সরিষাবাড়ীতে জুয়ার আসরে সংঘর্ষে আহত ১০, আটক ২ ॥ নিখোঁজ ৩

প্রকাশিত: ৭:১১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৮, ২০২০

জামালপুর প্রতিনিধি ॥ জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কি.মি. দূরের দুর্গম চরাঞ্চলে জুয়ার আসরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় গভীর যমুনা নদীতে তিনজন জুয়ারি নিখোঁজ হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে অন্তত ১০জন।
উপজেলার পিংনা ইউনিয়নের চর বাশুরিয়া এলাকার যমুনা নদীতে জেগে ওঠা চরে গত বৃহষ্পতিবার (২৬ নভেম্বর) রাতে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পর শনিবার খবর পেয়ে পুলিশ ও ডুবুরি দল সারাদিন ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ নিখোঁজ কাউকে উদ্ধার করতে না পারলেও ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত সন্দেহে দুইজনকে আটক করেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার পিংনা ইউনিয়নে চর বাশুরিয়া এলাকায় গভীর যমুনায় জেগে উঠা চরে দীর্ঘদিন ধরে জুয়ার আসর চলে আসছিল। পাশর্^বর্তী তারাকান্দি পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জকে প্রতিরাতে মোটা অঙ্কের মাসোহারা দিয়ে জামালপুর, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ৪০-৫০ জন জুয়ারি প্রতিদিন দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বাজিতে প্রায় অর্ধকোটি টাকার জুয়ার আসর চালাতো। জুয়ার আসরে আধিপত্য বিস্তার ও টাকার ভাগ-বাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে গত বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় জুয়ারিদের পৃথক তিনটি গ্রুপের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে প্রায় ১০জন জুয়ারি আহত হয়। এদেরমধ্যে ঘটনাস্থলেই তিন জুয়ারি গভীর যমুনা নদীতে নিখোঁজ হয়ে যায়। নিখোঁজ জুয়ারিরা হলো- সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামের শামছুল হকের ছেলে ছানোয়ার হোসেন ছানু (৪০), পাশর্^বর্তী টাঙ্গাইলের গোপালপুুর উপজেলার শাখারিয়া গ্রামের মৃত জমসের খাঁনের ছেলে হাফিজুর রহমান খাঁন (৪৫) ও ভুয়াপুর উপজেলার গোবিন্দাসী গ্রামের ফজল মিয়া (৪০)।


এছাড়া আহতদের মধ্যে সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা নরপাড়া গ্রামের বাহেছ আকন্দের ছেলে আব্দুল মান্নান সরকারকে (৫২) গুরুতর জখম অবস্থায় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় শুক্রবার তারাকান্দি পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে নিখোঁজ তিন জুয়ারির পরিবার পৃথক তিনটি সাধারণ ডায়েরি করে।
এদিকে ঘটনার প্রায় ৩৬ ঘন্টা পর জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শিবলী সাদিকের নেতৃত্বে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল শনিবার সকাল থেকে দিনভর ঘটনাস্থল ও পাশর্^বর্তী স্থানগুলোতে অভিযান চালায়।
এ সময় নিঁেখাজ কাউকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তবে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত সন্দেহে দুইজনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা হলো- সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা ইউনিয়নের বালিয়ামেন্দা গ্রামের সোহেল মিয়া (৩৫) ও টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর উপজেলার চর রামাইল গ্রামের সজিব (৩৫)।
জুয়ায় সংঘর্ষকালে নিখোঁজ হাফিজুর রহমান খাঁনের মা মালেকা খাতুন জানান, তার ছেলে প্রতিদিন দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত বাশুরিয়া চরে জুয়া খেলতে আসতো। ঘটনার দিন বৃহষ্পতিবার সকালে ভাত খাচ্ছিল, এ সময় তার কয়েকজন সহযোগী তাকে ডাকতে আসে। খাওয়া শেষ করেই সে জমি ক্রয়ের জন্য জমানো আট লাখ টাকা নিয়ে জুয়া খেলতে চলে যায়। মধ্যরাতে খবর পাই, সে টাকাসহ নদীতে নিখোঁজ হয়ে গেছে।
জুয়া খেলতে বসা নরপাড়া গ্রামের রামচন্দ্রের ছেলে শ্রীকান্ত জানায়, জুয়ার আসরে খেলা শুরু হওয়ার পর সন্ধ্যার দিকে আমি খেলতে যাই। এসময় হঠাৎ গন্ডগোল শুরু হয়। একপক্ষ অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করলে কয়েকজন গুরুতর জখম হয়। আমি নদী সাঁতরে কোনোরকম প্রাণে বেঁচে যাই।
আহত জুয়ারি আব্দুল মান্নানের স্ত্রী ঝাওয়াইল ইউনিয়নের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য রমনী বেগম জানান, সংঘর্ষে তার স্বামীর দুই পায়ে পাঁচটি, ডান হাতে একটি ও মাথায় একটি ধারালো অস্ত্রের কোপসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাতুরি পেটার চিহ্ন রয়েছে। গুরুতর জখম অবস্থায় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে তার চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
পুলিশের যোগসাজশে জুয়ার আসর পরিচালনার অভিযোগ প্রসঙ্গে তারাকান্দি পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) মুহাম্মদ তরিকুল ইসলাম জানান, জুয়ারিরা বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে জুয়ার আসর চালাতো। তারা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব করায় তাদের সনাক্ত করা যেতো না। জুয়ারিদের মধ্যে সংঘর্ষে তিনজনের নিখোঁজ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুইজনকে আটক করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শিবলী সাদিক বলেন, ‘জুয়ার আসর চালানো নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় নিখোঁজ তিনজনের সন্ধান পেতে পুলিশ কাজ করছে। আহত ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে ঘটনার সার্বিক তথ্য জানার চেষ্টা চলছে।’