বিপিএলের উইকেটে বিশ্বকাপের প্রেরণা অনলাইন ডেস্ক অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ৮:৫৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৯ অনলাইন ডেস্ক : ‘এত কাছে আছো তুমি তবু দূরে মনে হয় আরও কাছে এসে তুমি ছুঁয়ে দাও এই হৃদয়!’ রোমান্টিক এই বাংলা গানের প্রথম চরণের মতো ঘরের মাঠের ‘উইকেট’ বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কাছে বরাবর ‘দুরের’ মনে হতো। নিজেদের চিরচেনা ‘বাইশগজ’ নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে থাকতেন টাইগাররা। মনের মতো উইকেট পাচ্ছেন না বলে বরাবরই অসন্তুষ্টি থাকতো স্থানীয় খেলোয়াড়দের। বিপিএলেও ছিল সেই না পাওয়া। গানের দ্বিতীয় লাইনের মতো উইকেট নিয়ে ‘মধুর আকুতি’ ছিল ক্রিকেটারদের। তবে বঙ্গবন্ধু বিপিএলে যেন সেই আক্ষেপ কিংবা অসন্তুষ্টি ঘুচতে শুরু করেছে। এবার মনের মতো উইকেট পেয়েছেন ক্রিকেটাররা। এবারের টুর্নামেন্টের উইকেট যেন খেলোয়াড়দের হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছে। বাইশগজ নিয়ে ঢাকা প্লাটুনের অধিনায়ক মাশরাফির মূল্যায়ন, ‘উইকেট ভালো হচ্ছে এই বিপিএলে। উইকেটের কারণে খেলা ভালো হচ্ছে। বাংলাদেশ যখন আন্তর্জাতিক টি-২০ খেলতে কোথাও যাবে, তখন এমন উইকেটই পাবে। বোলারদের জন্য এটা চ্যালেঞ্জ থাকবে। ব্যাটসম্যানদেরও আত্মবিশ্বাস বাড়বে। যদি হাত খুলে খেলা যায়। আইপিএলে বা আন্তজার্তিক টি-২০ টুর্নামেন্টে সাধারণত এমন উইকেট বানানো হয়।’ বাংলাদেশের ওয়ানডে নেতার মতো উইকেট নিয়ে প্রায় একই রকম প্রতিক্রিয়া দেশের টি-২০ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদেরও, ‘আমরা ঢাকায় যে উইকেটে খেললাম, এখানে যে উইকেটে খেললাম, খুবই আন্তর্জাতিক মানের। বিশেষ করে বোলারদের জন্য যথেষ্ট সহায়তা ছিল। ব্যাটসম্যানদের জন্য অবশ্যই ভালো উইকেট।’ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে নেতৃত্ব দেয়া মাহমুদউল্লাহ বলছিলেন, ‘কিন্তু আমার মনে হয় বোলারদের জন্য ভালো সুযোগ ছিল। এ ধরনের উইকেটে আপনি যখন খেলবেন, ব্যাটসম্যান হিসেবে আপনার দক্ষতা অবশ্যই ভালো হতে হবে। আর বোলারদের নৈপুণ্যও আরও ভালো হতে হবে বলে আমার মনে হয়।’ ক্রিকেটে ভারত এখন সুপারস্টার এক দল। টি-২০তেও যে তারা সেরা তাও বলার অপেক্ষা রাখে না। ব্যাটিংয়ে ভারত অনেক আগে থেকেই বিশ্বসেরা। তবে এখন তাদের বোলিং আক্রমণও ভয়ঙ্কর। বিশেষ করে পেসাররা দুর্দান্ত বল করছেন। এর পেছনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। আইপিএলে উইকেট স্পোর্টিং হয়। সাধারণত টি-২০ বিশ্বকাপেও একই রকমে উইকেটে খেলা হয়। এতে আইপিএল থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাসটা খুবই কাজে লাগে ভারতীয় বোলারদের। এবারের বিপিএলে স্পোর্টিং করায় এখান থেকে বাংলাদেশের বোলার বাড়তি আত্মবিশ্বাস পাবেন মনে করেন মাশরাফি। স্পোর্টিং উইকেটে ব্যাটসম্যানরা যতটা সুবিধা পান, ততটা পান না বোলাররা। কিন্তু এমন উইকেটে বল করতে হয় মাথা খাঁটিয়ে। বল করার আগে একজন বোলারকে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে যেন রীতিমতো গবেষণা করতে হয়। কারণ, একটু এদিক সেদিক হলে বেদম প্রহারের মুখোমুখি হতে হবে! স্পিনার হোক বা পেসার- সব বোলারের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য। যেমন আগের দিনের ম্যাচে চ্যালেঞ্জার্সের তরুণ পেসার মেহেদী হাসানের রানবন্যার মাঝে ৬ ওভারে মাত্র ২৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে হয়েছেন ম্যাচ সেরা। অন্যদিকে একই দলের স্পিনার নাসির হোসেন ৪ ওভারে ৬০ রান দিয়ে বিপিএলের ইতিহাসে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ রান খরচের লজ্জার রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন। ঢাকা-চট্টগ্রামের ম্যাচে মোট রান হয়েছে ৪২৬। বঙ্গবন্ধু বিপিএলের এক ম্যাচে সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড। উইকেট কতটা ব্যাটিংবান্ধব তা আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই তাই। মজার বিষয় হচ্ছে, এমন উইকেটেও ক্যারিশমা দেখিয়ে টানা দুই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন মেহেদি। আগের দিনের শিকার ছিল ৪ উইকেট। জিতিয়েছিলেন দলকে। এখানেই পরিস্কার, উইকেট যেমনই হোক মাথা খাঁটিয়ে বল করলে সাফল্য আসবেই। স্পোর্টিং উইকেট না বানিয়ে শুধু বোলিংবান্ধব উইকেট তৈরি করলে বোলাররা বেশি সুবিধা পান বটে কিন্তু তাতে তাদের শক্তিমত্বার সত্যিকারের পরিচয় পাওয়া যায় না। বিদেশে খেলতে গেলে তখন বিপদে পড়তে হয়। গত ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে বিষয়টি মর্মে মর্মে অনুধাবন করতে পেরেছে বাংলাদেশ দল। এসব কারণে চলমান বিপিএলের স্পোর্টিং উইকেট মনে ধরেছে মাশরাফির। নড়াইল এক্সপ্রেস বলেন, ‘এসব উইকেটে বল করলে বোঝা যাবে যে শক্তির দিক আরও বাড়াতে হবে। এবার যে উইকেটগুলো পাচ্ছে খুব ভালো যে ওরা সামনের বিশ্বকাপের আগে নিজেদের সুযোগ তৈরি করতে পারবে।’ এমন উইকেট তৈরির কারণে দেশের বাইরের টি-২০ উইকেটের সঙ্গে পার্থক্য থাকবে না। টাইগাররা দেশের উইকেটেই পাবে বিদেশে খেলার উদ্দীপনা। বাইশগজ থেকে পাওয়া এই বাড়তি প্রেরণাই হয়তো ২০২০ অস্ট্রেলিয়া টি-২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে নতুন করে উজ্জীবিত করবে। Related posts:বিশ্বকাপের ড্র: দেখে নিন কোন গ্রুপে কোন দলদুই দফায় পাকিস্তানে খেলতে যাবে বাংলাদেশওয়ানডে টি-টোয়েন্টি না খেলেই ফেরত আসছেন মুশফিক Post Views: ২০৯ SHARES খেলাধুলা বিষয়: