য সৃষ্টি করে, তারা যদি আবারও জ্বালাও পোড়াও করে দেশে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে তাহলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় তল্লাশি চালিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ঘর থেকে বের করে এনে শাস্তি দিবে।’

জনসভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম তার বক্তব্যে ময়মনসিংহ-জামালপুর-ধানুয়া কামালপুর ও এলেঙ্গা-জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ-বাহাদুরাবাদ ঘাট এই দু’টি সড়কে জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্পের আওতাভুক্ত করে চারলেন সড়কে উন্নিত করাসহ জেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ১৪টি দাবি তুলে ধরেন। তিনি জনসভায় উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে দাবিগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে উপস্থাপন করার অনুরোধ জানান।

জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইনজীবী মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জিএস মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি ও শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক বেগম শামসুন্নাহার চাঁপা, তথ্য প্রতিমন্ত্রী চিকিৎসক মো. মুরাদ হাসান, সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, প্রকৌশলী মো. মোজাফফর হোসেন ও হোসনে আরা বেগম, সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল করিম হীরা, কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ।
এছাড়া জনসভায় স্থানীয়দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জামালপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আঞ্জুমনোয়ারা বেগম হেনা, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মসিউর রহমান বাবু, জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক হুরমুজ আলী হিরো, জেলা যুবলীগের সভাপতি রাজন সাহা, জেলা যুবমহিলা লীগের সভাপতি ফারহানা সোমা, জেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি এমদাদুল হক জুয়েল, জেলা তাঁতী লীগের আহ্বায়ক মো. বদরুদ্দৌজা ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিহাদুল আলম নিহাদ।

জনসভার আগে জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।