বন্ধ হচ্ছেনা শ্রীবরদীর সোমেশ্বরী নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন

প্রকাশিত: ৬:৪৩ অপরাহ্ণ, জুন ১০, ২০২০

তারেক মোঃ আব্দুল্লাহ রানা ॥ কোনো মতেই বন্ধ হচ্ছেনা শেরপুরের সীমান্তবর্তী খারামোরা গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে আসা সোমেশ্বরী নদী থেকে বালু উত্তোলন। এতে ওই গ্রামের প্রায় এক হাজার পরিবার নদী ভাঙনের আতংকে দিন কাটাচ্ছেন।এরই প্রেক্ষিতে ও স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিন গিয়ে কয়েকটি ড্রেজার মেশিন পুড়িয়ে দেন স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। তবে আজো বন্ধ হয়নি বালু খেকোদের বালু উত্তোলন। মঙ্গলবার সরেজমিন গেলে স্থানীয গ্রামবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে বলে ওঠে আসে এমন তথ্য।
জানা যায়, ভারতের পোড়াকাশিয়া হতে বয়ে আসা শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার খারামোরা গ্রামের ওপর বয়ে গেছে সোমেশ্বরী নদী। এ নদীর তীরবর্তী খারামোরা গ্রামে প্রায় এক হাজার পরিবারের বসবাস। এমনকি গ্রামটি ভারতের পোড়াকাশিয়া এলাকার সীমানা ঘেষাঁ। সম্প্রতি স্থানীয় জুবাইদ, আমিন আলী ও এরশাদ আলীসহ সংঘবদ্ধ একটি চক্র ওই নদী থেকে ১০/১২টি শ্যালু মেশিনের ড্রেজার দিয়ে দিনরাত বালু উত্তোলন করে আসছে। এসব বালু বহন করছে মাহিন্দ্র ও শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ট্রলি দিয়ে। এতে ভাঙছে সোমেশ্বরী নদীর পাড়। ফলে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে শতাধিক একর ফসলি জমি, বনভূমি ও একটি পুরাতন কবরাস্থানসহ অর্ধশত বসতবাড়ি। নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাট ও ব্রীজ। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে ভেসে গেছে স্থানীয় কয়েকটি মৎস্য খামারের লাখ লাখ টাকার মাছ। এভাবে বালু উত্তোলন চলতে থাকলে অচীরেই নদী গর্ভে বিলীন হবে ওই গ্রামের আরো শতশত ঘরবাড়ি, সহাস্রাধিক একর আবাদি জমি, রাস্তাঘাট, মৎস্য খামার ও বনভূমি ।
খারামোরা গ্রামের বাসিন্দা ও মৎস্য খামার মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি বিদেশ ছিলাম। কয়েক বছর আগে সেখান থেকে বোড়ি এসে মৎস্য খামার করি। একটি চক্র সোমেশ্বরী নদী থেকে প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে শ্যালো মেশিনের ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছে। এতে আমার মৎস্য খামারের বাঁধ ভেঙে কয়েক লাখ টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এখন আমার ফল ও বৃক্ষের বাগানসহ ঘরবাড়িও হুমকির মুখে।
ওই গ্রামের বাসিন্দা বয়োবৃদ্ধ ময়দান আলী বলেন, আমার জন্ম এইহানেই। এইহানে আমার বাপ দাদার কবরাস্থান ছিল। বালু তোলার কারণে নদীর পাড় ভাইঙা কবরাস্থানটাও অহন নদী অইছে। অহন আমার পুকুরের পাড় ভাঙছে। মেলা ক্ষতি অইতাছে। তিনি আরো বলেন, মাহিন্দ্র ও ট্রলি দিয়ে বালু নিয়ে যায়। এর লাইগা আমগোর চলাচলের রাস্তাডাও ভাঙছে। আমগোর চলাচল করা মেলা কষ্ট অইতাছে। তার প্রতিবেশী আমজাদ হোসেন বলেন, বালু তোলা বন্ধ না অইলে আমগোর সব ঘরবাড়ি নদীতে ভাইঙা পড়বো। এর লাইগা রাতে ঘুমাতেও পারিনা। অবৈধভাবে সোমেশ্বরী নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি তুলেছেন খারামোরা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল ছালাম, লাল চান, মহর আলী, নুর ইসলাম, বাদশা মিয়া, মতি মিয়া, ফেক্কু মিয়া, রুস্তুম আলী, আমজাদ হোসেন, ময়দান আলী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমানা ঘেষাঁ একই গ্রামের হাবেজ আলী, আব্দুল হালিম ও খোকা মিয়াসহ গ্রামবাসীরা। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সত্যতা নিশ্চিত করে খারামোরা গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউপি সদস্র জহুরুল হক বলেন, যারা বালু তুলে তাদের বিরুদ্ধে এই গ্রামের মানুষ কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদেরকে মারপীটের হুমকি দেয়। এ ব্যাপারে শ্রীবরদী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মনজুর আহসান বলেন, এলাকাটি শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমানা। এছাড়াও দূর্গম পাহাড়ি এলাকা। তবুও বালু উত্তোলন বন্ধের জন্যে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।