একই ব্যক্তির তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ চায় বিএনপি

প্রকাশিত: ৭:৩২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২০, ২০২৫

প্রধানমন্ত্রী পদে টানা দুই মেয়াদের বেশি কেউ থাকতে পারবেন না, তবে একবার বিরতি দিয়ে আবারও দায়িত্ব পালন করতে পারবে—জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে এমন প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এই প্রস্তাবের বিস্তারিত তুলে ধরে বলেছেন, তাঁরা পরপর দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চান, তবে ভবিষ্যতে জনগণ চাইলে এবং দলের সিদ্ধান্তে একবার বিরতির পর একই ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ রাখতে চান। তিনি প্রশ্ন তোলেন, বারবার একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হবেন এমনটি ধরে নেওয়ার কারণ নেই, বরং তাঁরা একটি বিকল্প বা অপশন রাখতে আগ্রহী।

২০ এপ্রিল রবিবার বেলা ১১টায় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শুরু হয়। বেলা ২টার দিকে মধ্যাহ্নভোজের বিরতির সময় সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। এরপর আবারও কমিশনের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক শুরু হয়, যা এখনো চলছে।
কমিশনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব ছিল, একই ব্যক্তি সরকারপ্রধান, দলের প্রধান এবং সংসদ নেতা হতে পারবেন না। তবে বিএনপি এই প্রস্তাবে একমত নয় বলে জানিয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, তাঁরা এই বিষয়টি ‘উন্মুক্ত’ রাখার প্রস্তাব করেছেন। তিনি যুক্তি দেন, যুক্তরাজ্যসহ অনেক গণতান্ত্রিক দেশে পার্টিপ্রধানই সরকারপ্রধান হন এবং এটি একটি গণতান্ত্রিক চর্চা। তাঁর মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে এনে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জনগণ যাকে নির্বাচিত করবে, তাদেরই এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বলে মনে করতে হবে।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও উল্লেখ করেন, বিএনপি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা বা বহুত্ববাদের বিষয়টি নেই। তবে, কমিশন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচারের কথাগুলো যুক্ত করার যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে বিএনপি একমত হয়েছে।
ইন্টারনেট প্রাপ্তিকে জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানে যুক্ত করার বিষয়ে বিএনপি নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেছে বলেও জানান সালাহউদ্দিন আহমদ। তবে তিনি বলেন, ‘জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সক্ষমতার বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে। তাই সংবিধানের এমন অনেক বিষয় যুক্ত করা উচিত নয়, যা বাস্তবায়নের সক্ষমতা রাষ্ট্রের নেই।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে তাঁদের বেশ কিছু বিষয়ে বোঝাপড়া বা নৈকট্য তৈরি হয়েছে। তবে কিছু কিছু বিষয়ে তাঁদের দ্বিমত রয়েছে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, গণতন্ত্রে মত ও দ্বিমত থাকাই স্বাভাবিক। কারণ, তাঁরা ’বাকশাল’-এর মতো ব্যবস্থায় বিশ্বাস করেন না—যেখানে সবাইকে একমত হতে বাধ্য করা হয়।
নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, ‘দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে যা কিছু সংগত ও উত্তম, তেমনটাই হওয়া উচিত।’