ধর্ষণ মামলায় পাবনা-২ এর সাবেক এমপি আরজু কারাগারে

প্রকাশিত: ৪:১২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩

ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা ও পাবনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু ওরফে ফারুককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ২২ ফেব্রুয়ারি বুধবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ এর বিচারক বেগম সামছুন্নাহার কারাগারে পাঠানোর এই নির্দেশ দেন। সকালে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করেন আরজু। একই সঙ্গে জামিনের আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল শুনানি শেষে জামিনের আবেদন না মঞ্জুর করে আরজুকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পি পি আলী আসগর স্বপন জানান, সাবেক সংসদ সদস্য আরজু ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করার পর তার জামিনের আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি আরজুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন একই ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।
গত বছরের ২২ এপ্রিল শিক্ষানবিশ এক আইনজীবী মামলা করেন। ট্রাইব্যুনাল বাদীর জবানবন্দি নিয়ে পিবিআইকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের আদেশ দেন। অভিযোগ তদন্তের পর ঢাকা মহানগর উত্তর পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম ট্রাইব্যুনালে গত ৫ জানুয়ারি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেন। উক্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ট্রাইব্যুনাল বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০০ সালের ডিসেম্বরে বাদীর প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এরপর তিনি একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে চাকরি করার সময় বাসায় প্রায় নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছিলেন। তখন তার আত্মীয়-স্বজনরা তাকে আবারও বিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেন। একপর্যায়ে ২০০১ সালের শেষের দিকে বাদীর চাচার মাধ্যমে আসামির (খন্দকার আজিজুল হক আরজু ওরফে ফারুক) সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে আসামি নিয়মিত বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন এবং একপর্যায়ে সফল হন। আসামি তাকে জানান, তাঁর প্রথম পক্ষের স্ত্রী মারা গেছেন। প্রথম পক্ষের ছেলেসন্তানের প্রতি বাদীকে দুর্বল করেন।
এতে আরও বলা হয়, সামাজিক নির্ভরতা ও একাকিত্বের অবসানসহ নতুন সংসার শুরু করার মাধ্যমে বাদী আসামিকে মনেপ্রাণে ভালোবেসে ফেলেন এবং বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হন। ২০০৩ সালের ১০ ডিসেম্বর আসামির সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারি তাদের একটি কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। সন্তান গর্ভে আসার পর আসামি বিভিন্ন ছলচাতুরীর মাধ্যমে বাচ্চা নষ্ট করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাদীর দৃঢ়তার জন্য তা করতে পারেনি। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর আসামির আচার-আচরণে পরিবর্তন আসে। বাসায় আসা কমিয়ে দেন। বাদীর নামে ফ্ল্যাট কিনে দেওয়ার কথা বললে তার বাবা ১০ লাখ টাকা এবং জমানো আট লাখ টাকা এবং ১৫ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার বিক্রি করে আসামিকে টাকা দিলেও তিনি কোনো ফ্ল্যাট কিনে দেননি এবং কোনো প্রকার টাকাও ফেরত দেননি।
একপর্যায়ে আসামি বাদীর বাসায় আসা বন্ধ করে দেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাঁর প্রথম পক্ষের স্ত্রী জীবিত। সে ঘরে কন্যাসন্তান আছে এবং স্ত্রীর সংসারে বসবাস করেন। আরও জানতে পারেন, বিবাদী এর আগে বাদীর কাছে নিজের নাম ফারুক হোসেন হিসেবে প্রচার করলেও প্রকৃতপক্ষে তার নাম খন্দকার আজিজুল হক আরজু। মিথ্যা তথ্য ও পরিচয় দিয়ে তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্যই বাদীকে বিয়ের নামে প্রতারণা করেছেন। এরপর আসামি কয়েকবার নিজে ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দ্বারা বাদীকে হত্যার উদ্দেশে আক্রমণ করেন। একপর্যায়ে আসামি বাদীর সঙ্গে বিয়ে, গর্ভপাত ও ঔরসজাত কন্যার পিতৃপরিচয় সরাসরি অস্বীকার করেন।
মামলার তদন্ত বেতন থেকে দেখা যায়, বাদীর কন্যাসন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করানো হয়। সেখানে কন্যাসন্তান বাদীর গর্ভজাত এবং বিবাদীর জন্মদাতা বাবা বলে প্রতীয়মান হয়।