ঝিনাইগাতীতে একযুগ ধরে শিকলবন্দি মেহনাজের জীবন, অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধ অনলাইন ডেস্ক অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩ আর আট দশজন কিশোরীর মতো কলেজ ক্যাম্পাস মাতিয়ে রাখার কথা ছিল মেহনানাজের। ক্লাসেও সবার প্রিয় ছিলেন, পড়াশোনাতেও ছিলেন বেশ মেধাবী। কিন্তু ভাগ্যের এক নির্মম পরিহাস। ৪র্থ শ্রেণি পাস করে ৫ম শ্রেণিতে ওঠার পর একদিন স্কুল থেকে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়ে মেহনাজ। তারপর আর সুস্থ হয়ে ওঠেনি কোমলমতি এ শিক্ষার্থী। ধীরে ধীরে অবস্থার অবনতি হতে থাকে, একসময় মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে যায় মেহনাজ। এই অবস্থার পেছনে আছে পরিবারটির আর্থিক অসচ্ছলতা, মানসিক রোগের উন্নত চিকিৎসা করতে না পারার আক্ষেপ। অর্থ সংকটে চিকিৎসার অভাবে এক যুগ ধরে শিকলবন্দি মেহনাজ। আর চিকিৎসকরা বলছেন, সিজোফ্রেনিয়া নামে রোগে আক্রান্ত মেহনাজ। দ্রুত উন্নত চিকিৎসা পেলে সেরে উঠতে পারে মেহনাজ, জানিয়েছেন চিকিৎসক। শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার ব্রিজপাড় গ্রামের মৃত নূর মোস্তফা ও মৃত হাওয়া বেগমের ছয় সন্তানের মধ্যে সবার ছোট মেহনাজ। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তাকে ভাঙা ঘরে বেঁধে রেখেছে পরিবার। সম্প্রতি মেজনাজদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তার আচরণ অস্বাভাবিক। সারাদিন সারাদিন একাই কথা বলে মেহনাজ। কেউ কাছে গেলে মারধর করে। শিকল খুলে দিলে বাড়ি থেকে বের হয়ে হারিয়ে যায়। এসব বিব্রতকর অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘ একযুগ ধরে শিকলে বেঁধে রেখেছে পরিবার। দীর্ঘদিন ধরে শিকল বেঁধে রাখায় পচন ধরেছে ডান পায়ে। এখন বাম পায়ে শিকল বেঁধে রাখা হয়েছে। অস্বাস্থ্যকর ভাঙা একটি ঝুপড়ি ঘরে তাকে রাখা হয়েছে। নিয়মিত খাবারও খায় না মেহনাজ। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর দরিদ্র বড়ভাই হাসান আর ভাবিই তার একমাত্র ভরসা। প্রতিদিন খাওয়া গোসল সবই করাতে হয় বড় ভাই হাসানকে। স্বচ্ছলতা না থাকায় দুই বছর ধরে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে আছে একুশ বছর বয়সী এ কিশোরীর। নৈশপ্রহরী ও চা দোকানি দুই ভাইয়ের পক্ষে চিকিৎসার ব্যয়ভার অসম্ভব। সরকার ও বিত্তবানরা এগিয়ে এলে সুস্থ হবেন মেহনাজ ফিরে পাবে স্বাভাবিক জীবন এমন আশা করছেন পরিবারসহ স্থানীয়রা। মেহনাজের বড় ভাই হাসান মিয়া বলেন, অসুস্থ হওয়ার পর শেরপুর টাউনে বিভিন্ন ডাক্তারের চিকিৎসা করিয়ে কোনো লাভ না হওয়ায় আর উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেনি তারা। পরবর্তীতে অবস্থার আরও অবনতি হলে পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করান। তাতেও মেলেনি কোনো প্রতিকার। হাসান আরও বলেন, আমি নৈশপ্রহরীর চাকরি করে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বেতন পাই। আমার বড় ভাই চা বিক্রি করেন। আমাদের পক্ষে বোনের চিকিৎসা খরচ বহন করা প্রায় অসম্ভব। সমাজসেবা থেকে কিছু সহযোগিতা পেয়ে মেহনাজকে ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে। মাসের পর মাস তার পেছনে বাড়তি খরচ করতে হয়। কোনোভাবে যদি বোনটার সুচিকিৎসা করাতে পারতাম, আমরা খুবই উপকৃত হব। বোনের এমন করুণ অবস্থা দেখে বুকটা আমার ফেঁটে যায়। এত কষ্ট আর সহ্য করতে পারি না। আমার বোনের চিকিৎসায় সবার সহযোগিতা চাই। মেহনাজের এমন অবস্থা দেখে খুবই কষ্ট হয়। যদি সরকার বা সমাজের বিত্তবান কেউ একটু চিকিৎসার জন্য সাহায্য করত, তবে মেয়েটি উন্নত চিকিৎসা হত। তাহলে হয়তো সে সুস্থ হয়ে উঠত। করজোড় অনুরোধ, মেহনাজের পাশে একটু দাঁড়ান’ বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন হাসানের স্ত্রী। প্রতিবেশী আ. মোমিন বিএসসি বলেন, শুরুর দিকে কিছুটা কম থাকলেও ধীরে ধীরে অসুস্থতা বাড়লে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন মেহনাজ। পরে তাকে শিকলে বেঁধে রাখে পরিবারটি। মেহনাজ কারণ ছাড়াই কখনও উত্তেজিত হয়ে চিৎকার-চেঁচামেঁচি করতে থাকে আবার একা একাই কথা বলেন। মা-বাবা হারা মেহনাজের পাশে বিত্তবানদের সহযোগিতা খুব প্রয়োজন। স্থানীয় বাসিন্দা সোহরাব আলী বলেন, আমরা প্রতিবেশীরা যেটুকু পারি সহযোগিতা করি। তবে দীর্ঘমেয়াদী পরিচর্যা আর চিকিৎসায় মেহনাজ সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারে। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভয়েজ অব ঝিনাগিাতীর সভাপতি ও সদর ইউপি সদস্য জাহিদুল হক মনির ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা এরইমধ্যে তার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা এলে তাদের পরিবারকে দেওয়ার চেষ্টা করি। নিয়মিত প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে মেহনাজের সুচিকিৎসা করানো সম্ভব। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক বাহাদুর শাহ মজুমদার বলেন, এটি একটি জটিল মানসিক রোগ। তবে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা পেলে এ রোগ সেরে ওঠে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাজীব সাহা বলেন, সিজোফ্রেনিয়া নামের এই রোগের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা একমাত্র মানসিক হাসপাতালেই সম্ভব। তাই মেহনাজকে দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে। আমাদের হাসপাতাল থেকে সমাজসেবার মাধ্যমে তাকে বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান করা হয়। তার চিকিৎসার জন্য মানসিক হাসপাতাল প্রয়োজন। সুচিকিৎসা ও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তার কিছুটা উন্নতি করা সম্ভব। তবে দ্রুত চিকিৎসা করাতে পারলে উন্নতির হার বেশি। Related posts:শেরপুরে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিতনালিতাবাড়ীতে আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপিতনালিতাবাড়ীতে অনুমোদনবিহীন ওষুধ কারখানায় উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে জরিমানা Post Views: ২০০ SHARES শেরপুর বিষয়: