শুভ বড়দিন আজ অনলাইন ডেস্ক অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ৯:৫৭ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪ আজ ২৫ ডিসেম্বর, খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন (ক্রিসমাস)। আনন্দ-হাসি-গানে প্রাণ মিলবে প্রাণে। গির্জায় গির্জায় হবে প্রার্থনা। মানবতার কল্যাণে যিশুখ্রিষ্টের শান্তির বাণী ছড়িয়ে পড়বে। আলোকসজ্জা, ক্রিসমাস ট্রি আর সান্তাক্লজের উপহারে মেতে উঠবে শিশুরা। এ উৎসব ঘিরে রাজধানী ঢাকায় নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট আজকের দিনে বেথলেহেম শহরে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালনার জন্য তিনি জন্ম নিয়েছিলেন। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করবেন। এ উপলক্ষে অনেক খ্রিষ্টান পরিবারে কেক তৈরি হবে, থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন। ঈশ্বরের দূতের কথামতো শিশুটির নাম রাখা হয় যিশাস, বাংলায় ‘যিশু’। শিশুটি কোনো সাধারণ শিশু ছিল না। ঈশ্বর তাকে পাঠিয়েছিলেন মানবজাতির মুক্তির জন্য। সেই শিশু বড় হয়ে পাপের শৃঙ্খলে আবদ্ধ মানুষকে মুক্তির বাণী শোনান। বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হবে এ উৎসব। বড়দিন উপলক্ষে গির্জাগুলো সাজানো হয়েছে রঙিন বাতিতে। সকালে সেখানে বিশেষ প্রার্থনা দিয়ে দিন শুরু করবেন খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা। গির্জায় ধর্মীয় গান হবে। এ ছাড়া নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন যিশুভক্তরা। ঘরে ঘরে জ্বালানো হবে রঙিন বাতি, থাকবে সুসজ্জিত ক্রিসমাস ট্রি। যিশু গোয়ালঘরে জন্মেছিলেন বলে তার অনেক অনুসারীই ঘরে ঘরে প্রতীকী গোশালা তৈরি করেছেন। অনেকে বেড়াতে যাবেন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। বড়দিনের উৎসব ঘিরে আয়োজনে পিছিয়ে নেই ঢাকাসহ দেশের বড় শহরের অভিজাত হোটেলগুলো। রঙিন বাতি, ফুল আর প্রতীকী ক্রিসমাস ট্রিতে সাজানো হয়েছে বড়দিন। এ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা বিনিময়: বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের সঞ্চালনায় খ্রিষ্টান ধর্মের নেতাদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশের ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু আর্চ বিশপ বিজয় এন ডি ক্রুজ, দ্য ন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান ফেলোশিপ অব বাংলাদেশের সভাপতি বিশপ ফিলিপ পি অধিকারী, বাংলাদেশ ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, বাংলাদেশ ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ইগ্লাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া এবং বাংলাদেশ খ্রিষ্টান মহাজোটের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নির্মল ডি কস্তা। বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্ট্রান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টে আড়াই কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানান তারা। দেশব্যাপী চার্চগুলোয় এ অনুদান বণ্টন হয়েছে বলে জানানো হয়। বড়দিন উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টাকে বাইবেল উপহার দেন তারা। বড়দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা ধর্মীয় সংহতি চাই। সংখ্যালঘু, সংখ্যাগরিষ্ঠ এই শব্দগুলো চাই না। এদেশে আমরা সবাই এক পরিবার, সবাই মিলে একত্রে থাকব—এটা আমাদের স্বপ্ন। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবার এগিয়ে আসতে হবে। আমরা মানুষ একই। মানুষ পরিচয় আগে, তারপর ধর্ম। প্রত্যেক ধর্মে শান্তির বাণী আছে। সেই শান্তির বাণী নিজের মধ্যে স্থাপন করতে হবে। তাহলেই বিভেদ দূর হবে। নিজ নিজ ধর্মের শান্তির বাণী নিজের মনের মধ্যে স্থাপন করা গেলে অন্য ধর্মের মধ্যেও তা খুঁজে পাবেন। তখন আর অন্য ধর্মের সঙ্গে বিভেদ হবে না। আমাদের ছেলেমেয়েরা সুন্দর শৈশব পাবে। তারেক রহমানের শুভেচ্ছা: বড়দিন উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ ছাড়া এ উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তারেক রহমান বলেন, সত্যনিষ্ঠা, ন্যায়নীতি, শান্তি, করুণার দিশারী মহান যিশুখ্রিষ্টের এ দিনে পৃথিবীতে আগমন ঘটে। বিশ্বের খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের কাছে তাই এ দিনটি অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত। তিনি এসেছিলেন মানবিক বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে। বড়দিন একটি সার্বজনীন ধর্মীয় উৎসব। আর উৎসব মানুষের আনন্দময় সত্তার জাগরণ ঘটায়। উৎসবের মর্মস্থলে রয়েছে সম্প্রীতি, সহাবস্থান ও শুভেচ্ছা। তিনি আরও বলেন, মানুষ হিসেবে আমাদের কর্তব্য দেশ, সমাজ ও মানুষের কল্যাণে নিজ অবস্থান থেকে কাজ করা। অসুয়া, হিংসা ত্যাগ করে সমাজে শান্তি ও স্থিতি প্রতিষ্ঠা এবং সব ধরনের অবিচার-নির্মমতা প্রতিরোধে আমাদের সবার অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া জরুরি। মহামানবদের জীবন দর্শন যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারলেই মানবকল্যাণে নিজেদের সম্পৃক্ত করা সম্ভব। আর তাহলেই স্রষ্টার সন্তষ্টি অর্জনে আমরা সক্ষম হব। আমি বড়দিনের সব কর্মসূচির সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করি। পূজা পরিষদের শুভেচ্ছা: বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা। গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তারা বলেন, ৩৩ বছরের স্বল্পস্থায়ী জীবনে তিনি মানুষকে শুনিয়েছেন শান্তির বাণী, ভালোবাসার কথা। হিংসা-দ্বেষ, পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মানুষকে মুক্ত করাও ছিল তার প্রবর্তিত ধর্মের অন্যতম মূল কথা। তার শান্তির বাণী শাশ্বত, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার জন্য প্রযোজ্য। মানুষকে জয় করার হাতিয়ার ছিল তার সংযম ও সহিষ্ণুতা। বর্তমান যুদ্ধবিগ্রহ ও সংঘাতময় এ পৃথিবীতে যিশুর বাণী কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তারা বলেন, মানুষে মানুষে বিভেদ ও বৈষম্য অবসানে সব ধর্মের আদর্শকে ধারণ করেই আমাদের এগোতে হবে। কারণ, সব ধর্মেই কল্যাণের বাণী রয়েছে। আর এই বাণীর তাৎপর্য মেনে চললে এক শোষণহীন ধর্মনিরপেক্ষ সর্বজনীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা: বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিত্রয় ঊষাতন তালুকদার, অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক ও নির্মল রোজারিও এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ। গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে এ শুভেচ্ছা জানান তারা। ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানবিক মূল্যবোধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষায় সব ধর্মের মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানাদি পালনের সমান সুযোগ দেবে। তারা সরকারের কাছে খ্রিষ্টান ধর্মের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ইস্টার সানডে উপলক্ষে এক দিনের সরকারি ছুটির দাবি জানান। রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদার, আতশবাজি পটকা ও ফানুস ওড়ানো নিষিদ্ধ: বড়দিনের উৎসব ঘিরে রাজধানীতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম) মাসুদ করিম গতকাল মঙ্গলবার কাকরাইলে সেন্ট মেরি’স ক্যাথেড্রাল চার্চে বড়দিনের নিরাপত্তা মহড়া পরিদর্শন শেষে বলেছেন, নগরীর প্রতিটি চার্চে সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্মে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া এই উৎসব ঘিরে সোয়াট, বম্ব ডিসপোজাল টিমসহ স্পেশালাইজড ইউনিটগুলো দায়িত্ব পালন করবে। তিনি বলেন, বর্তমানে সেনাবাহিনী আমাদের সঙ্গে আছে। তারাও মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। সবার সহযোগিতায় অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে বড়দিন উদযাপন হবে। সুষ্ঠু ও নিরাপদে বড়দিন অনুষ্ঠানের জন্য আতশবাজি, পটকা ফুটানো এবং ফানুস উড়ানো নিষিদ্ধ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ডিএমপি। গতকাল মঙ্গলবার ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ২৪ ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে ২৫ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর এলাকায় সব ধরনের আতশবাজি, পটকা ফুটানো এবং ফানুস উড়ানো নিষিদ্ধ করা হলো। পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। সব ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক র্যাব সদস্য মোতায়েনের তথ্য জানিয়ে বাহিনীটির মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস জানিয়েছেন, দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। Related posts:পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মূল্যায়নও নিজ বিদ্যালয়েইঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক মারা গেছেনসিভিল সার্জনরা চাইলেই চিকিৎসাসেবার মান উন্নতি সম্ভব : প্রধান উপদেষ্টা Post Views: ৯৫ SHARES জাতীয় বিষয়: