ঝিনাইগাতীতে একটি সেতুর অভাবে চলাচলের দুর্ভোগে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ

প্রকাশিত: ৯:৪৭ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৩, ২০২১

ঝিনাইগাতী (শেরপুর) প্রতিনিধি : শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের হালচাটি এলাকায় কালঘোষা নদীর ওপর একটি মাত্র সেতুর অভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাজার হাজার মানুষের। গারো অধ্যুষিত এই পাহাড়ী জনপদে কালঘোষা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবী দীর্ঘদিনের।

স্থানীয় এলাকাবাসীদের অভিযোগ, শুকনো মৌসুমে নদীতে পানি কম থাকে। তখন কোনো রকমে চলাচল করা গেলেও বর্ষায় যোগাযোগ একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে এখানে সেতুর দাবি করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। সরেজমিনে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার হালচাটি গ্রামটি ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা একটি গ্রাম। গ্রামটির উত্তরে ভারতের ‘বারাঙ্গাপাড়া হালচাটি’ গ্রাম। ভারত থেকে এ গ্রামের মধ্যে দিয়ে নেমে এসেছে কালঘোষা নদী। শুকনো মৌসুমে এ নদীতে হাঁটুপানি থাকে। বর্ষা এলে কানায় কানায় ভরে ওঠে নদী। তখন বন্ধ হয়ে যায় হালচাটিসহ আশপাশের গ্রামবাসীর চলাচল। কালঘোষা নদী পার হয়ে ওই পথে প্রতিদিন হালচাটি, গান্ধিগাঁও, নওকুচি, গজনী গ্রামের হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। নদীর উত্তর পাশে ভারত সীমান্ত ঘেঁষে আদিবাসী কোচপল্লী। এ পল্লীতে শতাধিক কোচ সম্প্রদায় পরিবারের বসবাস। এখানে রয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গ্রামের কোমলমতি শিশু-কিশোরদের নদী পাড়ি দিয়েই স্কুল-কলেজে যেতে হয়। পানি বাড়লে স্কুল-কলেজে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। তাঁদের চলাচলের সড়কটিও দুপায়ের পাহাড়ি পথ। চলে না কোনো যানবাহন। এখানে সেতু না থাকায় এলাকাবাসীর পাশাপাশি বিজিবি টহল দল ও বন বিভাগের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়ে থাকে। হালচাটি গ্রামের কৃষক সুরেন্দ্র চন্দ্র কোচ বলেন, ‘শুকনো মৌসুমে কোনো রকমে চলাচল করা যায়। কিন্তু বর্ষাকালে সেতু না থাকায় আমরা কোথাও যাতায়াত করতে পারি না। এলাকার কেউ অসুস্থ হলেও তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া কঠিন হয়ে যায়। আমাদের এ দুর্ভোগ লাঘবে এখানে একটা সেতু দরকার।’ একই গ্রামের একজন নারী বলেন, ‘পুরুষ মানুষেরা যেভাবে নদী পার হইতে পারে। কিন্তু আমরা তো সেভাবে পারি না। একটা সেতু নির্মিত হলে এলাকাবাসীর ব্যাপক উপকার হবে।’ আগ্নেশ্বর কোচ নামের আরেকজন বলেন, ‘ভোটের সময় অনেকেই আশ্বাস দেন, সেতু করে দেবেন। কিন্তু ভোট শেষ হইলে তাঁদের আর খোঁজ থাকে না। আমরা কি সারা জীবন এভাবেই কষ্ট করব?’ স্থানীয় শিক্ষক ও সমাজসেবক যুগল কোচ বলেন, ‘গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে কাঁধে করে নিয়ে যেতে হয় প্রায় এক কিলোমিটার। এরপর সীমান্ত সড়ক হয়ে হাসপাতালে যেতে হয়। আমরা বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’ ঝিনাইগাতী উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নবেশ খকসী বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান উদ্যোগ নিলে ত্রাণের টাকা থেকে চলাচলের জন্য অন্তত ছোট একটি সাঁকো তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু সে বিষয়ে এলাকার চেয়ারম্যান কোন পদক্ষেপ নেয়নি। বিজিবি-৩৯ ব্যাটালিয়নের নকশি সীমান্ত ফাঁড়ির কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার উমর ফারুক বলেন, সেতুর অভাবে বিজিবির টহল দল সীমান্তে পৌঁছাতেও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তাই দ্রুত এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা দরকার।
এ ব্যাপারে স্থানীয় কাংশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জহুরুল হক বলেন, ওই পথে প্রশাসনের লোকজনসহ বিজিবির সদস্যরাও চলাচল করে। বর্ষা এলে চলাচলে খুব সমস্যা হয়। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ এলেই সেখানে সেতু নির্মাণ করা হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ মোজাম্মেল হক বলেন, বিষয়টি তাকে কেউ জানায়নি। যেহেতু এখন জানতে পারলাম সরেজমিনে গিয়ে জায়গাটি দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবো।