চট্টগ্রামে সহিংসতা ও আইনজীবী হত্যাকাণ্ড, যৌথবাহিনীর অভিযানে আটক ৩০

প্রকাশিত: ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৭, ২০২৪

চট্টগ্রামে ইসকন নেতা ও সনাতন সম্মিলিত জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুরের পর আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও আইনজীবীকে হত্যার ঘটনায় ৩০ জনকে আটক করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতভর অভিযান চালিয়ে যৌথবাহিনী তাদের আটক করে।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) কাজী মো. তারেক আজিজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, যৌথবাহিনীর অভিযানে ৩০ জনকে আটক করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের যাচাই-বাছাই চলছে।
এডিসি বলেন, মঙ্গলবারের ঘটনায় দুটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় একটি, অন্যটি আইনজীবীকে হত্যার ঘটনায়। আটক ব্যক্তিদের যাচাই-বাছাই শেষে তাঁদের এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নগরীর পাথরঘাটা মাথার পট্টি, আন্দরকিল্লা, হাজারী গলি, ফিরিঙ্গি বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে যৌথবাহিনী তাঁদের আটক করেছে।
এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার প্রতিবাদে ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বুধবার সকাল থেকে নগরের নিউমার্কেট মোড় ও আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেছে ছাত্র-জনতা ও আইনজীবীরা।
এর আগে সোমবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
৩ ঘণ্টা সহিংস বাধার মুখে চিন্ময় দাসকে কারাগারে নিল পুলিশ, আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ-ভাঙচুর৩ ঘণ্টা সহিংস বাধার মুখে চিন্ময় দাসকে কারাগারে নিল পুলিশ, আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ-ভাঙচুর
মঙ্গলবার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে চট্টগ্রাম আদালতে তোলা হয়। এ সময় আদালত তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কারাগারে নেওয়ার সময় চিন্ময়ের সমর্থক একদল বিক্ষোভকারী প্রায় তিন ঘণ্টা তাঁর প্রিজন ভ্যান আটকে রাখে। পুলিশ সরাতে গেলে তাঁদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, এপিবিএন ও বিজিবি সদস্যরা লাঠিপেটা ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
বিকেল ৩টা নাগাদ ওই সংঘর্ষ চলাকালে আদালত এলাকার প্রবেশমুখে রঙ্গম টাওয়ার এলাকায় একদল দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রপক্ষের এক আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা করে। আইনজীবী নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়।
পরে আদালতে আইনজীবীরা বিক্ষোভ মিছিলের পাশাপাশি বুধবার কর্মবিরতির ডাক দেয়। ওই দিন সন্ধ্যায় তৌহিদী জনতার ব্যানারে নিউমার্কেট মোড়ে সাধারণ মানুষ জড়ো হয়ে ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন। বুধবারও এ বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
পুলিশ বলেছে, মঙ্গলবার ওই সংঘর্ষের ঘটনায় এক আইনজীবী নিহতের পাশাপাশি পুলিশের ১২ সদস্যসহ ১৮ জন আহত হয়েছে। যাঁদের সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চিন্ময়ের জামিন নামঞ্জুরের পর ওই শুনানির বিরুদ্ধে মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে পিটিশন দাখিল করে চিন্ময়ের আইনজীবীরা। আজ বুধবার দায়রা জজ আদালতে আবেদনের ওপর শুনানির কথা থাকলেও আইনজীবী সাইফুল হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে আদালত বর্জনের ডাক দেওয়ায় শুনানি নাও হতে পারে বলে জানান আইনজীবীরা।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় নিহত আইনজীবী সাইফুলের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর সকাল ১০টায় আদালত প্রাঙ্গণে তার প্রথম জানাজা হবে। পরে বেলা ১১টায় নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ মাঠে দ্বিতীয় এবং বাদ আসর গ্রামের বাড়ি লোহাগাড়ায় তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।