সেই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়েই বাকিটা সময় থাকতে চান ইসলাম

প্রকাশিত: ১২:৩৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩১, ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রথম জীবনে অস্বীকার করা স্ত্রী মালা বেগমকে নিয়ে জীবনের বাকিটা সময় অতিবাহিত করতে চান বলে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগকে জানিয়েছেন আলোচিত ঝিনাইদহের ইসলাম।

কারাগার থেকে গত ৯ আগস্ট মুক্তি পেয়ে বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে বিচারপতিদের কাছে এসব কথা জানান ইসলাম। আদালতে তার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

এ সময় বিচারিক আদালত, হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বাতিল করার বিষয়টি বিবেচনার জন্য বলা হলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল আদালত ইসলামের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমরা ইসলাম ও মালার জীবনের বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনা করে সেটা দেখব।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগে মালা বেগম ও ইসলাম উপস্থিত হন। আদালত মালা ও ইসলামের কাছে জানতে চান- এখন কোনো সমস্যা আছে কি না?

জবাবে মালা বেগম বলেন, কোনো সমস্যা নেই। আমি আমার স্বামীকে নিয়ে ভালো আছি। এরপর ইসলাম বলেন, আমি আমার স্ত্রী ও ছেলে মিলনকে নিয়েই বাকি জীবন কাটাব।

এরপর আইনজীবী ইসলামের সাজা বাতিল করার আবেদন জানান। এ সময় আদালত বলেন, নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে আপিল বিভাগ পর্যন্ত ইসলামের যাবজ্জীবন সাজা বহাল রয়েছে। তাই এখনই আমরা সাজা বাতিল করতে পারি না। এখানে আইনি ও বিচারিক বিষয় রয়েছে। তবে কোন যুক্তিতে ইসলামের সাজা বাতিল করা যেতে পারে সেটা আপনি (আইনজীবী) লিখিত আকারে আবেদন করুন। আমরা ইসলাম ও মালার জীবনের বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনা করে সেটা দেখব।

জানা যায়, ঝিনাইদহের লক্ষ্মীপুর গ্রামের আজিজ মৃধার ছেলে ইসলামের সঙ্গে একই গ্রামের কাশেম আলীল মেয়ে মালা বেগমের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। দুই পরিবারের অজান্তে ২০০০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি দুজন বিয়ে করেন। এরপর লোকচক্ষুর অন্তরালে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করতে থাকেন। এরই মধ্যে মালা বেগম গর্ভবতী হয়ে পড়েন। ২০০১ সালের ২১ জানুয়ারি জন্ম হয় তাদের সন্তান মিলনের।

এ অবস্থায় মালা বেগমের পরিবার ও স্থানীয়রা বিয়ের জন্য চাপ দিলেও ইসলাম বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। একই সঙ্গে মালার সন্তান তার নয় বলে দাবি করেন। এ অবস্থায় মালার পরিবার আইনের আশ্রয় নেন। ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করা হয়। এই মামলা চলাকালে মিলনের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। তাতে ইসলামের সঙ্গে তার রক্ত মিলে যায়।

এ মামলায় আদালত ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এই সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করলেও হাইকোর্ট সাজা বহাল রাখেন। এরপর আপিল বিভাগে আপিল করেন ইসলাম। তাতেও লাভ হয়নি। তার সাজা বহাল থাকে। এই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য রিভিউ আবেদন করেন তিনি। এই রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানির সময় আইনজীবীর মধ্যস্থতায় ইসলাম মালাকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে রাজি হন।

সেই সঙ্গে মিলনকে নিজের ছেলে হিসেবেও মেনে নেন। এ অবস্থায় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ঘটা করে বিয়ে হয় মালা-ইসলামের। সেখানে ছেলে মিলনও উপস্থিত ছিলেন। এরপর গত ৯ আগস্ট কারাগার থেকে মুক্তি পান ইসলাম। সেই থেকে তারা একসঙ্গেই আছেন।